শলুক পাতায় বাড়বে খাবারের ঘ্রাণ-স্বাদ

1940

বাংলাদেশের মানুষের কাছে শলুক খুব বেশি পরিচিত ফসল নয়। শলুক আম্বেলিফেরি গোত্রভুক্ত অপ্রধান বীজ জাতীয় সুগন্ধি মসলা। খাবারের ঘ্রাণ ও স্বাদ বাড়াতে এর জুড়ি নেই। কনফেকশনারি ও রন্ধনশালার দৈনন্দিন খাবার তৈরিতে এটি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতকালে শলুকের পাতা ধনিয়া পাতার মতোই ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। বাংলাদেশে এ ফসলটি এখনও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি। তবে অল্প পরিসরে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এর চাষ হচ্ছে। ব্যাপকভাবে চাষাবাদের উপযোগী করে শলুকের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড উদ্ভাবিত জাতটি চাষাবাদের জন্য অনুমোদনও দিয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান বারির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোছা. শামসুন্নাহার জানান, উদ্ভাবিত শলুক দেখতে অনেকটা ধনে পাতার মতো। এর পাতাই মূলত ব্যবহার করা হয়। শলুকের বীজের আকৃতি অনেকটা জিরার বীজের মতো হওয়াতে অনেকেই এটাকে জিরা ভেবে ভুল করেন।

তিনি বলেন, ছয়জন বিজ্ঞানী প্রায় সাত বছর গবেষণা করে এ জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ জাতের নাম দেওয়া হয়েছে বারি শলুক-১। এটা ঔষধি গুণসম্পন্ন। এতে বিভিন্ন উদ্বায়ী তেল যেমন অ্যনিথোল, লোনন, আম্বেলিফেরন, কারভোন আছে; ওষুধ শিল্পে ব্যবহূত হয়।

শামসুন্নাহার জানান, বারি শলুক-১ শীতকালীন জাত। এ জাতের জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন। গাছের উচ্চতা ১২০-১৩০ সেন্টিমিটার। গাছের পাতা ও কাণ্ডের রং সবুজ। প্রতিটি গাছে গড়ে ৭-৮টি প্রধান শাখা থাকে। প্রতিটি গাছের আম্বেল ৮০-৯০টি। প্রতি আম্বেলে আম্বেল লেট ১৪-১৬টি। প্রতি আম্বেল লেটে বীজের সংখ্যা ১১-১৩টি। প্রতি ১ হাজার বীজের ওজন প্রায় ৪.০-৪.২ গ্রাম। জাতটির বীজের ফলন হেক্টরপ্রতি ২.০-২.৪০ টন পর্যন্ত হয়। এ বছরই মসলা গবেষণা কেন্দ্র বগুড়ার বিভিন্ন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র থেকে উচ্চফলনশীল জাতটির বীজ কৃষকের কাছে সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।

গবেষক দলের প্রধান আরও জানান, উচ্চফলনশীল, অপেক্ষাকৃত কম রোগ ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব এবং পানির চাহিদা কম থাকায় জাতটি বরেন্দ্র, চরাঞ্চলসহ সারাদেশে চাষ করা সম্ভব। লালমনিরহাট, বগুড়া, মাগুরা, ফরিদপুর ও জয়দেবপুর মসলা গবেষণার বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপকেন্দ্রে পরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করার পর এ জাতের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ৪৪টি মসলা জাতীয় ফসল নিয়ে গবেষণা করা হয়। এ পর্যন্ত শলুকসহ ২০টি মসলা জাতীয় ফসলের ৪৫টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১২জুলাই২০