দেশের মৎস্য ও প্রাণিজ খাদ্যের অন্যতম উপাদান সয়াবিন মিল বা খইলের দাম হু হু করে বাড়ছে। গত দু সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানি সুবিধা দেওয়ার কারণে আরও দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে মৎস্য ও প্রাণিজ খাতের উদ্যোক্তাদের উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে। টিকে থাকার চ্যালেঞ্জকে আরও কঠিন করে তুলবে। এই অবস্থায় রপ্তানি বন্ধে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ফিড মিল মালিকদের সংগঠন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব)।
ফিআবের চিঠিতে সংগঠনটি জানায়, মুরগির গোশত, দুধ ও ডিম উৎপাদনে ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ খরচ হয় খাদ্যের পেছনে। ফিড মিলে মৎস্য ও প্রাণী খাদ্য উৎপাদনে ৭০-৭৫ ভাগ ব্যয় হয় কাঁচামাল সংগ্রহে। ভুট্টা, চালের কুঁড়া, আটা, ময়দা, সরিষার খৈল, তেল, ভিটামিন ও মিনারেল ইত্যাদি ফিডের প্রধান কাঁচামাল। দেশের ফিড মিলগুলোতে ব্যবহৃত কাঁচামালের বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সয়াবিন মিল ও মৎস্য খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান। এর ব্যবহার ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সয়াবিন মিলের দাম গত এক বছরে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। পাইকারি বাজারে হাই প্রোটিন সয়াবিনের মিল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা, এক মাস আগেও যা বিক্রি হয়েছিল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানি অব্যাহত থাকলে এ মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সয়াবিন মিলের অভাবে অনেক ফিড মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ খাতের সংগঠন ফিড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি) সূত্রে জানা গেছে, সয়াবিন মিল পোলট্রি ও মৎস্য খাদ্যের প্রধান উপাদান। দেশে সয়াবিন মিলের চাহিদা বছরে ১৮-২০ লাখ মেট্রিক টন। ৫৫-৬০ ভাগ সয়াবিন স্থানীয়ভাবে এবং বাকি ৪০-৪৫ ভাগ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয়। বাকি অংশ পূরণ করা হয় ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে আমদানির মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সিটি গ্রুপ এবং মেঘনা গ্রুপ ভারতে সয়াবিন মিল পাঠাচ্ছে। এ বিষয়ে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিআব) সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতে দাম বেড়ে গেছে, তাই বাংলাদেশ থেকে নিচ্ছে। অথচ আমাদের দেশেও এটার সংকট রয়েছে। সয়াবিন সিডের বাই প্রডাক্ট ‘সয়াবিন মিল’ পোলট্রি, ফিশ ও ক্যাটল ফিডের অন্যতম উপাদান। রপ্তানির সুবিধা পেয়ে দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১২ টাকা। এখন বিদেশে পাঠানোর সুযোগ বন্ধ না হলে এর দাম আরও বাড়বে। ফলে এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজার হাজার খামারি টিকে থাকার নতুন চ্যালেঞ্জে পড়বেন।
জানা গেছে, উৎপাদনকারী দেশগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বে উৎপাদিত সয়াবিন তেলের মাত্র ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বা ১ কোটি ২৬ লাখ টন তেল আসে আন্তর্জাতিক বাজারে। সয়াবিন তেল আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে ভারত। এরপরই আছে আলজেরিয়া।
উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন সিড শুল্কমুক্ত (শূন্য) ভাবে আমদানি করে সয়াবিন তেল উৎপাদন করে এবং বাই প্রডাক্টস হিসেবে সয়াবিন মিল দেশীয় বাজারে বিক্রি করে; যার একমাত্র ব্যবহারকারী পোলট্রি, মৎস্য ও ক্যাটল ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ খামারিরা। বর্তমানের মিল ও ভুট্টাসহ শিল্পে ব্যবহৃত প্রতিটি কাঁচামালের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে ফিডের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে উৎপাদিত মাছ, মুরগি, দুধ, ডিম এবং গবাদি পশুর মূল্য নিম্ন পর্যায়ে থাকার কারণে খামারিরা চরম লোকসানের মধ্য দিয়ে খামার পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১২সেপ্টেম্বর ২০২১