সিলেটে আমনের বাম্পার ফলনের আশা

409

আমন-ধান

সিলেট : এ অঞ্চলে চলতি মৌসুমে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবার ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন সম্ভব হবে।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী ৩ লাখ ১০ হাজার ৭২১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ৭৩ হাজার ২৮৪ হেক্টর।

কৃষি অফিস আরও জানায়, আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এ বছর ৪ লাখ ১৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে, স্থানীয় জাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। উফশী জাতের ধান আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ হাজার ৬৭১ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৫০১ একর কম জমিতে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধান চাষ হওয়ায় এবার আমনের বাম্পার ফলন আশা করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে যারা দু’বছর আগে আগাম বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর এটা সুযোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খরিপ-২ মৌসুমে সিলেট বিভাগের চার জেলায় যথাক্রমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সিলেটে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর, মৌলভীবাজার জেলায় ৯৬ হাজার ২৪৬ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৭৫ হাজার ২১০ হেক্টর, সুনামগঞ্জে ৭৪ হাজার ২১৪ হেক্টর।

হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলায় এ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি জমিতে আমন চাষ হয়েছে। স্থানীয় জাত ১৭ হাজার ৪৫০ এবং উফশী ৬৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর নিয়ে এবার এ অঞ্চলে ৮২ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হাজার ৪শ’ ১ একর বেশি।

সিলেট জেলায় আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী চাষ হয়েছে ৯৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। সিলেট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৯৫ হেক্টর বেশি জমিতে এবার চাষ হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলায় এবার চাষ হয়েছে ৯৭ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমি। এর মধ্যে উফশী ৯৬ হাজার ৭৪৭ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ১ হাজার ২৩৮ হেক্টর। এই জেলায় ১ হাজার ৭৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। হবিগঞ্জে ২ হাজার ৯৩৫ হেক্টর বেশি জমি আবাদ হয়েছে। এ জেলায় এবার ৭৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপন হয়েছে। এর মধ্যে উফশী ৭৪ হাজার ৮৯৫ হেক্টর এবং স্থানীয় ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর।

আবাদ বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি চাল উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করছেন সিলেটে কৃষি কর্মকর্তারা। পোঁকাধরা থেকে মুক্ত থাকলে এবং প্রাকৃতিক কোন ধরনের দুর্যোগ দেখা না দিলে তারচেয়েও বেশি কিছু আশা করছেন তারা।
এবার চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে উফশী ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় জাতের চাল ১ লাখ ৯ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন। মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সিলেট জেলায় উৎপাদন হবে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৪ মেট্রিক টন, হবিগঞ্জে ২ লাখ ৫ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, সুনামগঞ্জে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন চাল।

সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা ফজলে মনজুর ভুইয়া জানান, খরিপ-২ মৌসুমে যখন ধান রোপন করার সময়ে কোন কোন বছর বন্যা হয়। ফলে একবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কৃষকরা পুনরায় জমিতে ফসল লাগাতে চান না।
তিনি বলেন, এবার বন্যা না হওয়ায় আবাদও বেশি হয়েছে। বৃষ্টিও হয়েছে যথাসময়ে। কোনধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে যথাসময়ে কৃষকরা আনন্দ-উৎসবের সাথে ধান মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারবেন।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার কৃষক রায়হান আহমদ জানান, তাদের পরিবার কৃষিনির্ভর। তারা মূলত রোরো চাষ করেন। গত দু’বছর আগে বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এবার আমন চাষ করেছেন।

সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কানাইঘাট উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের প্রান্তিক চাষি এবাদুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে আমরা সব আশা হারিয়ে হতাশ হই। সরকারের সহযোগিতা না পেলে গত বছরের বন্যার পর আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হতো না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আলতাবুর রহমান বলেন, গত দু’বছর আগে সিলেটের হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা ও পরবর্তীতে কয়েক দফা বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিলো। তবে, গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে, সার ও বীজ দিয়েছে। ফলে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর উৎসাহ ও সুযোগ পাচ্ছেন। দিন দিন কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তা আলতাবুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, কৃষকরা ঠিকমতো ধান ঘরে তুলতে পারলে এবার ১০ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল উৎপাদন সম্ভব হবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানান তিনি।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন