বিলুপ্তপ্রায় পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধির কৌশল

605

পাবদা-মাছের-পনা
বিলুপ্তপ্রায় পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধির কৌশল আমাদের অনেকেরই জানা নেই। পাবদা আমাদের দেশে একটি সুস্বাদু ও বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ। তবে যুগের বিবর্তনে এই মাছটি এখন প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তবে এই মাছকে আমাদের রক্ষা করতে হলে যেকোনো উপায়ে এর বংশবৃদ্ধি করাতে হবে। তবেই এই মাছকে আমাদের মধ্যে দৃশ্যমান রাখা যাবে। চলুন তাহলে আজকে জেনে নেই বিলুপ্তপ্রায় পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধির কৌশল সম্পর্কে-

বিলুপ্তপ্রায় পাবদা মাছের বংশবৃদ্ধির কৌশলঃ
ব্রুড প্রতিপালন:

পাবদা মাছের প্রজনন শুরু হওয়ার ৪ থেকে ৫ মাস পূর্বে থেকেই ব্রুড মাছকে অতি যত্নের সাথে পালন করতে হবে। এই সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মাছগুলো কোনভাবেই আঘাত না পায়। এই সময় মাছকে খাদ্য হিসেবে দিতে হবে গমের ভূষি, সয়াবিন মিল, চালের কুঁড়া, ফিসমিল, আটা ও বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনের প্রিমিক্সের মিশ্রণ। তবে এক্ষেত্রে মাছের শরীরের ওজনের ৫ থেকে ৮ ভাগ খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। আর পাবদার ব্রুড মাছের ডিম্বাশয়ের পরিপক্কতার জন্য ভিটামিন “ই” জাতীয় খাদ্য প্রদান করতে হবে।

মাছ বাছাইকরণঃ

পাবদা মাছের ব্রুড বাছাইয়ের জন্য অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন স্ত্রী মাছের চেয়ে পুরুষ মাছটি তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। পাবদা মাছের প্রজননের সময় হলে পুরুষ মাছের পেট চাপানো থাকে এবং পুরুষ পাবদা মাছের বুকের পাখান খাঁজকাটা থাকে। আবার স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে মাছের প্রজননের সময় পেট অনেক ফোলা থাকে ও নরম হয়ে থাকে। আর স্ত্রী মাছের বুকের পাখনায় তেমন খাঁজকাটা থাকে না বললেই চলে।

টেকসইকরণঃ

পাবদা মাছের ব্রুডকে ইনজেকশন প্রদানের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আগেই মাছ ধরে রাখতে হবে তারপর সেগুলোকে হাপাতে স্থানান্তর করাতে হবে। এই সময়ে মাছকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তার জন্য মাছকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপের সাহায্যে ওপর থেকে অনবরত পানির ফোয়ারা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

ইনজেকশন প্রদান:

পাবদা মাছকে ইনজেকশন প্রদানের সময় ভেজা কাপড় দিয়ে মাছের মাথা জড়িয়ে পৃষ্ঠপাখনার নিচে ৪৫ কোণে ইনজেকশন প্রদান করতে হবে। মাছকে ইনজেকশন প্রদানের ৯ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে মাছের হাপাতে প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়বে ও পুরুষ মাছ শুক্রাণু ছেড়ে সেই ডিমগুলোকে নিষিক্ত করবে।

নিশিক্ত ডিমের স্থান পরিবর্তনঃ

মাছ ডিম ছাড়লে খুব দ্রুত এই মাছগুলোকে সাবধানে হাপা থেকে আলাদা করে ডিমগুলো ট্রেতে নিয়ে নিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পুকুরে পানির তাপমাত্রা ও ট্রের পানির তাপমাত্রা যেন পার্থক্য না হয়।

রেনু পোনাকে খাদ্য প্রদানঃ

ডিম ফুটে বের হওয়ার ২১ থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই মাছের রেনুগুলোকে প্রাথমিকভাবে খাদ্য প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে টিউবিফিসিড ওয়ার্ম ছোট বাটিতে নিয়ে কুচি করে কেটে নিয়ে মাছের রেনুকে দিতে হবে।

পোনার পরিচর্যা:

উৎপন্ন হওয়া মাছের রেনুর চাহিদা অনুযায়ী দিনে ২ থেকে ৩ বার করে খাদ্য প্রদান করতে হবে। আর এইভাবে ৬ থেকে ৮ দিন রাখার পর মাছের পোনাগুলোকে সিস্টার্নে স্থানান্তর করে দিতে হবে। আরও এই সিস্টার্নে মাছগুলোকে ১০ থেকে ১৫ দিন পালন করার পর পোনাগুলোকে নার্সারি পুকুরে মজুদ করতে হবে।

নার্সারি পুকুরে পালনঃ

পাবদা মাছ পুকুরে পালনের জন্য পুকুরের আয়তন হতে হবে ৩ থেকে ৬ শতক। পুকুরকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করার পর প্রতি শতকে ৩০০ থেকে ৪০০টি মাছের পোনা ছাড়া যায়। তবে পাবদা মাছের পোনাগুলোকে সকাল বা সন্ধ্যার আগে ছাড়তে হবে। পুকুরে এই মাছের পোনা ছাড়ার পর পোনার ওজনের ১০ থেকে ২০ ভাগ সম্পূরক খাদ্য প্রদান করতে হবে। এর কিছুদিন পর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২২মার্চ২০