প্রশ্ন হলো, ইন্দোনেশিয়া – ভিয়েতনামে এত মাছ চাষ করছে, আমরা তাদের প্রবায়োটিকস ব্যবহার করেও পারছিনা কেন?
উত্তর : আমরা যে পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া কালচার করি তা পরিপূর্ণ ভাবে যথেষ্ট নয়।
যে পদ্ধতি এ্যাপলাই করলে উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো সঠিকভাবে প্রতিপালিত হবে এবং সুষম ভাবে বংশ বিস্তার করতে পারবে, সে পদ্ধতিতেই তা কালচার করতে হবে।
ফ্লক গুলো যেন শুধু প্রোটিনের উৎসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। হেটেরোট্রপিক ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতিতে শুধু মাত্র C:N ratio মেইনটেইন করলেই ফ্লক বা প্রোটিন সেল তৈরি করা সম্ভব।
কিন্তু শুধুমাত্র প্রোটিন দ্বারা মাছের সুষম গ্রোথ সম্পন্ন হয়না। মাছের সুষম বৃদ্ধি এবং যাবতীয় রোগ হতে মুক্তির জন্য দরকার খাদের ৬ টি উপাদানের সুষম প্রোয়োগ। পাশাপাশি সুষম গ্রোথ প্রোমটের জন্য বিভিন্ন হরমন ও এনজাইম, যা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রোবায়োটিক গুলো যোগান দিয়ে থাকে।
মোট কথা হলো, এমন কিছু উপাদানের সমন্বয়ে ব্যাকটেরিয়া কালচার করতে হবে যেন ফিশ ট্যাংকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, সব রকমের মিনারেল ও ভিটামিন এবং প্রয়োজনীয় হরমোন ও এনজাইম সব সময় মৌজুদ থাকে।
প্রোবায়োটিক হচ্ছে সেনাবাহিনীর মত। এরা ট্যাংকির সুষম পরিবেশ বজায় রাখার জন্য একেক প্রজাতি একেক দায়িত্বে নিয়োজিত।
কাজেই যত বেশি প্রজাতির প্রোবায়োটিক তৈরি হবে, তত বেশিই দায়িত্ব পালন বা কাজ আনজাম হবে।
প্রোবায়োটিক গুলো সাধারণত দু’ভাবে বংশ বৃদ্ধি করে। এয়ারেবিক ও আনএয়ারেবিক উভয় পদ্ধতিতে এরা নিজেদের বিস্তার ঘটিয়ে থাকে।
সেজন্য দু’ভাবেই এদের কালচার করা দরকার হয়।
যেহেতু খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে এদের কাজ কারবার, তাই এদের কালচারে এমন সব উপাদান ব্যবহার করতে হবে, যা খাদ্যের সুষম উপাদান ও প্রোবায়োটিকের উৎস।
এখন ধারাবাহিক ভাবে সেসব উপাদানের বর্ণনা করছি।
১. চিনি: এটা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য উপাদান।
এর দ্বারা কার্বন সোর্স, শর্করা ও ক্যালোরি উৎপাদন হয়।
২. কলা: এটা বিভিন্ন ধরনের মিনারেল, যেমন পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগ্নেশিয়াম, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি যোগান দিয়ে থাকে। এতে ভিটামিন এ, বি, সি,ডি বিদ্যমানআছে। এছাড়া কলায় রয়েছে এক ধরনের প্রোবায়োটিক যা মাছের দেহে ক্যালসিয়াম সংশ্লেষণ ও অলিগোস্যাকারাইজড হজমে সহায়তা করে।
৩. আনারস : এর মধ্যে এমন কিছু প্রোবায়োটিক রয়েছে, যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করে, মাছের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
৪. ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি : এগুলো মাছের স্কিন ডিজিজ দুর করে, খাদ্যের আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং দৈহিক ও মানুসিক দুর্বলতা দুর করে।
৫. ইয়াকুল্ট : এক জাতীয় পানীয়, যাতে Lacto bacillus ( L. Case) জাতীয় প্রোবায়োটিক রয়েছে। আতপ চাউলের পানি দিয়ে যে প্রোবায়োটিক ঘরোয়া ভাবে তৈরি করা হয়, এটা সে ধরনের। ইয়াকুল্ট আামাদের দেশে সচারাচর না থাকায়, আমরা টকদই দিয়ে কারচার করতে পারি।
কারন টকদই Lacto bacillus এর বিরাট উৎস।
টকদই পরিপাক তন্ত্রের উপকার সহ ৬ টি বিষয়ে উপকার করে থাকে।
৬. ইষ্ট ট্যাবলেট ও ইস্ট পাউডার : এগুলো FCO পদ্ধতিকে সহজ করে তোলে। ইস্টের ফার্মেন্টেশন ক্ষমতা রয়েছে খুব বেশি। তাছাড়া ইষ্ট হলো – প্রোবায়োটিকের একটা ( ফাংগাল) অংশ।
৭. ডিম: এটা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং সালফার সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। এটা ব্যাকটেরিয়ার
ব্রুডিং – এও যথেষ্ট দরকারী।
৮. মোলাসেস বা চিটাগুড় : এটা ব্যাকটেরিয়ার কার্বন সোর্স – এর উৎস এবং ফার্মেন্টেশনে সহযোগী একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্বোহাইড্রেট।
৯. প্রোবায়োটিক পাউডার : বায়োফ্লকের প্রাণ, যা দিয়ে পুরো সিস্টেমটাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তা হলো প্রোবায়োটিক পাউডার। এটা দু’ধরনের হয়ে থাকে।
যথা- হেটেরোট্রফিক ব্যাকটেরিয়া ও নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া। এগুলো কয়েক ধাপে এমোনিয়াকে ফ্লকে পরিনত করে মাছের প্রোটিন চাহিদা অনেকাংশেই পুরণ করে থাকে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৩সেপ্টেম্বর২০