জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কলিংগা গ্রামের ফসলি মাঠের ১০-১২ জন কৃষকের প্রায় ৫০ বিঘা জমির আলু বীজ অবস্থায় পচে গেছে বলে অভিযোগে উঠেছে। ডিলার নকল বীজ দিয়েছে বলে সন্দেহ করছেন কৃষকরা। তবে আসল বীজ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ডিলারদের।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা বলছেন, তারা ক্ষেতলালের ইটাখোলা বাজারের ওসমান উজ জামান মোল্লার দোকান থেকে ব্র্যাক কোম্পানির কারেজ জাতের আলুর বীজ কিনেছিলেন। তিনি ব্র্যাক কোম্পানির আলুর বীজের ডিলার। তারা প্রতি বছর ব্র্যাক কোম্পানির আলুর বীজ রোপণ করেন। এবার ওই ডিলারের দোকানের ব্র্যাকের কারেজ আলুর বীজ কিনে রোপণ করেছেন। কিন্তু তারা এই আলুর বীজ রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কলিংগা গ্রামের ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আলুর খেত। ওই মাঠের কৃষকদের অনেকেরই আলুর বীজের চারা বড় হয়েছে। এসব খেত কৃষকেরা পরিচর্যা করছেন। ওই মাঠের ১০-১২ জন কৃষকের জমির আলুর বীজের চারা গাছ বড় হচ্ছে না। আবার কিছু চারা উঠলেও মাটির নিচে আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, এবার এলাকার হিমাগারগুলোতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে আলু বীজের প্যাকেট করা হয়েছিল। সেই আলুর বীজ বাজারে এসেছে। একারণে ভালো-মন্দ আলুর বীজ চিহ্নিত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তোরাব আলী বলেন, আমি আলুর বীজ কিনতে ক্ষেতলালের ইটাখোলা বাজারের ওসমান উজ জামানের দোকানে আগাম বুকিং দিয়েছিলাম। ব্র্যাকের কারেজ জাতের আলু কিনে তিন বিঘা জমিতে রোপণ করেছিলাম। রোপণের ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও আলুর বীজের চারাগাছ ওঠেনি। আবার কিছু চারা উঠলেও সেগুলো আলু মাটির ভেতরে পচে গেছে। প্রতি বছর ডিলার ওসমান উজ জামানের দোকান থেকে ব্র্যাকের আলুর বীজ কিনে জমিতে রোপণ করি। আগে কখনও এমন হয়নি।
কৃষক সানাউল মন্ডল বলেন, আলু রোপণ করেছি, কিন্তু মাটির ভেতরে সব পচে যাচ্ছে। এখন তিন বিঘা মাটিতে কি করব? ১৪ বস্তা ক্যারেজ আলু লাগিয়েছিলাম। পচে যাওয়ার কারণে আবারও ৭ বস্তা গ্যানোলা আলু বাজার থেকে কিনে এনে খোসা দেওয়া হচ্ছে। ব্রাক কোম্পানির আলু ছিল।
ইনসান ফকির নামের আরেক কৃষক বলেন, আলুর বীজ কেনার জন্য আগাম বস্তা প্রতি ৫শ টাকা জমা দেওয়া ছিল। টাকা জমা না দিলে আলু পাওয়া যেত না। আমি গরিব মানুষ, ধার করে টাকা জমা দিয়েছিলাম। ১০ বস্তা আলু এনে পত্তন নেওয়া আড়াই বিঘা মাটিতে রোপণ করেছিলাম। প্রতি বস্তায় ৪০ কেজি আলু ছিল, দাম ২৮০০ টাকা। আলুতে একবার সেচ দেওয়ার পর মনে করলাম গাছ উঠবে। কিন্তু জমিতে অনেক আলুর গাছ ওঠেনি। আবার উঠলেও সেসব গাছের আলু পচে গেছে। এক জমিতে পরবর্তীতে খোসা দিয়েছি। কিন্তু বেশি জমিতে দেওয়া পারিনি।
আমি আড়াই বিঘা জমিতে একই ডিলারের কাছ থেকে ক্যারেজ আলুর বীজ কিনে রোপণ করেছি। রোপণের পর মাটির ভেতর বীজ আলু পচে গেছে। এ মাঠের ১০-১২ জন কৃষকের প্রায় ৫০ বিঘা জমির আলুর গাছ ওঠেনি। এবার জেলার হিমাগারগুলোতে বিভিন্ন নামি-দামি কোম্পানির মোড়কে বীজ আলু হিসেব প্যাকেট করা হয়েছে। আমাদের মতো কৃষকদের ভালো-মন্দ বীজ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ইটাখোলা বাজারের ডিলার ওসমান উজ জামান বলেন, চলতি মৌসুমে ব্র্যাকের এ-গ্রেড ১৯৩ বস্তা ও বি-গ্রেড ৪০৩ বস্তা কারেজ আলুর বীজ বিক্রি করেছি। এই দুটি গ্রেডের আলুর বীজ ৬৯ জন কৃষক কিনেছেন। এর মধ্যে ১০ জন কৃষকের অভিযোগ করেছেন, তাদের আলুর বীজ সঠিক ছিল না। কৃষকেরা সঠিকভাবে রোপণ করতে পারেনি বলে এমনটা হয়েছে। ব্র্যাকের বীজ কোম্পানি টেরিটরি কর্মকর্তা আলুর খেতে গিয়েছিলেন, তিনি ভালো বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক কোম্পানির বীজ আলু রয়েছে। আর ওই কৃষকদের দেওয়া সব বীজই ব্রাকের। তাদের নকল বীজ দেওয়া হয়নি।
ব্র্যাকের টেরিটরি কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজনের অভিযোগ পেয়ে ওই মাঠে গিয়েছিলাম। এটা কৃষকের ভুল। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করছে না। তারা আগাম আলু তোলার আশায় অতিরিক্তি গরমের মধ্যে আলু রোপণ করেছে। এর কারণ ক্যারেজ আলু বেশি গরম আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না। আবার আলু বীজ কেটে রোপণ করা হয়। ওই কাটা অংশে রাসায়নিক সার স্পর্শ পেয়েছে। তাছাড়া আলু রোপণের কয়েকদিন পর সেচ দিয়েছে। আমরা হয়তো তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারব না। তারপরেও আমাদের মনিটরিং টিম ওই মাঠে গিয়ে আলুর খেত দেখবেন।