রাতের আঁধারে খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে একটি অসাধু চক্র

504

চিংড়ি মাছ
মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি থেকে: ঝালকাঠির রাজাপুরে খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের আঁধারে উপজেলার ছোট ছোট খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে তা আশপাশের বাজারে বিক্রি করছে অসাধু একটি চক্র। এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, উপজেলা সদরের বাঘরী এলাকার ধানসিঁড়ি নদী, রাজাপুর খালের সাউথপুর, আঙ্গারিয়া, সত্যনগর অংশে রাতে ভাটার সময় বিষ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। খালে বিষ দেওয়ার কারণে জীববৈচিত্র ধংস হচ্ছে। একই সঙ্গে বিষাক্ত মাছ খাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ।

অন্যদিকে চাড়াখালীর পোনা নদী ও পুটিয়াখালীর জাঙ্গালিয়া নদীতে বিষের পাশাপাশি নদীর সংকুচিত অংশে হুক দিয়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে মাছ ধরছে চক্রটি। উপজেলার ঘিগড়া গ্রামের সোবাহান তালুকদার নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি এ চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সূত্রে আরো জানা যায়, গভীর রাতে উপজেলার বামনকাঠি, কেওতা, ঘিগড়া ও পাড়গোপালপুর গ্রামের ছোট ছোট খালে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে খালের মাছসহ সব জলজ প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। পেশাদার জেলেদের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু যুবক এ কাজের সঙ্গে জড়িত।

রাজাপুর সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর ধরে খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে জলজ প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। একই সঙ্গে খালের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’

উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের চাড়াখালী গ্রামের কিসমত ফরাজি বলেন, ‘গভীর রাতে খালে বিষ দেওয়ার কারণে চক্রটিকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। একবার বিষ দিলে পরবর্তী সময়ে অন্তত এক সপ্তাহ এর প্রভাব থাকে। তাই প্রকৃতির জীববৈচিত্র ধংস করা চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর বাজারের মাছ বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আশপাশের গ্রাম থেকে আমরা মাছ সংগ্রহ করে বিক্রি করছি। শুনেছি খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরা হয়। তবে আমার কাছে থাকা মাছগুলো বিষ দিয়ে মারা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নই।’

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রমণী কুমার মিস্ত্রি ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে বলেন, ‘অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ও গ্যাস ট্যাবলেট পানিতে মিশিয়ে তা খালে প্রয়োগ করলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ফলে মাছ পানি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। বিশেষ করে গলদা চিংড়ি খালের তীরে চলে আসে। এ ছাড়া কিছু কিছু মাছের মৃত্যু হয়। অসাধু চক্র কোনো পরিশ্রম ছাড়াই মাছ সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করছে। লোকবল ও যানবাহন সংকটের ফলে এ বিষয়ে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছি না।’

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক মফিজুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘খালের ওই বিষাক্ত পানি পান করলে গবাদি পশু ও বন্য প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে। বিষাক্ত পানি দিয়ে গোসল করলে চর্মরোগসহ শ্বাসকষ্টও হতে পারে।’

রাজাপুর থানার ওসি শামসুল আরেফিন ফার্মসঅ্যান্ডফার্মাকে বলেন, ‘এসংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন