নওগাঁ সংবাদদাতা : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের মিরাট গ্রাম। এই গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় মৎস্যজীবীদের (জেলে) বসবাস। যেখানে বর্ষাকালে মনে হবে সমুদ্রের মধ্যে একটি দ্বীপ। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। খালে বিলে যখন পানি থাকে, তখন তারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। যখন পানি শুকিয়ে যায়, তখন অনেকটাই তারা বেকার হয়ে পড়েন। আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে তারা অনেকটাই বঞ্চিত। শিক্ষার দিক থেকে তারা পিছিয়ে। তারা গরিব ও অসহায়। দিন আনে দিন খায়।
মিরাট গ্রামের উত্তরপাড়া বিল মুনছুর নামে বিল অবস্থিত। আর এ বিলে সরকারি জমির চেক কেটে গত ২০-২৫ বছর থেকে পশ্চিম পাড়ার শতাধিক মৎস্যজীবী চাষাবাদ করে আসছেন। গত ২০১২ সালে চেক কাটলেও ২০১৩ সালের পর রানীনগর ভূমি অফিস থেকে চেক দেয়া বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু তারপর মৎস্যজীবীরা ওইসব জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। গত বছর থেকে গ্রামের উত্তরপাড়ার ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার আজিজুল হক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হানিফ ও আ.লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে ওই পাড়ার বাসিন্দারা তাদের গরু-ছাগল দিয়ে ফসল নষ্ট করে আসছেন বলে মৎস্যজীবীদের অভিযোগ।
এবছর তাদের নেতৃত্বে আবারও মৎস্যজীবীদের বোরো আবাদ গত ১০-১২ দিন ধরে গরু-ছাগল দিয়ে নষ্ট করা এবং কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছু ধান বেরিয়ে পড়েছে আবার কিছু ধানে থোর ধরেছে। আর মাস খানেক পর বোরো ফসল মৎস্যজীবীদের ঘরে ওঠার কথা। কিন্ত ওই প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে উত্তরপাড়ার বাসিন্দারা তাদের গরু-ছাগল দিয়ে প্রায় ৪০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট করেছে। রাতের আঁধারে আবার বাড়িতে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেকে তাদের ফসল রক্ষায় প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে জমির আইলে পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও রক্ষা হচ্ছে না।
গত ২ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে ফসল নষ্ট করার সংবাদ শুনে মৎস্যজীবী পাড়ার আলিম উদ্দিনের ছোট ছেলে আব্দুল করিম (২২) জমিতে ছুটে যান। গরু-ছাগল দিয়ে ফসল নষ্ট করার কারণ জানতে চাইলে জমিতে জিয়ারুল ইসলাম, এবাদুল হকসহ কয়েজন তাকে বেদম মারপিট করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আব্দুল করিমের বড় ভাই রাসেল সরকার বাদী হয়ে জিয়ারুল ইসলাম ও এবাদুল হকসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১২ বিরুদ্ধে রাণীনগর থানায় মামলা করেন। বৃহস্পতিবার রাতে জিয়ারুল ইসলাম ও এবাদুল হককে থানা পুলিশ আটক করে শুক্রবার নওগাঁ জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
মৎস্যজীবী মোজাহার আলী প্রামানিক বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। বিল শুকিয়ে গেলে মাছ শিকার না হওয়ায় জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টকর হয়ে উঠে। তাই সরকারি জমি চেক কেটে গত ২০-২৫ বছর ধরে আবাদ করছি। কিন্তু ১০-১২ দিন থেকে গরু-ছাগল দিয়ে প্রভাবশালীরা নষ্ট করছে। কিছুদিন পর ধান ঘরে উঠবে। সেই ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি।”
মৎস্যজীবী পাড়ার ইয়াকুব আলী, আব্দুস সামাদ, ইশারত হোসেন, মফেজ প্রামানিকসহ কয়েকজন বলেন, “ফসল রক্ষার্থে পাহারা দিচ্ছি। কিন্তু সব সময় জমিতে থাকা সম্ভব নয়। মেম্বার আজিজুল হক, হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে ওই পাড়ার লোকজনের গরু-ছাগল দিয়ে ফসল খাওয়ানো হচ্ছে। আবার রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে বাড়িতে রাখে।”
সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
মিরাট ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আজিজুল হক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “বিলটি সরকারি এবং উন্মুক্ত জলাশয়। তারা মাছ মেরে ভাত খাবে। বিলে আবার ধান লাগাবে কেন? মৎস্যজীবীরা অবৈধভাবে জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন। এমনকি গ্রাম থেকে মাঠে যাওয়ার রাস্তায়ও তারা ধান লাগিয়েছে। তারাই তাদের জমির ধান কেটেছে এবং গরু ছাগল দিয়ে নষ্ট করছে।”
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত আমাকে কিছু বলেনি।”
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, “এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সরকারি জায়গা দখল করে চাষাবাদ করার কোনো নিয়ম নাই। যদি চেক কেটে চাষাবাদ করে থাকে, তাহলে তাদের কাগজটি নিয়ে দেখা করতে বলেন।”
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন
