উন্নত বিশ্বে মাটি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ বেশ জনপ্রিয়। মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মরুভূমিতে মাটি ছাড়া সবজি চাষ করে শত শত কোটি টাকা আয় হচ্ছে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও বিদেশে এভাবে সবজি চাষে বিনিয়োগ করছেন।
সবজি উৎপাদন ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন। উন্নত প্রযুক্তিতে উৎপাদিত এসব সবজির মান খুবই মান সম্মত। পোকামাকড় বা কীটনাশকমুক্ত।
বাংলাদেশে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগে তেমন একটা সবজি চাষ হয়নি। কিন্তু এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া দেশেই লেগেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে মাটি ছাড়া সবজি চাষ। বিশেষ করে ঢাকার দোহারে এ ধরনের একটি সবজি খামারের সাফল্য সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মিজানুর রহমান।
আধুনিক প্রযুত্তি কাজে লাগিয়ে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে শুধু পানি ব্যবহার করে উৎপাদন করা হচ্ছে নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ফল ও শাক-সবজি।
উদ্যোক্তারা বলছেন, প্লাস্টিকের তৈরি চারকোনা বাক্সে পানি ব্যবহার করে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে বাসার ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় ফসল উৎপাদন করা যায়। আর অল্প খরচে পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে উৎপাদন করা যাচ্ছে- লেটুস, কলমি শাক, বিলাতি ধনিয়া ও বাঁধাকফি। সবজির মধ্যে রয়েছে- টমেটো, বেগুন, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, ফুলকপি, শসা, খিরা ইত্যাদি। ফুলের মধ্যে রয়েছে- গাঁধা, গোলাপ, অর্কিড, অ্যান্ধরিয়াম, চন্দ্রমল্লিকা। এছাড়া ফলের মধ্যে স্ট্রবেরী চাষ সব চেয়ে লাভজনক হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তারা।
জানতে চাইলে কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বৃহস্পতিবার বলেন, এই কৃষি বিকাশে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। এই বাধা দূর করতে হলে সরকার নীতি তৈরি করে দিতে হবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এটি মাটিবিহীন ফসল। স্বাভাবিকভাবে গাছ মাটি থেকে পুষ্টি নেয়। আর এই ফসলে মাটি না থাকায় পানি থেকে পুষ্টি নেবে। ফলে প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ট্যাংক থেকে একটি নলের মাধ্যমে প্রতিটি গাছের গোড়ায় এক ফোঁটা করে পানি পড়ে। এক্ষেত্রে কন্ট্রোল রুম থেকে যখন পানি ছাড়া হয়, তখন পানিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংযুক্ত করতে হয়। ফলে প্রতিটি গাছ সমানভাবে পুষ্টি পায়। কিন্তু পুষ্টির জন্য যেসব উপাদান রয়েছে, বাংলাদেশে তা আমদানির প্রক্রিয়া সহজ নয়। ফলে সরকারকে এই বিষয়টির ওপর নজর দিয়ে আমদানির পলিসি তৈরি করতে হবে। এতে হাইড্রোপনিক কৃষি সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছরে আমরা বার বার বলে এসেছি, ব্যবসায়ীরা কৃষিতে বিনিয়োগ করুক। কিন্তু কোনো ব্যবসায়ী সেইভাবে এগিয়ে আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে যখন আধুনিক কৃষির কথা বলা হল, তখন তারা এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। কারণ এই ধরনের কৃষিতে বছরে তিন বার ফসল পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতিটি ফলের আকার এবং প্রতিটি গাছে উৎপাদন একই রকম। ফলে এটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। এ ধরনের ফসল চাষ গরিবের পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে বিনিয়োগ দরকার। এই বিনিয়োগকারীদের কাজ কৃষকের জন্য জমি কেনা। এজন্য কৃষককে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান করতে জমি বিক্রির শর্ত রহিত করে দেয়া উচিত। অর্থাৎ জমি বিক্রি নয়, লিজ দেবে এই ব্যবস্থা করতে হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন