রাকিব হোসেন, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা: ‘অপ্রতিরোধ্য দেশের অগ্রযাত্রা, ফলের পুষ্টি দেবে নতুন মাত্রা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে তিনদিনব্যাপী ফলদ বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা কৃষি অফিস চত্বরে আয়োজিত এই মেলায় দেশি-বিদেশি নানা ফলদ বৃক্ষ ও কৃষি উপকরণ নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। আর সবুজের টানে প্রথম দিন থেকেই মেলায় ছুটে যাচ্ছেন বৃক্ষপ্রেমী ও দর্শণার্থীরা। তবে মেলায় পছন্দের গাছ কিনতে নানা বয়সী শিক্ষার্থীদের উপচে ভীড় ছিলো লক্ষণীয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থেকে দেড়শতাধিক কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য প্রদর্শনীর জন্য মেলায় নিয়ে এসেছে। মেলায় সর্বমোট স্টলের সংখ্যা ১৩টি। স্টলগুলোতে টবে বা আকর্ষণীয় করে সাজানো নানা গাছের চারা। যার মধ্যে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা দুর্লভ ফলদ বৃক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুরে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মেলার স্টলগুলোতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া নানা বসয়ী শিক্ষার্থীদের ভীড়। পাশাপাশি ছোট-বড় নানা বয়সী মানুষ ফলের চারা কিনছেন। আবার অনেকে আসছেন তার আবাসস্থলের প্রিয় বারান্দা বা ছাদটিকে সবুজায়নের জন্য গাছ নিতে।
গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি অনার্স কলেজের দুই শিক্ষার্থী থাই পেয়ারা গাছ কিনছিলেন। তাদের একজন রিপা আক্তার বললেন, “এসেছিলাম ফুলের চারা কিনতে। কিন্তু মেলায় এসে ফলদ গাছ দেখে লোভ সামলানো গেল না। আমরা দুজন একে অপরকে গাছের চারা উপহার দিলাম। তবে বাইরের নার্সারির তুলনায় চারার দাম মেলার স্টলগুলোতে একটু বেশি মনে হচ্ছে।”
৪০ টাকা দিয়ে মেলা থেকে চালতা গাছের একটি চারা কিনেছেন প্রতিভা মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারদিন। সে জানায়, “ফলদ মেলা শুরু হয়েছে জেনেই স্কুলে টিফিনের ফাঁকে চারা কিনতে এসেছি। কিন্তু সাথে বেশি টাকা না থাকায় একটির বেশি চারা কিনতে পারিনি। আগামীকাল বাসা থেকে টাকা নিয়ে আবার আসবো মেলায় চারা কিনতে।”
অপরদিকে, উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্দিন বলেন, “বাসার আঙিনা ও ছাদকে সবুজ করতে ফলের গাছ নেয়ার জন্য মেলায় এসেছি। এখন বাজার থেকে কেনা ফলে ফরমালিন মেশানো থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমি আমার পরিবারকে সব সময় সুস্থ দেখতে চাই। এজন্য আমার বাসাটাকে সবুজ করে রাখতে চাই। তাছাড়া গাছ থেকে অক্সিজেনের পাশাপাশি টাটকা ফলটাও খেতে চাই।”
তিনদিনব্যাপী এ মেলার স্টলগুলোতে কাঁচামরিচ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির আম, আমলকী, লটকন, জামরুল, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ পাওয়া যাচ্ছে।
তবে মেলায় ক্রেতাদের বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বারোমাসি কলমা ও মাল্টাগাছের দিকে। মেলার গ্রিন নার্সারিতে ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বারোমাসি কমলা গাছ। সুমি নার্সারির স্টলে প্রতিটি মাল্টা গাছের চারা ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানালেন, অল্প লাভেই তারা গাছ বিক্রি করছেন। যেসব ক্রেতা বেশিসংখ্যক গাছের চারা কিনতে চান, তারা পছন্দের চারা দেখে ফরমায়েশ দিলে নার্সারি থেকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও আছে।
গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, “মেলা থেকে অন্যান্য ক্রেতাদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও গাছের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে বিষয়টা অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে এই মেলার উদ্দেশ্য শুধু গাছ কেনা নয়, গাছ চেনা ও চেনানোর জন্য অন্তত একবার হলেও সবার ফলদ বৃক্ষমেলা ঘুরে যাওয়া উচিত। আর স্টলগুলোতে যেনো গাছের চারার দাম সহনীয় দামে রাখা হয় সেজন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন