বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতির বেশিরভাগ আমদানিনির্ভর

1142

কৃষি যন্ত্রপাতি

বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের বাৎসরিক বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। দেশে কৃষিকাজে যেসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে তার বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ফলে প্রতিবছর বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশিদের দিতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ১১ হাজার কোটি টাকার প্রায় পুরো মার্কেটটাই বিদেশিদের দখলে। যন্ত্রপাতি আমদানি বাবদ এতো বড় অঙ্কের টাকা চলে যাওয়ার কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে।

সরকার দেশেই এসব কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। তাদের শিল্পাঞ্চলে জমি প্রদান ছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত শিল্প উদ্যাক্তাদের কাছ থেকে তেমন সাড়া মিলছে না। সরকার চাচ্ছে কৃষিযন্ত্র তৈরির ভারী শিল্প বাংলাদেশে গড়ে উঠলে দেশে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে বর্তমানে ৯৫ ভাগ জমি চাষ হচ্ছে। বালাইনাশক ব্যবহারে ৯০ ভাগ, ফসল মাড়াইয়ে ৭৫ ভাগ যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ যে সব যন্ত্রপাতির দাম কম সে সব যন্ত্রেরও ব্যবহার বেশি। এ দিকে সার প্রয়োগে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে ৩ ভাগ, চারা রোপন ১ ভাগ, ফসল কাটা ১ ভাগ, এগুলোর বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার্য এমন যন্ত্রপাতি যেমন জমি চাষ ও কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টরের শতকরা ৯৫ ভাগ, ফসল কাটার যন্ত্র- রিপার ৯৯ ভাগ, চারা রোপন যন্ত্র ১০০ ভাগ, কম্বাইন হারভেস্টার ১০০ ভাগ ও বীজবপন যন্ত্র ৭০ ভাগ আমদানি করতে হয়। শুধু মাড়াই কাজে ব্যবহার যন্ত্র থ্রেসার মেশিন ১০০ ভাগ দেশে তৈরি হয়।

কৃষি যন্ত্রপাতির আমদানির হার কমানোর জন্য বর্তমান সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের সহযোগিতায় ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, ঝাড়াই যন্ত্র (ইউনার), নিড়ানির যন্ত্র (উইডার) ধান ও গম মাড়াই কল, ভুট্টা মাড়াই কল ইত্যাদি যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু হয়েছে। বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর ও শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সেচ পাম্প ও পাওয়ার টিলারের খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরির বেশ কিছু কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। উদ্যোক্তাদেও জন্য এ ক্ষেত্রে মার্কেট ধরার একটি সুযোগ রয়েছে। কারণ দেশে কৃষি যন্ত্রপাতির বাৎসরিক বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এখানে খুচরা যন্ত্রাংশের বাজারও রয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার।

দেশের কৃষকরা যাতে ভালোভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভালো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশীয় উৎপাদন বা শিল্প বিকাশে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুলভ মূল্যে কৃষকের কাছে দেশে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতি পৌঁছে দিতে সরকার বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে খুচরা কৃষি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক হার ৬৩ ভাগ থেকে কমিয়ে ১ ভাগ নির্ধারণ করেছে। এর ফলে কৃষক কম মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে পারবেন।

যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, এসিআই, দি মেটাল (প্রা.) লিমিটেড, চিটাগাং বিল্ডার্স অ্যান্ড মেশিনারিজ লিমিটেড, আরএফএল, জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নবতি ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, হক কর্পোরেশন, নিউ বর্ষা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।

যেসব আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে আমদানি করা হয় তার মধ্যে রয়েছে, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রাইচ রিপার, কম্বাইন হারভেস্টার, মাড়াইকল, আলু উত্তোলন যন্ত্র, ভুট্টা মাড়াইকল, ওয়াটার পাম্প, ট্রাক্টর, ট্রান্সপ্লানার, বিভিন্ন সাইজের ট্রলি, পাওয়ার জুট রিবনার, সিডার, বেড প্লান্টার, প্যাডেল থ্রেসার, পাওয়ার স্পেয়ার, আদ্রতা মাপক যন্ত্র ও ধান শুকানোর যন্ত্র ছাড়াও আরও অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের বাৎসরিক বাজার এখন ১১ হাজার হলেও এ বাজার এক সময় ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার পুরোপুরি শুরু হলে যন্ত্রপাতির মর্কেট অনেক বড় হবে। দেশেই এসব যন্ত্রপাতি তৈরি করা গেলে দেশ ও দেশের মানুষ লাভবান হবে, সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা। আর বর্তমান সরকার সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। বিদেশ থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি বন্ধ করতে সরকারও উদ্যোগ নিচ্ছে।সূত্র: জেএন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন