দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যশোরের বাজারে গরু ও খাসির মাংসের সঙ্গে সব ধরনের ব্রয়লার মুরগির দাম যখন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন নিন্মবিত্ত মানুষ বাজারে কেটে বিক্রি করা মুরগির মাংস কিনে নিজেদের চাহিদা মেটাতে থাকে। কিন্তু রমজানের আগমনকে ঘিরেও সেখানে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করেই যশোরের বাজারে কাটা ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংসও।
গত শনিবার যশোর বড়বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা কেজি দরে। অথচ মাত্র চার দিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পাইকারীভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা বাড়তি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে বলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করেন।
বড় বাজারের ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংস বিক্রেতা রাজু ও রফিকুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের মাংসের পাশাপাশি মুরগির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এজন্য অধিকাংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্তশ্রেণির মানুষের আগ্রহ এখন ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংসের প্রতি। সে কারণে আমাদের দোকানে বিক্রিও বেড়েছে। তবে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় গত দুদিন ধরে প্রতিকেজি কাটা মাংস ৩১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তারা বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা অসন্তোষ হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কিছু করার নেই আমাদের।
পাশেই কথা হয় মুরগি ব্যবসায়ী নাজমুল হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত দুদিনে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। খামার পর্যায়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ টাকা কেজি। আর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। সোনালি খামার পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৩৫ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, লেয়ার খামার পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩১৫ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই সাথে ৪৫০ টাকার দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজি। তিনি বলেন, এমনিতে পাইকার পর্যায়ে দাম বেশি, তারপর রোজার কারণে বাজার একটু চড়া। সামনে দাম আরও বাড়লে করার কিছুই থাকবে না বলে তিনি জানান।
বাজারে কথা হয় মুরগি কিনতে আসা যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার শাহিদা বেগম ও রুকসানা আক্তার নামে দুই মহিলার সঙ্গে। তারা বলেন, সব ধরনের মাংসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যসব নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সংসার খরচ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা মাংস খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম বললে চলে। মাঝে মধ্যে কাটা ব্রয়লার মুরগির মাংস কিনে সংসারের চাহিদা মেটালেও এখন সেখানেও বিপত্তি। দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা আর মাংসের স্বাদ নিতে পারব কিনা তাও বলতে পারছি না।
এদিকে রোজা উপলক্ষে বাজারে প্রায় সবশ্রেণির নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। বিশেষ করে খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি আইটেমের খেজুরে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। ৪০০ টাকার কেজি দরের কলমি খেজুর বিক্রি ৬০০ টাকা, ৩০০ টাকা কেজির রাবেয়া খেজুর বিক্রি ৪০০ টাকা, ২৫০ টাকা কেজির ডারাজ খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, ৭৫০ টাকার মাজদুল খেজুর ৯৫০ টাকা, ৬০০ টাকা কেজি আমবার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, ৬০০ টাকার আজোয়া খেজুর ৭০০ টাকা, ৪৫০ টাকার সুপরিন মরিয়ম খেজুর ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
একই অবস্থা আপেল, আঙ্গুর, তরমুজসহ অন্যান্য ফলের। এসব ফলের কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
যশোর সার্কিট হাউসের সামনে সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে ফলের দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি মাসুদ আলম জানান, রোজা উপলক্ষে গত ৫ দিন ধরে পাইকার পর্যায়ে বাড়তি দামে ফল বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে সেখান থেকে আমাদের বাড়তি দামে ফল কিনে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ নিয়ে ক্রেতারও অসন্তোষ বলে তিনি জানান।