যশোর প্রতিনিধ: জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারার ফুলের বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। দিনরাত বাগানের পরিচর্যা চলছে। এখন ফুলের ভরা মৌসুম। সামনে রয়েছে দুটি উৎসব। সেকারণেই তাদের এতো তোড়জোড়।
আসছে ইংরেজি নববর্ষ ধরতেই তাদের এ আপ্রাণ চেষ্টা। কেননা গত নভেম্বর মাসের টানা বৃষ্টিপাতে ফুলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিশেষ করে গোলাপ এবং রজনীগন্ধা ফুল পানিতে নষ্ট হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিরলসভাবে মাঠে ফুলের পরিচর্যা করছেন চাষিরা। এবার নববর্ষে তারা কমপক্ষে ২ কোটি টাকার ফুলের বিকিকিনি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের বহু চাষি তাদের জমিতে ধান, পাটের চাষ চুকিয়ে সারাবছরই ফুল চাষ করছেন। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে। বিশেষ করে বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবসে এসব ফুলের বিকল্প নেই। ইংরেজি নববর্ষ আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও রয়েছে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। তাই বছরের এ তিনটি দিবসকে ঘিরেই হয় মূল বেচাকেনা।
পাটুয়াপাড়ার বাসিন্দা ফুলচাষি সাহিদা বেগম বলেন, ‘আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুলে পোকায় নষ্ট হয়ে না যায়। কেননা গত নভেম্বর মাসের বৃষ্টিতে আমাদের ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে এবারের নববর্ষে।
ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, ডাবল রজনীগন্ধা (ভুট্টা) ও হাইব্রিড রজনীগন্ধা (উজ্জ্বল), গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা এবং গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। গত নভেম্বর মাসের বৃষ্টিতে গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুলের ক্ষতি হয়েছে। তবে আসছে ইংরেজি নববর্ষে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি।
ফুলচাষি সোহাগ হোসেন বলেন, এবার বিঘাপ্রতি গোলাপ এক লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি। কেননা বৃষ্টিতে ফুলগাছ পচে যাওয়ায় এবার দাম বেশি। জারবেরা ফুল ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বলেন, এখন প্রতি সপ্তায় ৬-৭ হাজার পিস ফুল বিক্রি হচ্ছে। ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর বিক্রির হার বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এ ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৫-৬ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ইংরেজি নববর্ষ এবং ২১ ফেরুয়ারি জোরেশোরে এখানকার চাষিরা ফুল বিক্রি করে থাকেন। এবার বাজারে ফুলের দাম বেশি যাচ্ছে। বৃষ্টিতে গাছ নষ্ট হয়ে যাবার কারণে ফুলের উৎপাদনও কম। বর্তমানে গোলাপ ফুলের দাম যাচ্ছে সাড়ে ৪শ’ টাকা শ, রজনীগন্ধা প্রতি শ সাড়ে ৮শ’ গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ৬ থেকে ১২ টাকা, গাদা ফুল ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ হাজার, জারবেরা শ’ প্রতি এক হাজার থেকে ১২শ টাকায়।
ঝিকরগাছা ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির আহবায়ক শামিম রেজা জানান, এবার বৃষ্টিতে চাষিদের বেশ ক্ষতি হলেও ফুলের দাম ভালো যাচ্ছে। যেকারণে লোকসানের হাত থেকে বাঁচা যাবে।
প্রসঙ্গত, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু করা হয়। দেশে ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন