সীতাকুন্ডে আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি

980

সবজি

সীতাকুন্ডে আগাম শীতকালীন সবজির বিক্রি শুরু হয়েছে। শীতকালীন সবজি হিসেবে খ্যাত শিমসহ উপজেলার প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজির চাষাবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন শাকসবজি। শীতের আগাম উৎপাদিত সবজি এখনই হাটবাজারে পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি বর্ষা ও শরতের সবজিও দেদার বিক্রি হচ্ছে। সীতাকুন্ডে সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চলেও সবজি চাষ দিন দিন বাড়ছে।

এ কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সবজির উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকাররা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে পাইকারি হিসাবে সবজি কিনে ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহনে নিজের এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় কৃষি জমি রয়েছে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর। এতে প্রতি বছর সবজি চাষ হয় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু বর্তমানে উপজেলায় সবজি চাষ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার ১ হাজার হেক্টর শাকসবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিমের আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। যেখানে গত বছর শিমের আবাদ হয়েছে ২ হাজার হেক্টরে।

অন্য সবজির চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। শাকসবজি চাষের জন্য সীতাকুন্ড উপযুক্ত স্থান হওয়ায় এখানে শিম, বরবটি, লাউ, কুমড়া, লাল শাক, মুলা, কচু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ হরেক জাতের শাকসবজির চাষ করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ছোটদারোগা হাট, বড় দরোগাহাট, বাড়বকুন্ড, কুমিরা, মুরাদপুর, ভাটিয়ারি ও শিবপুর এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সবজির উৎপাদন হচ্ছে। আগের তুলনায় এবার শাকসবজির চাষাবাদ দ্বিগুণ হয়েছে। আবাদি জমির পাশাপাশি বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে শাকসবজির চাষ হচ্ছে। সীতাকুন্ড উপজেলার কৃষি জমি চাষের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় এই অঞ্চলে দিন দিন শাকসবজির চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার শুকলাল হাটে দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শত শত কৃষক তাদের উৎপাদিত শাকসবজি নিয়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য এসেছেন। কেউ এনেছেন লাউ, কেউ বরবটি, শিম, করলা, লাল শাক, মুলা শাক। বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শাকসবজি কেনার জন্য বাজারে ভিড় করছেন পাইকাররা। সীতাকুন্ডের সবজি গুণে মানে ভালো হওয়ায় চট্টগ্রাম তো বটেই, সারাদেশে এই সবজির চাহিদা রয়েছে।

পাইকারি হাটে মৌসুমের সময় মুলাশাক বিক্রি হয় প্রতি আঁটি ১০-১২ টাকায়- যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। এখন তিত করলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০-৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-২০ টাকা কম। ৪৫ টাকার পোটল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, ৫০ টাকার ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। ৭০ টাকার টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে থেকে সীতাকুন্ডের পাইকারি বাজারে শাকসবজির দাম কমতে শুরু করেছে।

কিন্তু খুচরা বাজারে গিয়ে সবজির বাজারদরে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একেক বাজারে শাকসবজির একেক দাম। খুচরা বাজারে দোকানিরা বিক্রি করছেন, মুলা শাকের আঁটি ২৫-৩০ টাকায়, এক কেজি করলা ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা এবং মুলা, বরবটি ও বেগুন ৬০-৭০ টাকা- যা পাইকারি মূল্য থেকে অনেক বেশি। এতে করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে শাকসবজির দাম।

ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, পাইকারিতে সবজির দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ। স্বল্প আয়ের মানুষদের কী হবে বুঝতেই পারছি না। এক সময় চাষিদের উৎপাদিত বিভিন্ন রকম সবজি হাটে বিক্রি করতে না পারলে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে পড়ত। এই উপজেলায় সবজি উৎপাদন হয় অনেক বেশি। তাই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা পাইকাররা এই এলাকার হাটবাজারগুলো থেকে সবজি ক্রয় করার জন্য ভিড় জমান। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই গর্বের। আমাদের গ্রামের সবজি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাজারজাত হচ্ছে- কথাটা শুনতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু নিজের গ্রামের সবজি আমাদের নিজেদেরই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, শীতের মৌসুম আসতে এখনও অনেক সময় রয়েছে। তবে চাষিদের উৎপাদিত শীতকালীন সবজি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এবার সীতাকুন্ডে সবজি চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

১০-১৫ দিনের মধ্যে উপজেলার প্রতি হাটে শাকসবজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ