বর্তমানে পোলট্রি শিল্প বেশ জমজমাট। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের কেন্দ্রস্থল কোথাও এর সমাদরের কমতি নেই। এমনকি বড় বড় অট্টালিকার ছাদেও গড়ে ওঠেছে জীবন্ত এ শিল্প; যা থেকে পূরণ হচ্ছে দেশের পুষ্টি, বিশেষ করে আমিষের চাহিদা। পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বেকারত্বের এক বিরাট অংশ। আর এ লক্ষ-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য খামারে চাই সুস্থ এবং উৎপাদনশীল মুরগি । তাই বেশি ডিম দেয়া মুরগি চেনা, এর আচরণ ও অন্য লক্ষণগুলো সর্ম্পকে জানা খুবই জরুরি। মুরগির দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং এর আচরণের ওপর শরীরের অবস্থা উপলব্দি করা যায়। সে কারণে বেশি ডিম দেয়া মুুুরগি কীভাবে চেনা যায় তা একেক করে এবার জেনে নেয়া যাক-
মাথার অংশ: বেশি ডিম দেয়া মুরগির মাথা হবে ছোট, হালকা এবং মাংশল অংশ থাকবে কম। মাথার ঝুঁটি ও গলার ফুল হবে উজ্জ্বল লাল রঙ কিংবা গোলাপি বর্ণের । তবে এগুলো অবশ্য নরম, সুগঠিত ও প্রস্ফুটিত হবে।
চোখ, নাক ও মুখ: পাখির চোখের বর্ণ হবে উজ্জ¦ল। চোখ সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। নাক ও মুখ থাকবে শ্লেষ্মাহীন পরিষ্কার। নাক দিয়ে সর্দিঝরা কিংবা গলার ভেতর ঘড়ঘড় শব্দ হবে না ।
দেহ বা শরীর: মুরগির দেহ সুগঠিত হবে। পরিমাণমতো খাদ্য ও পানি পান করবে, যে কারণে খাদ্যথলিতে খাবারে ভর্তি থাকবে। পেটে ডিম অনুভব হলে অবশ্যই ওজনে ভারি হবে। এধরনের মুরগির পিঠ হয় লম্বা ও প্রশস্ত। শরীরের কোনো অংশে খুঁত, অপূর্ণতা অথবা বিকলাঙ্গ হবে না।
পালক: সুস্থ অবস্থায় মুরগির পালক উজ্জ্বল ও সুবিন্যস্ত থাাকে। এ ধরনের মুরগি সাধারণত মার্চ মাসের দিকে পালক পাল্টায়। তবে মাথার উপরিভাগের পালক শূন্য হয়ে টাকের সৃষ্টি হয়।
বয়স: মুরগির বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম উৎপাদনের হার তুলনামূলকভাবে কমে যায়। সাধরণত ৫৬০ দিন বয়স পর্যন্ত মুরগি মোট উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ডিম দেয় । তাই বয়ষ্ক মুরগি খাবারের জন্য বিক্রি করে খামারের নতুন মুরগি তোলা উচিত।
চঞ্চল ও সতর্কতা: স্বাস্থ্যবান মুরগি সব সময় চঞ্চল থাকে এবং খাবার খুঁজতে ব্যস্ত মনে হয়। হঠাৎ কোনো শব্দ হলে অথবা শত্র“র উপস্থিত বুঝতে পারলে মুখে এক ধরনের শব্দ করে স্বজাতিকে সতর্ক করে দেয়। কেউ ধরতে গেলে দৌড়ে পালায়।
পা: সুস্থ মুরগির পা থাকবে সুন্দর ও সুগঠিত। মুরগির পা’র মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাহাঁটি করবে।
মলদ্বার এবং পাছার হাড়: ডিম পাড়া মুরগির মলদ্বার হবে প্রশস্ত ও ডিম্বাকৃতি। পরীক্ষা করলে সেখানে আর্দ্র ও রক্তাভ দেখাবে। মলদ্বারের উভয় পাশে হাত দিলে পাছার হাড় অনুভব করা যায়। উৎপাদনশীল মুরগির দুই হাড়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে দু’ইঞ্চি ।
তলপেট: মুরগির তলপেটে হাত দিয়ে বুঝা যাবে এর ডিম ধারণের ক্ষমতা । ডিম দেয়া অবস্থায় তলপেট প্রশস্ত ও নরম থাকে। মুরগি ডিম পাড়া অবস্থায় বুকের হাড়ের নিম্নভাগ এবং পাছার উভয় হাড়ের মাথা পর্যন্ত দূরত্ব হবে দু’ইঞ্চি। মুরগির তলপেটে মেদ থাকবে না এবং চাপ দিলে পেটের ভেতর ডিম অনুভব হবে।
চামড়া: উৎপাদনীল মুরগির চামড়ার নিচে কোনো মেদ জমা থাকবে না। চামড়া হবে পাতলা ও নরম ।
দাঁড়ানোর ভঙ্গি: সুস্থ অবস্থায় মুরগির দাঁড়ানোর ভঙ্গি স্বাভাবিক থাকে। পাখি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে।
রঙ পরির্তন: ডিম পাড়ার সাথে সাথে মলদ্বার, ঠোঁট, ঝুঁটি, গলার ফুল ও পায়ের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে। রঙ পরিবর্তন শেষ হলে বুঝতে হবে ডিম পাড়ার সময় শেষ।
ব্যবহার ও আচরণ: বেশি ডিম দেয়া মুরগির আচরণ হবে সতর্কভাব, ভদ্র ও চঞ্চল। ডিম পাড়ার সময় বাসায় ঢুকবে, কোনো সময় অলস বসে থাকবে না । ডিম পাড়া মুরগির পিঠে হাত রাখলে সহজেই বসে পড়বে।
সবশেষে বলতে হয়, সুস্থ এবং উৎপাদনশীল মুরগি চিহ্নিত করে তবেই পালন করা উচিত। এতে একদিকে যেমন রোগবালাইয়ের সম্ভাবনা কম থাকবে, তেমনি খামারি হবে লাভবান।