ভেড়া পালনে ভাগ্য বদল ছায়া বিবির

50

পাঁচ বছর আগের কথা মনে হলে চোখে জল আসে বৃদ্ধা ছায়া বিবির। অভাব-অনটন আর দুঃখ-দুর্দশায় সংসারে ছিল নানা কষ্ট। এখন তার সেদিন নেই। কয়েক বছরেই সুখের চাবি তার আঁচলে। ভেড়া পালনে তার ভাগ্য বদলেছে। মাত্র দুটি ভেড়া থেকে মাত্র পাঁচ বছরে ছায়া বিবির ভেড়ার খামারে এখন রয়েছে শতাধিক ভেড়া। খামারের ভেড়া পালন দেখাশোনায় তার বেকার ভাইয়েরও হয়েছে কর্মসংস্থান। প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার ভেড়া বিক্রি করেন ছায়া বিবি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ভেড়া পালনে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা। ছায়া বিবি মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাসের মেয়ে।

ছায়া বিবি জানান, প্রায় ২০ বছর আগে ছায়া বিবির স্বামী বিমল বিশ্বাস দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তাকে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ছায়া বিবি। অনেক চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায়নি স্বামী বিমল বিশ্বাসকে। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাব-অনটনে একমাত্র ছেলে শেবাস্তিন মণ্ডলকে নিয়ে পড়েন মহা বিপাকে। বাবা-মায়ের সংসারেও ছিল নানা টানাপড়েন। ছেলের খাবার জোগাতে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। শুরু করেন অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ। ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালিয়ে দুটি উন্নত জাতের ভেড়া কিনে পালতে শুরু করেন। দুটি ভেড়া থেকে শুরু হয় ছায়া বিবির জীবনসংগ্রাম। দুটি ভেড়া থেকে এখন তার খামারে রয়েছে শতাধিক ভেড়া। ঝিয়ের কাজ ছেড়ে এখন তার ভেড়ার খামার পরিচর্যা করেই দিন কাটে। একমাত্র ছেলে শেবাস্তিন মণ্ডল লেখাপড়া শিখে একটি ওষুধ কোম্পনিতে চাকরি করেন। মা-ছেলের সংসারে এখন সুখের কোনো কমতি নেই।

বাড়ির পাশের এক গ্রাম্য পশু ডাক্তারকে দিয়েই ভেড়ার চিকিৎসা করানো হয়। সরকারি সহায়তা পেলে আরও বড় খামার গড়ে তোলার আশা তার।

বল্লভপুর গ্রামের শেরখান বলেন, ছায়া বিবিকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক সংগ্রাম করে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত নারী। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ভেড়া

পালন করছেন। তার কাছ থেকে বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভেড়া কিনে পালতে শুরু করেছেন। ছায়া বিবিকে সরকারিভাবে সহায়তা করার জন্য দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মল্লিক জানান, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ছায়া বিবির দুর্দিন। ভেড়া পালন তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখন ছায়া বিবির খামারে শতাধিক ভেড়া। সকাল-সন্ধ্যায় ভেড়া নিয়ে রাস্তায় বের হলে দেখা যায়, ছায়া বিবির ভেড়ার বহর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমিও তাকে অনেকভাবেই উৎসাহ দিয়ে আসছি। ছায়া বিবিকে অনুকরণ করলে অনেকের সংসারে আসতে পারে আর্থিক সচ্ছলতা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার মো. হারিছল আবিদ বলেন, গত বছরের দুটি ঈদে অন্যান্য পশুর তুলনায় ভেড়া পালনকারীরাও অনেক লাভবান হয়েছেন। জেলায় মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বাজারে মেহেরপুরের ভেড়ার অন্যরকম কদর রয়েছে। এ বছরও ভেড়া পালনে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মুজিবনগরে ছায়া বিবির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সব সুযোগের আওতায় আনা হবে।