লাউ ও কুমড়ো জাতীয় সবজীর কৃত্রিম পরাগায়ন:
কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারণ করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগ রেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে (যেটি স্ত্রী ফুলের পাপড়ির মাঝখানে থাকে)আস্তে করে ঘষে অথবা টোকা দিতে হয়।
কুমড়া উভয় ইমনোসিয়াস প্রকৃতির সবজি অর্থাৎ দুটি সবজিই একই গাছে পৃথকভাবে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায়। তাই উভয়ই পর-পরাগায়িত ফসল। এদের ফুল ধরার সময় হলে প্রথমে গাছে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ ফুল আসে। পাশাপাশি স্ত্রী ফুলও জন্মায়।
কুমড়া জাতীয় গাছে ফল ধরার জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক। পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে। পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে স্থানান্তরিত হতে হবে এবং ফল ধারণ করবে।যদি সঠিকভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাহলে ফুলটি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঝরে যাবে এবং কুমড়াটি বাড়তে থাকবে। পরাগায়ন না হলে কচি ফলটি শুকিয়ে যায়, পচে যায় এবং ঝরে পড়ে।
পরাগায়ন অসম্পূর্ণ থাকলে ফলের গঠন ভালো হয় না এতে সবজির বাজারমূল্য কমে যায়, ফল ধারণক্ষমতা কমে যায় ও ফলন কম হয়। ফলের সঠিক গঠনের জন্য স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে যথেষ্ট পরিমাণে পরাগরেণু পরতে হবে। পরাগায়নের জন্য একটি মাধ্যম বা পলিনেটর দরকার হয়।
কুমড়ার পরাগায়ন প্রধানত কীটপতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির দ্বারা সমপন্ন হয়। তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায়ন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য প্রতি একর জমিতে একটি করে মৌচাক বসিয়েও পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। আথবা চাষি নিজে পরাগায়ন করে দিলে আশাতীত ফলন আশা করতে পারে ।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাষি প্রান্তিক ও ছোট পর্যায়ের সে জন্য কৃত্রিম পরাগায়নই তাদের একমাত্র সমাধান। গবেষণায় দেখা গেছে, হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে লাউ ও মিষ্টিকুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।
লাউয়ের ফুল ঠিকমতো রোদ পেলে দুপুরের পর থেকে ফোটা শুরু হয়ে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত ফোটে। লাউয়ের কৃত্রিম পরাগায়ন ফুল ফোটার দিন বিকাল থেকে শুরু করে পর দিন সকাল পর্যন্ত করা যায়।তবে পর দিন সকালে পরাগায়ন করলে ফল কম ধরে কিন্তু ফুল ফোটার দিন দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কয়টা ফুলে পরাগায়ন করা হয় তার সব কটিতেই ফল ধরবে।
মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে এবং ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভালো ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টিকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯টার মধ্যে সমপন্ন করতে হবে।
একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৪-৫টি স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করা যায়। বীজ উৎপাদনের জন্য জমির সবগুলো গাছের মধ্যে সতেজতা, ফলন ক্ষমতা ও সুস্থতা দেখে কয়েকটি গাছ নির্বাচন করতে হয়। এসব গাছে নিয়ন্ত্রিত পরাগায়ন করতে হয়। অর্থাৎ একই জাতের পুরুষ ফুলের পরাগ রেণু দিয়ে একই জাতের গাছের স্ত্রী ফুলের অথবা একই গাছের পুরুষ ফুলের পরাগ রেণু দিয়ে একই গাছের স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করতে হয়।
পরাগায়নের সময় কোনোভাবেই যেন পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। দূর থেকে কোনো পুরুষ ফুল সংগ্রহ করতে হলে, তা পাপড়িসহ সংগ্রহ করতে হয় এবং পলিব্যাগে পরিবহন করতে হয়। দূর থেকে আনা বা কাছাকাছি থেকে সংগ্রহ করা পুরুষ ফুল দিয়ে দ্রম্নত কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ শেষ করতে হয়। পরাগায়নের সুবিধার্থে সুস্থ-সবল গাছ ও ফুল পেতে ক্ষেতে সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়।
কুমড়াজাতীয় ফলের ফলন বৃদ্ধিতে পরাগায়ন বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই, ক্ষেতের গাছে বেশিসংখ্যক ফল ধারণে সঠিক নিয়মে পরাগায়নের বিকল্প নেই। ফুল ফোটার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পরাগায়ন করতে পারলে ফল ধারণ অনেকটাই নিশ্চিত হয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০২সেপ্টেম্বর২০