মিষ্টি কুমড়ার বীজের যত উপকারিতা

8396

89501968_1394014650771506_1900243868490661888_n

আমাদের ডায়েট বা খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত খাবারে, দৈহিক চাহিদা মেটাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সব পুষ্টি উপাদান এর সমন্বয় করা। খাবারের কম্বিনেশন অর্থাৎ কোন খাবারের সঙ্গে কোন খাবার খেলে পুষ্টি সরবরাহ সঠিক হবে এবং কিভাবে খেলে তা আমাদের দেহের চাহিদা মিটিয়ে সঠিক পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখবে, সেই দিকে যদি আমরা আলোকপাত করি, তাহলে বহুলাংশেই অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিষ্টি কুমড়ার বিচি, যা আমরা প্রায়শই সবজির আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেই। ভুল শোনেননি, আসলেই নাশতা হিসেবে কুমড়ার বিচি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে নিতে পারেন। ১০০ গ্রাম কুমড়ার বিচি থেকে ৫৬০ ক্যালরি পাওয়া যায়, তার মানে ক্ষুধা মেটানোর কাজটা ভালোই পারে এ বস্তু। আর সামান্য এই খাবারে পুষ্টিও গিজগিজ করছে। প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের ‘পাওয়ার হাউস’ মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব খাদ্য উপাদান।
এখন আসি এই মিষ্টি কুমড়ার বিচি কেন এত উপকারী।

ভারতের ডি কে পাবলিশিং হাউসের একটি বই ‘হিলিং ফুডস’-এ বলা হয়েছে, কুমড়ার বিচি (বীজ) ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা ও প্রোটিনের ভালো একটি উৎস। বিচিগুলোতে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড উচ্চমাত্রায় রয়েছে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

ওজন কমানো, চুলের বৃদ্ধিসহ কুমড়োর বিচির নানা গুণ জেনে নেওয়া যাক—

১. ‘হৃদ্‌যন্ত্র’ ভালো রাখতে
কুমড়োর বিচিতে আছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সবই হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য উপকারী। এতে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা খারাপ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

২. ভালো ঘুম
কুমড়োর বিচিতে আছে সেরোটোনিন। স্নায়ু নিয়ন্ত্রক এই রাসায়নিক বস্তুকে প্রকৃতির ঘুমের বড়ি বলা হয়। ট্রাইপটোফ্যান নামের অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে গিয়ে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়, যা ঘুম নিশ্চিত করে। ঘুমানোর আগে মুঠভর্তি কুমড়োর বিচি এনে দেবে পুরো রাত্রির শান্তি।

৩. জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমায়
পেশির জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমানোর ক্ষমতা আছে কুমড়োর বিচির। এ ছাড়া বাতের ব্যথাও কমায় এটি। অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে এর তেলও ভালো কাজে দেয়।

৪. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রচুর পরিমাণে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এটি।

৫. ভালো রাখে প্রোস্টেট
কুমড়োর বিচিতে আছে জিংক। যা পুরুষের উর্বরতা বাড়ায় ও প্রোস্টেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এতে আছে ডিএইচইএ (ডাই-হাইড্রো এপি-অ্যান্ড্রোস্টেনেডিয়ন), যা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

৬. ডায়াবেটিসেও উপকারী
শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে কুমড়োর বিচি, ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৭. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাতেও সাহায্য করে কুমড়োর বিচি! ছোট্ট এই খাবারেই পেট পূর্ণ থাকে অনেকক্ষণ। আর আশজাতীয় খাবার বলে হজমেও সময় লাগে। ফলে ক্ষুধা পায় না, শুধু শুধু বাড়তি খাবার শরীরে ঢোকার সুযোগ পায় না।

৮. দীর্ঘ চুলের নিশ্চয়তা
এতে আছে কিউকুরবিটিন, এমন এক অ্যামিনো অ্যাসিড যা চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন সিও আছে কুমড়োর বিচিতে, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।

যেভাবে খাবেন কুমড়োর বিচি
১. কাঁচা খেতে পারেন কিংবা একটু টেলে নিয়েও খাওয়া যায়।
২. কুমড়োর বিচি দিয়ে কেক, স্যুপ ও সালাদ বানিয়েও খেয়ে নিতে পারেন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১০মার্চ২০