ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন(বিএবি)র অনৈতিক চাপে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানো, সরকারি অর্থ বেসরকারী ব্যাংকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত রাখার সিদ্ধান্ত আদায়, অর্থ মন্ত্রী, অর্থ সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভণরকে হোটেলে গিয়ে চাপের মুখে দাবি আদায়কে চরম নৈরাজ্য বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে এদু’টি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নগর ও বিভাগীয় নেতারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন (বিএবি) কর্তৃক অনৈতিকভাবে জোর করে সুবিধা আদায়ের ঘটনার প্রতিবাদে এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা উপরোক্ত দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারি সংস্থাগুলি এতদিন তাদের তহবিলের ৭৫ শতাংশ রাস্ট্রামালিকানাধীন ব্যাংকে জমা রেখে আসছিলো, বাকি ২৫ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে জমা রাখার বিধান ছিলো। আর দীর্ঘ সময়ের এ চর্চা পরিবর্তন করে ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকে রাখার বিধান জারি করা হলো। আর সিআরআর কমানোর কারনে এখাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বেসরকারী ব্যাংকগুলির হাতে জমা হবে। যেখানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ সময় মতো ফেরত দিতে পারছেনা, অনেকে দেউলিয়া হয়ে যাবার উপক্রম, ব্যাংক মালিকরা ব্যাংকের শেয়ার কিনে পরবতীতে নামে বেনামে ঋন নিয়ে জনগনের আমানত খেয়ে বসে আছে সেখানে এধরনের সিদ্ধান্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাতে চরম, অনিয়ম, দুর্নীতিকে আরো উস্কে দেয়ার সামিল।
নেতরা আরো বলেন, বেসরকারি ব্যাংগুলির তারল্য সংকটের কথা বলে সিআরআর কমানো হলেও ব্যাংকে যে পরিমান তারল্য থাকার কথা তার চেয়ে বেশি আছে। প্রমানিত হচ্ছে বেসরকারি খাতের ঋণ ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলির আমানত কমে যাবার কারণ হলো আমানতকারীদের অর্থ সময়মতো ফেরত দানে অপরাগতা ও জনগনের আস্থার সংকট। কিন্তু সিআরআর কমানোর কারনে ঋনের পরিমাণ বাড়বে এবং ঋন খেলাপীর হার প্রকট হারে বাড়বে।
বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, ফার্মাস ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, সোনালী, জনতা ব্যাংকসহ সকল ব্যাংকের ঋণ বিতরণে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালনে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় নয় চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় প্রদান করে দেশের পুরো ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে ইজারা প্রদান করায় আর্থিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে। এ সমস্ত অনিয়মের হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের পরিবর্তে অনেককে পুরস্কৃত করার কারনে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম ক্রমাগত বাড়ছে। যা দেশের পুরো বিনিয়োগকে চরম ভাবে বাধার সম্মুখীন করছে। অন্যদিকে চাল-ডালের ব্যবসায়ীদের মতো বিনা কারনে ঋনের সুদ বৃদ্দি করে দেশীয় বিনিয়োগকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং বিদেশে মুদ্রা পাচার ভয়াবহ হারে বেড়ে যাবে। সাধারণ আমানতকারীর আমানত চরম ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বিৃবতিতে নেতারা বলেন, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারদের সঞ্চিত অর্থের পরিমান ব্যংকের মোট তহবিলের ১০ শতাংশের বেশি নয়। আর ৯০ শতাংশ যাদের সঞ্চয় তারা ব্যাংক পরিচালনায় কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতকারীদের পক্ষ থেকে পরিচালনা পর্ষদে নির্বাচিত হবার সুযোগ সৃষ্টি করা না হলে আমানতকারীদের অর্থ বেহাত হবার সম্ভাবনা অধিক।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগর সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন