বোরোর ক্ষতি পোষাতে মরিয়া সুনামগঞ্জের কৃষকরা

315

download

সুনামগঞ্জ : জেলার কৃষকের বেশিরভাগেই বিগত বোরো মৌসুমের ক্ষতি পোষানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। গত আষাঢ় (জুন মাসে) মাসে আমন ধান বপনের সময়ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। প্রথম দফায় বীজ রোপণের পর বন্যার পানিতে বীজতলা ডুবে যায়, পরে আবার আমন ধানের বীজ বপন করে জেলার উচুঁ এলাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি জমিতে আমন ধান ফলান তারা। আর কদিন পরই (অগ্রহায়ণ মাসে) আমন ধানের কাটাই-মাড়াই শুরু হবে। একই সঙ্গে বোরো জমি চাষাবাদেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।

হাওরবেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জ। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। আবাদযোগ্য জমির সিংহভাগই বোরো ধানের উপযোগী। গত বছর এ জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছিল। কিন্তু হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ সময়মত না হওয়ায় জেলার সবকয়টি হাওরের ধানই পানিতে ডুবে যায়। সরকারি হিসেবে অবশ্য বলা হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির ধান ডুবেছিল। সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের প্রবীণরা বলেছিলেন বিগত ফসল মৌসুমে হাওরডুবে ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, শতাব্দীকালেও এ অঞ্চলে এমন ক্ষতি হয়নি।

সরকারি হিসেবে বলা হয়েছিল হাওরের ফসলডুবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। হাওরাঞ্চলের এমন দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা খুবই কষ্টদায়ক হলেও লড়াই বন্ধ হয়নি কৃষকদের। অন্য বছরের চেয়ে উচুঁ এলাকায় এবার আমন চাষাবাদ বেশি হয়েছে। এখন হাতে টাকা, ঘরে বীজ নেই। হালের বলদ বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। তবু হাল ছাড়ছেন না কৃষকরা। আবারও বাঁচার লড়াইয়ে কৃষকরা। তবে জমি চাষাবাদে সরকারের কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ঘোষণা দেওয়া সহায়তা কর্মসূচি এখনো হাওরাঞ্চলে শুরু হয়নি।

বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওর পাড়ের পদ্মনগরের কৃষক অরুন দেব নাথ বলেন, ‘গত বছর চারায় ধানের গোটা আসার আগেই ভেসে গেছে হাওর, বছরটা কিভাবে যে কাটাচ্ছি বলে বুঝানো যাবে না। এরপরও আশা ছাড়িনি, হাওরের দিকে ঘুম থেকে ওঠেই তাকাই, পানি কেমন কমেছে, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনে আবার ঋণ করবো, চাষাবাদ করবো, আমাদের এছাড়াতো অন্য কিছু নেই।’ একই ধরনের মন্তব্য করলেন- দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডুংরিয়া গ্রামের কৃষক রহমত আলী ও বিশ্বম্ভরপুরের রাজনগরের কৃষক যামিনী কুমার সরকারও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বললেন, ‘সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ কৃষককে ৫ কেজি করে ধানের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি ও এক হাজার টাকা করে নগদ দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই এ সহায়তা বিতরণ শুরু হবে।’ তিনি জানালেন, এবার বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমি।

জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বললেন, ‘কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ৩ লাখ কৃষককে সাড়ে ৫৮ কোটি টাকার কৃষি ভর্তুকি বিতরণের পর্যায়ে রয়েছে। কৃষি ভর্তুকি কৃষকের ব্যাংক হিসেবে এবং অন্যান্য সহায়তা কোন একটি নির্দিষ্ট অফিস বা প্রতিষ্ঠান থেকে বিতরণ হবে। আগামী বোরো ফসল রক্ষায় হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। জেলার কোথাও নীতিমালা লঙ্ঘন গাফিলতিই করতে দেওয়া হবে না।’

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন