শেরপুরে সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান

1162

coxsbazar_39768

শেরপুর: রাবার গাছ, ফলদ, শাল, গজারী ও সেগুনবনের বিন্যাস খুব সহজেই প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবে নিশ্চিত। পাহাড়ি ঝর্ণার স্বচ্ছ জল হৃদয়ে তুলবে আনন্দের হিন্দোল। পাহাড়, বনানী, ঝর্ণা এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝেও কৃত্রিম সৌন্দর্যের অনেক সংযোজন রয়েছে এখানে। যার এক কথায় পরিচিতি ‘সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান’।

শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ে অবস্থিত ঝিনাইগাতীর সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাবার বাগানে ভ্রমণ করতে এসে পর্যটকদের বিপাকে পড়তে হয়। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহুলোক সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান দেখতে আসে। কিন্তু রাবার বাগানে আগমনকারীদের কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকায় আগত ব্যক্তিদের বিপাকে পড়তে হয়।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগানে রাবার উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাগানটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি গারো পাহাড় এলাকায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বাগানটিকে আরও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা সম্ভব। রাবার বাগানটি ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেষে বাংলাদেশের গারো পাহাড়ে অবস্থিত।

শেরপুরের বিশিষ্ট শিল্পপতি ইদ্রিস মিয়া ১৯৮৯ সালে প্রায় ৮০ একর জমি সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লীজ নিয়ে এ বাগান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বাগানে রাবার গাছের সংখ্যা ৯ হাজার।
বর্তমানে ৫ হাজার গাছ থেকে প্রতিদিন ৩শ’ কেজি করে রাবার (কষ) উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি কেজি রাবার (কষ) এর বর্তমান মূল্য ১শ’ ৩০ টাকা। প্রতিটি রাবার গাছ ২২ থেকে ৪০ পর্যন্ত বেড় এবং লম্বা ২০ থেকে ২৫ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। রাবার গাছের বয়স ৪০ বছর পার হলে আস্তে আস্তে রাবার উৎপাদন হ্রাস পাবে। তখন এসব গাছ বিক্রি করে দেওয়া হবে।এছাড়াও রাবার বাগানে কাঁঠালসহ ফলদ বৃক্ষ লাগানো আছে।

তারা জানান, সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গারো পাহাড় জুড়ে রাবার বাগান করা সম্ভব। পাশাপাশি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। এছাড়াও এই পাহাড়ের মাটি চা উৎপাদনের জন্য বিশেষ উপযোগী। বাগানে রোপণ করা রাবার গাছের কমপক্ষে ৭ বছর হলে রাবার উৎপাদন শুরু হয়। বিশেষ পদ্ধতিতে রাবার গাছ থেকে কষ সংগ্রহ করে কারখানায় মজুদ রাখা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য প্রেরণ করা হয়।
সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান থেকে রাবার ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার পর বিভিন্ন কোম্পানি তা বিক্রি করে থাকে। এই বাগান প্রতিষ্ঠার ফলে এলাকার বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাগানে ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার সহ মোট ২০ জন কর্মচারী আছে।
এছাড়া প্রতিদিন আরো বেশ কয়েক জন স্থানীয় শ্রমিক নিয়মিত ভাবে কাজ করে থাকে। রাবার উৎপাদন ছাড়াও এই বাগানের আশেপাশের অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম।
বাগানের সারিবদ্ধ গাছ, সবুজের সমারোহ, বন্যপ্রাণীর ছোটাছুটি, রাবার আহরণ, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি দেখার জন্য এখানে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।
বাগানের ম্যানেজার বিল্ল¬াল হোসেন জানান, রাবার চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। বেসরকারী ভাবে প্রতিষ্ঠিত এই বাগানের মতো আরও যদি জমি বরাদ্দ দেওয়া হয় তাহলে এই ব্যবসাকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, এই বাগানের চতুর্দিকে বনবিভাগের প্রচুর জমি রয়েছে। এসব জমি বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশ হস্তান্তর করলে এবং সরকারী সহায়তা পেলে অথবা বেসরকারী উদ্যোক্তাদেরকে জমি বরাদ্দ দিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করলে এই পাহাড়ি এলাকায় সফল রাবার বাগান ও পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এতে যেমন দেশের রাবারের চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে গ্রামীণ পাহাড়ি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ফলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

যেভাবে আপনি যাবেন:
এখানে আসার জন্য সড়কপথে যাতায়াত খুব সহজ। সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগান পর্যন্ত রয়েছে মসৃণ পিচঢালা সড়ক। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত সবচেয়ে সহজ। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়কপথে। ঢাকা থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় শেরপুরে আসা যায়।
শেরপুর শহর থেকে সন্ধ্যাকুড়া জিএস রাবার বাগানের দূরত্ব মাত্র ২৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রো অথবা প্রাইভেটকারে রাবার বাগানে যেতে পারেন। আর বাসে মহাখালী টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড স্পেশালে ৩০০ টাকায় ঝিনাইগাতীতে। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা, লেগুনা কিংবা রিকশায় একদিনের জন্য ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকায় সোজা সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান।

শেরপুর শহরে রাত যাপনের জন্য ১শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকায় গেস্ট হাউজ রুম ভাড়া পাওয়া যায়। শহরের রঘুনাথ বাজারে হোটেল সম্পদ, বুলবুল সড়কে কাকলী গেস্ট হাউজ, ফ্রিডম হোটেল, নিউমাকেটের হোটেল অবকাশ আধুনিক মানের থাকার হোটেল।

এছাড়া থাকতে পারেন অনুমতি সাপেক্ষে সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পল্লীবিদ্যুৎ অথবা কিংবা এটিআই’র রেস্ট হাউজে। ঝিনাইগাতীর ডাকবাংলোতেও থাকতে পারেন। তবে থাকা খাওয়ার জন্য শেরপুর শহরে চলে আসাই উত্তম। ভাল মানের খাবার পাবেন ঝিনাইগাতীর সাঈদ হোটেল এন্ড রেস্তোরায় এবং শেরপুর শহরের নিউ মার্কেটের হোটেল শাহজাহান, হোটেল আলীশান, আহার রেস্তোরা ও হোটেল। এসব হোটেলে অগ্রিম বুকিং ও অর্ডার সরবরাহ করা হয়। সূত্র: বাসস

ইঁদুর কাটে কাটুস কুটুস

কুমিল্লার হোমনায় তালবীজ রোপন কর্মসূচি

ফার্মসঅ্যা্ন্ডফার্মার২৪ডটকম/এম