জমি চাষ ও সেচে এখন ৯০ শতাংশের বেশি যান্ত্রিকীকরণের ছোঁয়া লেগেছে। এ জন্য এ খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় ভর্তুকির চিন্তা রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বপন ও কর্তনের ক্ষেত্রে এ হার ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ শেখ মো. নাজিম উদ্দিন।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সবর্ত্র। প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের দেশের কৃষিখাতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন আর মানুষ নয় ধানের চারা জমিতে বপন করবে যন্ত্র।
যন্ত্রের পেছনের অংশ ‘ট্রে’তে থাকে ধানের চারা। যন্ত্র চালু হলে সেটি সামনের দিকে এগুতে থাকে, পেছনে সারিবদ্ধভাবে রোপণ হতে থাকে চারা—সেটাও আবার মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই। এভাবে এক ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগানো হয়ে গেল।
গত ২৮ জানুয়ারী মঙ্গলবার দিনাজপুরের বিরল উপজেলার চকেরহাট এলাকায় এভাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়। এ উপলক্ষে সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপণ দেখতে কয়েক শ মানুষ ভিড় করেন জমির পাশে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বেলা ১১টার দিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চারা রোপণের ওই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এগ্রিপ্লাস লিমিটেড ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের এ কাজে সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে কৃষক ও গ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কৃষকদের যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। বর্তমানে কৃষি আবাদ করতে যে শ্রম যায়, তাতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কৃষিকে লাভজনক করতে হলে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে জমির আল। এ জন্য সমবায় ভিত্তিতে কৃষকদের জমির আল তুলে দিয়ে চাষাবাদ করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’
কর্মসূচির আয়োজকেরা জানান, সাধারণ পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি ধানের চারা উৎপাদন ও রোপণ খরচ বাবদ অনেক খরচ হয়। এর মধ্যে বীজ বাবদ ৩০০, বীজের প্রক্রিয়াকরণে ৪০০, সার, সেচ ও কীটনাশক বাবদ ৪০০, চারা উত্তোলন ও রোপণ খরচ ১ হাজার ৬০০ এবং পরিবহন বাবদ ১০০ টাকাসহ মোট ২ হাজার ৮০০ টাকা দরকার পড়ে। সেখানে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও রোপণের ক্ষেত্রে বীজ বাবদ ১৮০, বীজের প্রক্রিয়াকরণে ৪০০, সার, সেচ ও কীটনাশক বাবদ ৪০০, চারা উত্তোলন ও রোপণ খরচ ১৫০ এবং জ্বালানি ৭০ টাকাসহ ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়।
চকেরহাট এলাকায় বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষি মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘এলাকার অনেকের জমি ইজারা নিয়ে প্রায় দেড় শ একর জমিতে ধানের চাষ করছি। প্রতিবছর শ্রমিকের মাধ্যমে চারা রোপণ করতাম। এবার এগ্রিপ্লাস লিমিটেড ও বিএডিসির সহযোগিতায় যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করছি। সাধারণভাবে চারা লাগানোর সময় গোড়া ভেঙে যায়। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করতে গিয়ে, দেখি কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। এতে সময় ও অর্থ—দুটোই কম লাগছে।’
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৯জানু২০২০