গোপালগঞ্জে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল তন্ময় ঠাকুর

409

ভাসমান-মাছ-চাষ

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ থেকে : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পদ্মবিলা এলাকায় মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেলে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে সফল হয়ে উঠেছেন তন্ময় ঠাকুর।

ইতোমধ্যে তিনি এটাকে আরো সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন মৎস্যজীবী ও শিক্ষিত বেকার যুবকরা।

উলপুর ইউনিয়নের পদ্মবিলা ও মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেলে এলাকায় মূল নদীর বাঁকে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আসছেন তন্ময় ঠাকুর। এ নদী দিয়ে মালবাহী নৌযান চলাচল করলেও মাছ চাষে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেলের পূর্ব পার্শে বড় বড় খাঁচায় করে চলছে মাছের চাষ।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর আগে এখানে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন তন্ময় ঠাকুর। তিনি এখন তার অধীনে বেশ কিছু লোক কাজ করছে।

পদ্মবিলা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল সিকদার বলেন, তন্ময় ঠাকুর ২০১৪ সাল থেকে উলপুর ইউনিয়নের পদ্মবিলা এলাকায় মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেলে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। তবে তার এই ধারণা তিনি মনের মধ্যে পুষতে থাকেন ১৯৯৮ সাল থেকে। মাছ চাষের প্রতি তন্ময় ঠাকুরের শখ ও আগ্রহ নিজের পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ এরপর তিনি ভাবলেন পুকুরের বিকল্প কীভাবে মাছ চাষ করা যায়। নিজের ভাবনা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে তিনি যান চাঁদপুরে। সেখান থেকে এই পদ্ধতির প্রথম ধারণা নিয়ে আসেন। এরপর ঢাকা যাওয়ার পথে দেখতে পান আড়িয়াল খাঁ নদীতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে। সেখান থেকে তিনি পরামর্শ নেন। এরপর জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে শুরু করেন।

তন্ময় ঠাকুরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রথমে বাঁশ ও জাল দিয়ে বড় বড় খাঁচা তৈরি করতে হয়। খাঁচা পানিতে ভাসিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় মজবুত প্লাস্টিকের ড্রামের। অনেকে আবার বেশি সময় স্থায়ী রাখার জন্য খাঁচা তৈরিতে লোহার পাইপও ব্যবহার করছেন। একেকটি খাঁচার দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রস্থ ১০ ফুট এবং গভীরতা সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট, একটি সারিতে ৭৫টি খাঁচা রয়েছে। একেকটি খাঁচা তৈরিতে প্রথম বছর ব্যয় হয় প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বছর থেকে জাল পরিবর্তন, বাঁশ পরিবর্তন এসব মিলে খাঁচা প্রতিখরচ হয় ২ হাজার টাকা। খাঁচা পদ্ধতিতে সেই সকল মাছ চাষ করা হয় না, যেগুলো সাধারণত লাফিয়ে যেতে পারে। যেমন, শোলমাছ, কার্প জাতীয় মাছ। তবে পাঙ্গাশ, সরপুঁটি, তেলাপিয়া, মাগুর, কালিবাউশ মাছগুলো বেশি চাষ হয়ে থাকে। নদীতে চাষ করায় এ মাছ বেশি সুস্বাধু হওয়ায় বাজারে এসব মাছে চাহিদাও ভালো।

তন্ময় ঠাকুর আরো বলেন, আমি সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ গ্রামের মাছ খাঁচায় দেই। প্রথম দিকে এই সাইজের মাছ ১৬০০পিস করে দিই। যখন মাছের ওজন ২৫০ গ্রাম হয় তখন প্রতি খাঁচায় ৮০০-১০০০ পিস মাছ। ৫০০ গ্রাম ওজন হলে প্রতিটি খাচাঁয় দেওয়া হয় ২০০ থেকে ২৫০ পিস। বছর শেষে প্রতিটি মাছের ওজন ১.৭ কেজি থেকে ২ কেজি হয়। প্রতিটি খাঁচা থেকে বছর শেষে গড়ে ৪০০ কেজি মাছ তোলা হয়। পুকুরে মাছ চাষ করলে প্রথম দিকে প্রতিটি মাছের ওজনের ২০% খাবার দেওয়া লাগে। কিন্তু নদীতে চাষ করলে প্রতিটি মাছের ওজনের ৬% থেকে ৭% খাবার লাগে। মাছের ওজন বাড়তে থাকলে খাবার কম লাগে। শেষ দিকে এসে ১% থেকেও কম লাগে। তবে এই বর্ষার মৌসুমে খাবার কম লাগে। মাছ ও তুলনামূলক কম বাড়ে কারণ এই মৌসুমে নদীতে পলি থাকে। মাছের ফুলকায় পলি লেগে থাকায় মাছে খাবার বেশি খেতে পারে না। কিন্তু পুকুরের মাছ এর সম্পূর্ণ বিপরীত পুকুরের মাছ বর্ষাও মৌসুমে বেশি বাড়ে। নদীতে চাষ করা মাছের খাবার কম লাগার আর একটি কারণ নদীর পানিতে জোয়ার ভাটা হয় এর সাথে ছোট ছোট খাবার (ছোট চিংড়িসহ অন্যান্য) খাঁচার মধ্যে আসে, সেগুলো মাছে খায়।

সানপুকুরিয়া এলাকার গৌতম রায় বলেন, আমরা এ বর্ষা মৌসুমে বিলে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার জন্য খাচাঁ তৈরি করছি। এ পদ্ধতিতে লাভবান হওয়া সম্ভব, তাছাড়া জমির প্রয়োজন হয় না। লাভজনক হওয়ায় মাদারীপুর বিল রুট ক্যানেল নদীসহ উন্মুক্ত জলাময় খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ বিস্তার লাভ করছে।

জেলা মৎষ কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি এ ধরনের মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করতে, যাতে করে বেকার সমস্য দূর করা যায়। তাছাড়াও সরকার থেকে মাছের পোনা ও খাবার কেনার জন্য লোনও দেওয়া হয় ।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন