বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বরেন্দ্র এলাকা নিয়ে বিশেষ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এর মধ্যে পাতকুয়া একটি।
পাতকুয়া হলো ভূ-গর্ভস্ত পানির স্তরের নিম্ন পর্যন্ত গোলাকার আকৃতিতে মাটি খনন কারে চারপাশ থেকে চুয়ানো পানি ধরে রাখার আধার। এই এলাকায় প্রচুর খাড়ী (খাল) এবং পুকুর ছিল কিন্তু বর্তমানে এগুলি বেশিরভাগ মাছ চাষে লিজ দেয়া হয়েছে। এর কারণে সেখান হতে পানি নিয়ে সেচ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া ফারাক্কা বাঁধের জন্য নদীর পানি শুকিয়ে সেচ কাজে বিঘ্ন হচ্ছে। তাই গভীর নলকুপ বসিয়ে অনেক এলাকা চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু অধিক পানি উত্তোলনের ফলে এই এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর মাধ্যমে পাতকুয়া খনন করা শুরু হয়েছে এবং উক্ত পাতকুয়া হতে জনসাধারণ খাবার পানি ব্যবহারের পাশাপাশি সেচকাজে ব্যবহার করার সূফল ভোগ করছে। এটি খনন আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের পরিবর্তে যান্ত্রিক পাওয়ার রিগ, দৈহিক শক্তির পরিবর্তে সোলার শক্তি ব্যবহার করে পানি উত্তোলন, ফ্যানেল আকৃতির কাঠামোতে বৃষ্টির পানি ধরে তা পাতকুয়ায় নির্গমন করে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের মজুদ বৃদ্ধিসহ পাতকুয়াকে খাবার পানির পাশাপাশি সেচ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রচুর ফল বাগান তৈরি হচ্ছে এর মধ্যে প্রধান প্রধান হচ্ছে আম, লিচু, কলা, কুল, পেয়ারা উল্লেখযোগ্য। তবে কয়েক বছর ধরে স্ট্রবেরির চাষ এ অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবজি চাষে ইতোমধ্যে এ অঞ্চল অনেক অগগ্রতি লাভ করেছে। এর মধ্যে আগাম সিম, লাউ, চাল কুমড়া, মিস্টি কুমড়া, বেগুন, পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, আলু, করলা, শসা উল্লেখযোগ্য।
অতি সাম্প্রতি বরেন্দ্র অঞ্চলের গোদাগাড়ী উপজেলায় লতিরাজ কচু, মাচায় তরমুজ চাষ, ফুল চাষ শুরু হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় পলিব্যাগ দ্বারা পেয়ারা উৎপাদন, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন, মাল্টা, ড্রাগনফল, মুগ ডাল ব্যাপক ভাবে আবাদ শুরু হয়েছে। আর এ কারণে এই অঞ্চলে পানির ঘাটতি হলে তা সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যেহেতু পাতকুয়ার পানি উত্তোলন কাজে বিদ্যুৎ শক্তির পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব সৌরশক্তি ব্যবহার হয় সেহেতু এটি পরিবেশ বান্ধব এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে সহায়ক। এ কারণে পাতকুয়ার মতো প্রযুক্তি এখন সময়ের দাবি।
লেখক: মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি, আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪.কম/এম