মেহেরপুর: তাপদাহে এবার লিচু পুড়ে না যাওয়া ও প্রয়োজনীয় সময়ে মেহেরপুরে এবার স্মরণকালের লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় মোজাফফর জাতের লিচু বেচা-বিক্রি শেষ হয়েছে। বোম্বাই ও চায়না জাতের লিচু পেকে লাল টকটক করছে গাছগুলোতে। এখন বাজারে বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে এবার মেহেরপুর জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন আশা করেছিল। কিন্তু ভালো উৎপাদন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় ৩শ ৯৫ হেক্টর স্থানীয় মোজাফফর জাতের সাথে বোম্বে চায়না লিচুর বাগান রয়েছে। এদের মধ্যে বয়স্ক গাছগুলো আঁটি জাতের হলেও নতুন যেসব বাগান গড়ে উঠছে সেগুলো বোম্বাই ও চাইনা থ্রি জাতের। এবার আবহাওয়া লিচু চাষের অনুকূলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাগান মালিক ও ক্রেতারা।
বাজার দর আর বাম্পার ফলন পেয়ে লিচু ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা লিচুর প্রাণখোলা মিষ্টি হাসি হাসছে।
গত কয়েক বছর একটানা খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটে। বৃষ্টির অভাবে লিচু শুকিয়ে যায়। অপরদিকে ফেটে গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ে। এতে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীদের তেমন একটা লাভ হয়নি।
গত কয়েক বছর লিচুর ফলন কম হলেও বাগান মালিক ও ক্রেতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু এবার আবহাওয়া লিচু চাষের অনুকূলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে বৃষ্টির অভাব থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শ মতে বাগানে সেচ ও পোকা দমন পদ্ধতি ব্যবহার করার কারণে লিচুতে কোন রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণের প্রভাব পড়েনি। ফলে লিচু হয়েছে খুব সুন্দর ও স্বাদে ভরপুর। যার কারণে লিচুর চাহিদা বেড়েছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ভিড় করছে স্থানীয় লিচু বাগানগুলোতে।
বাগান মালিক ও বাগান ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের ফলনে কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।
সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক মুকুল বিশ্বাস বলেন, এ বছর আবহাওয়া লিচু চাষের অনুকূলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারের প্রকৃতি যেন লিচু চাষের জন্যই। যখন বৃষ্টি হবার তখনই বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবার কোন লিচুতে তাপদাহে ফেটে নষ্ট হয়নি। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে বাগানে সেচ ও পোকা দমন পদ্ধতি ব্যবহার করে এবার যেন স্মরণকালের লিচু উৎপাদন হয়েছে।
লিচু ব্যবসায়ী জয়নাল হোসেন বলেন, দেশি জাতসহ এবার চায়না ও বোম্বে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। আগাম জাতের এসব লিচু আগাম বাজারজাত করা যাচ্ছে। ক্রেতারাও অনেক খুশি। প্রতিদিন ৭-৮ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করছেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন এবছর ১০ লাখ টাকার বাগান কিনেছেন। ৭ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন এখনও ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, “এবার তাদের পরামর্শে বাগান মালিকরা বাগান পরিচর্যা করেছেন। প্রকৃতিও ছিল লিচুচাষের পক্ষে। ফলে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে এ লিচুর চাহিদাও রয়েছে।
তিনি বলেন, “এবার উল্লেখিত লিচুর বাগান থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচুর বেচা-কেনার ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু অনুকূল পরিবেশের কারণে বেচাকেনার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।” বাসস
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন