যে পদ্ধতিতে মাসকলাই চাষে অধিক লাভবান হবেন

613

মাসকলাই একধরনের ডাল জাতীয় শস্য। সঠিক নিয়ম মেনে মাসকলাই চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যাবে। প্রধানত লিগুমিনসি গোত্রের গুল্ম প্রজাতি থেকেই এই শস্য পাওয়া যায়।ভারতীয় উপমহাদেশে এই ডাল জাতীয় শস্যটি সবথেকে বেশি প্রচলিত এবং এই অঞ্চলেই এর ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায়।

আসুন জেনে নিই যে পদ্ধতিতে মাসকলাই চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যাবে:

জমি ও মাটি নির্বাচন:বেলে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি, মাঝারি উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি মুগ আবাদের জন্য উপযোগী।

পরিচিতি:বারি মাস-১ (পান্ত):এ জাতের বীজের রং কালচে বাদামি। বীজের আকার বড়। হাজার বীজের ওজন ৩৮-৪৩ গ্রাম। জাতটি দিবস নিরপেক্ষ হওয়ার ফলে খরিফ-১ ও খরিফ-২ মৌসুমে চাষ করা যায়। ডাল রান্নার সময়কাল ৩০-৩৫ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৩%। জীবনকাল ৬৫-৭০ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৪-১.৫ টন। এ জাত হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মাস-২ (শরৎ):স্থানীয় জাতের মত লতানো হয় না। পত্রফলক মাঝারি সরু। পাকা ফলের রং কালচে, ফল খাড়া, ফলের গায়ে শুং আছে। বীজের রং কালচে। বীজের আকার স্থানীয় জাতের চেয়ে বেশ বড়। হাজার বীজের ওজন ৩২-৩৬ গ্রাম। ডাল রান্নার সময়কাল ৩০-৩৫ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%। জীবনকাল ৬৫-৭০ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৪-১.৬ টন। জাতটি দিবস নিরপেক্ষ এবং হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মাস-৩ (হেমন-):গাছের আকার মধ্যম। স্থানীয় জাতের মত লতানো হয় না। ফল পাকলে কালো হয়। শুটিতে ঘন শুং আছে। বীজের রং কালচে। বীজের আকার স্থানীয় জাতের চেয়ে বেশ বড়। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। ডাল রান্নার সময়কাল ৩০-৩৭ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%। জীবনকাল ৬৫-৭০ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫-১.৬ টন। এ জাত হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বপন:ছিটিয়ে এবং সারি করে বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে ছিটিয়ে বোনা যায়। প্রতি হেক্টরে ৩৫-৪০ কেজি বীজ দরকার হয়। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি দিতে হবে। এলাকা ভেদে বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে মধ্য-ফাল্গুন থেকে ৩০শে ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারির শেষ হতে মধ্য-মার্চ) এবং খরিফ-২ মৌসুমে ১লা ভাদ্র থেকে ১৫ই ভাদ্র (আগস্টের ১৫-৩১)। তবে মধ্য-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বপন করা যায়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ: সারের নাম সারের পরিমাণ কেজি/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০-৫০
টিএসপি ৮৫-৯৫
এমওপি ৩০-৪০
অণুজীব সার ৪-৫
শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুপারিশ মোতাবেক নির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইনোকুলাম সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়

রোগ ব্যবস্থাপনা:পাতার দাগ রোগ, পাউডারি মিলডিউ, হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ ও গুদামজাত ডালের পোকা এসব রোগ ব্যবস্থাপনায় কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।

পরিচর্যা:বপনের ২০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। বৃষ্টিপাতের ফলে যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ফসল সংগ্রহ:খরিফ-১ মৌসুমে মধ্য বৈশাখ (মে মাসের শেষ) এবং খরিফ-২ মৌসুমে মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর মাসের শেষ) মাসে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
যে পদ্ধতিতে মাসকলাই চাষে অধিক লাভবান হবেন শিরোনোমে লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১২সেপ্টেম্বর ২০২১