মাথার ওপর প্রখর রোদ। রোদ থেকে বাঁচতে কেউ গামছা কিংবা কেউ মাথাল মাথায় কাটছেন ধান। মাথার ঘাম নাক বেয়ে টপটপ করে ঝরছে কৃষকের, তারপরও মুখে ঝলমলে হাসি।
ধানের বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক। একই সঙ্গে আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বস্তিতে কাটা যাচ্ছে ধান। কয়েক বছর ধরে এমন সোনার বৈশাখ পাননি সুনামগঞ্জের কৃষক। তাই হাওরে এখন ধান কাটার ধুম চলছে। অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে হাওরে ধান কাটতে ব্যস্ত দিন পার করছেন তারা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ঝাউয়ার হাওরের ধান কাটার শ্রমিক আমির উদ্দিন বলেন, ১০-১২ দিন ধরে আমরা ২৫ জনের একটি দল হাওরে ধান কাটছি। হাওরে এত ফসল দেখে ধান কাটতেও ভালো লাগে। তাই রোদের মধ্যে ধান কেটে স্বস্তি পাচ্ছি। যতদিন হাওরে ধান আছে আমরাও আছি।
আরেক শ্রমিক রানা মিয়া বলেন, ২০১৭ সাল থেকে হাওরে ধান কাটি। প্রত্যেক বছর মেঘ-বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে কষ্ট হয় আমাদের। বৃষ্টির মধ্যে কোমরপানিতে নেমে ধান কেটেছি। এবারের মতো ভালো বৈশাখ কোনো বছর পাইনি। এ বছর ধান কাটায় কোনো বৃষ্টি নেই, অনেক রোদ। ফলনও ভালো। তাই গরমে ঘাম ঝরলেও ধান কাটতে ভালো লাগছে।
প্রত্যেক বছর পাহাড়ি ঢলের কারণে আগাম বন্যার আতঙ্ক নিয়ে হাওরে ধান কাটতে নামতেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। ধান পাকার পর তা কাটতে বাধা হয়ে দাঁড়াত ঝড়-বৃষ্টি আর বজ্রপাত। এ বছর মাঝে দু-এক দিন ছাড়া পুরো সময়জুড়ে ছিল ফকফকে রোদ। ধান কাটার পর
মাড়াই করে সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে নির্বিঘেœ গোলায় উঠছে কৃষকের সোনালি ধান। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরে ৮০ শতাংশ ধান কাটা শেষ বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার জীবনেও আমি এ রকম ভালো ফসল হতে দেখিনি। আল্লাহ এ বছর আমাদের খুবই ভালো ফলন দিয়েছেন। এমন সোনার ফসল কাটতেও শান্তি লাগে।
বিশ্বম্ভপুর উপজেলার কৃষক সুহেল মিয়া বলেন, এবার আমাদের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি নেই, রৌদ্রময় দিন। ধান কাটায় কোনো ঝামেলা নেই। আমরা আনন্দের সঙ্গে ফসল ঘরে তুলছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এ বছর নির্বিঘেœ কৃষক ধান কাটছেন। শুধু কাটা নয়, সঙ্গে সঙ্গে ধান শুকিয়ে ঘরেও তুলতে পারছেন। এরই মধ্যে পুরো জেলায় ৭৪ শতাংশ ধান কর্তন হয়ে গেছে। আবহাওয়ার খারাপ কোনো পূর্বাভাস এখনও পাইনি। শুধু মাঝে একদিন ঝড়ে বজ্রাঘাতে আমার ছয় কৃষক মারা গেছেন। এভাবে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আর কয়েক দিনের মধ্যেই শতভাগ ধান ঘরে উঠবে।