ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বারি গম-৩৩

518

গম
মাগুরা: জেলায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি গম-৩৩ নামের একটি নতুন জাত। ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও তাপ সহনশীল নতুন এ জাতের গমের বীজ কৃষকদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামীতে গম উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা । চাষ হওয়া এ জাতের গমে ভালো ফলনও পাবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বারি গম-৩৩ নামের নতুন এ জাতটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী, জিংক সমৃদ্ধ, দাগ রোগ সহনশীল। গম মূলত শীতকালীন ফসল। শীত যত বেশি হয় গমও ততো ভালো হয়। কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত আবহওয়ায় গম মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গমের ফলন কমে যায়। এ ক্ষেত্রে তাপ সহনশীল হওয়ায় এ জাতে গমের ফলন ঠিক থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিউিট এর সহযোগিতায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলার চার উপজেলায় ২২৯ শতক জমিতে বারি গম-৩৩ জাতের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে চাষ করেছে। এর মধ্যে সদরে ৯৯ শতকে ৩টি, ২০ শতকে ২টি, শ্রীপুরে ৫০ শতকে ৫টি, শালিখায় ৫০ শতকে ৫টি এবং মহম্মদপুর উপজেলায় ১০ শতকের ১টি করে মোট ১৬টি এ জাতের গমের প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। যা থেকে উৎপাদিত হবে ৩০৯.৫০ মণ গমের বীজ। এ বীজ সংরক্ষণ করে আগামীতে কৃষকদের মাঝে গম চাষে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, ব্লাস্ট রোগ হলে গমে দানা ভালো হয় না। পাশাপাশি শীষ সাদা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বারি গম-৩৩ জাতটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও রোগ সহনশীল। এ ছাড়া পাতার মরিচা ও দাগ রোগ সহনশীল। এ জাতে হেক্টর প্রতি উৎপাদনও কিছুটা বেশি হয়। অন্যান্য জাতে যেখানে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৪ থেকে ৫টন। সেখানে বারি গম-৩৩ জাতে হেক্টর উৎপাদন হবে সাড়ে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। এ জাতের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন।

মাগুরা সদর উপজেলার কুকনা গ্রামের কৃষক সেলিম লস্কার ৩৩ শতক জমিতে কৃষি বিভাগের সহায়তায় এ জাতের গমের প্রদর্শনী প্লট করেছেন। মাঠে ফসলের অবস্থা বেশ ভালো। তিনি ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন।
এ দিকে শ্রীপুর উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক বাহারুল ইসলাম ২০ জমিতে বারি গম-৩৩ জাত চাষ করেছেন। জেলা কৃষি বিভাগ এ চাষে তাকে নিয়মিত হযোগিতা করেছে। চাষকৃত জমি থেকে তিনি প্রায় ৮ মণ গমের ফলন পাবেন বলে আশা করছেন।

কৃষকরা জানান, গমের বীজ সংরক্ষণ করে আগামীতে তারা অধিক জমিতে এ জাতের গম চাষ করবেন ।

মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানান, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও তাপ সহনশীল বারি গম-৩৩ জাতটি মাগুরাতে প্রথমবারের মত চাষ হয়েছে। অন্যান্য জাতের তুলনায় হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেশি হওয়ায় আগামীতে এ জাতের গম চাষে ব্যাপকভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। যা মাগুরা জেলায় গমের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, জেলায় চলতি মৌসুমে মোট ৪ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। এর সদর উপজেলায় ৯৯৫ হেক্টর, শ্রীপুরে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর, শালিখায় ১৮৫ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমি থেকে ১৪ হাজার ৮১ মেট্রিকটন গম উৎপাদনহবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন