সিরাজগঞ্জে হাড়ের গুঁড়া ব্যবহৃত হচ্ছে পোলট্রি শিল্পে

117

গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই করে প্রয়োজনীয় মাংস সংগ্রহের পর অবশিষ্ট হাড় দেশের পোলট্রি ও ওষুধশিল্পে কাজে লাগানো হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে জেলার সদর উপজেলার কালিয়া গ্রামে প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে যমুনা বোন মিল কারখানা।

যমুনা বোন মিল কারখানায় গিয়ে জানা যায়, প্রতি মাসে অন্তত ১৫ লাখ টাকার হাড়ের গুঁড়া কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করছে। প্রতি কেজি হাড় বিক্রি হয় ২৫ টাকা দরে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুঁড়ো, টাঙ্গাইল জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন পশুর হাড়। সংগ্রহের পর হাড়গুলো পরিষ্কার করা হয়। এরপর মেশিনের সাহায্যে গুঁড়া করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়।

কারখানায় কাজ করার সময় কথা হয় নারী শ্রমিক চাম্পা ও আহের আলীর সঙ্গে তারা জানান, আমরা এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করি। এতে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা পাই। দুজনের টাকায় আমার সংসার চলে। স্বামীর আয়ের সঙ্গে আমার আয় সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।

হাড় সংগ্রহকারী সোলায়মান হোসেন জানান, হাড় সংগ্রহের কয়েক জনের একটি দল রয়েছে। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে। দৈনিক প্রায় গড়ে ২০-২৫ কেজি হাড় সংগ্রহ হয়। এই হাড় বিক্রির টাকায় কোনোমতে সংসার চলে। তবে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কসাইরা আর আগের মতো হার ফেলে না। মাংসের সঙ্গেই বিক্রি করে দেয়। তাই এখন আগের মতো হাড় সংগ্রহ করতে পারছি না।

যমুনা বোন মিলের মালিক হাফিজুল শেখ জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে এ ব্যবসা শুরু করি। সারাদেশে পাঁচ-ছয়টি হাড়ের কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে রয়েছে একটি। মহিষ ও গরুর হাড় কিনে সেগুলো গুঁড়ো করে খুলনার ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। তাদের কাছে শুনেছি, এই সব গুঁড়ো দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। অনেক সময় চাহিদামতো গুঁড়ো সরবরাহও করতে পারি না। আগের মতো এখন হাড়ও তেমন পাওয়া যাচ্ছে না, যে কারণে আমাদের হাড়ের গুঁড়ো উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

খুলনার (হাড়ের গুঁড়োর) ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন মোবাইলে জানান, এই হাড়ের গুঁড়ো থেকে গবাদি পশুর খাবার, মুরগির খাবার ও ওষুধ কোম্পানিতে ক্যাপসুল তৈরির কভার তৈরি হয়। এ কারণে বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনেরা এই হাড়ের গুঁড়ো ক্রয় করেন।

সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, বিষয়টা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে না পড়লেও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ফেলে দেয়া হাড় গুঁড়ো করে ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে।

তিনি আরও জানান, হাড়ের গুঁড়ো একটি প্রাকৃতিক জৈব সার, যা প্রাণীর হাড় থেকে উৎপাদিত হয়। সাধারণত গরু, ছাগল ও ভেড়ার হাড়কে নির্দিষ্ট আকারে গুঁড়ো করে এটি তৈরি করা হয়। হাড়ের গুঁড়োয় এমন উপাদান রয়েছে, যা গাছের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।