১ হাজার লেয়ার মুরগি পালন ও ডিমের লাভ-খরচের হিসাব

721

বাংলাদেশে মুরগির খামার বেশ জনপ্রিয় কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দফায় দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি খামারিদের নাজেহাল করে তুলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ৫ বার বাড়ানো হয়েছে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম। সেই তুলনায় বাড়েনি ডিমের দাম। ১ হাজার লেয়ার মুরগি পালন ও ডিমের লাভ-খরচের হিসাব অনেকেই জানেন না। আসুন জেনে নিই:-

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ বরিশাল বিভাগীয় শাখার সভপতি আব্দুর রহিম গাজী এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। ব্রয়লার, সোনালী ও লেয়ার মুরগির ফিডের দাম কমানোর পাশাপাশি ডিমের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে করেছেন সংবাদ সম্মেলন।

পড়তে পারেন: ডিম মুরগির দাম বাড়ার আসল কারণ!

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের নিবন্ধিত ২৭০টি ফিড মিল তাদের উৎপাদিত খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় ১ হাজার লেয়ার মুরগি পালনে লাভ-খরচের হিসাব কষেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বিপিকেআরজেপি)।

হিসাব অনুযায়ী:

১০০০ (এক হাজার) লেয়ার (ডিম পাড়া মুরগী) মুরগী ডিম পাড়া পর্যন্ত লালন পালন করতে মোট খরচের পরিমান নিম্নে দেওয়া হল ।

১. বাচ্চার খরচ: ১০০০ পিস বাচ্চার ক্রয় মূল্য বর্তমান বাজারে ৩৫ টাকা পিস হিসেবে ৩৫*১০০০=৩৫০০০ (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা।

২. খাদ্যের খরচ: একটি লেয়ার মুরগী ডিম পাড়া পর্যন্ত নিতে ২৪ সপ্তাহ বা ৫.৫ মাস সময় লাগে। উক্ত সময়ে প্রতিটি মুরগী প্রায় ৮ কেজি খাদ্য গ্রহণ করে। অতএব ১০০০ (এক হাজার) মুরগী সর্বমোট খাদ্য গ্রহণ ৮ x ১০০০= ৮০০০ কেজি। ৮ হাজার কেজি খাদ্যে হয় ১৬০ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা)। কমবেশি হিসেবে লেয়ার স্টার্টার ৩০০০ কেজিতে হয় ৬০ বস্তা। বাচ্চা পুলেট হওয়ার পর লাগে লেয়ার গ্রোয়ার ৫০০০ কেজি ১০০ বস্তা। বর্তমানে খাদ্যের বস্তা ২৯০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

পড়তে পারেন: ডিম-মুরগির দাম শীঘ্রই বাড়ার সম্ভাবনা

উক্ত খাদ্যের পরিরবহন ব্যায় = 2,60,000/ = 8000/

৩। ১০০০ (এক হাজার) মুরগীর নিম্নোক্ত ভ্যকসিন সমূহ প্রয়োগ করতে হয় যার মূল্য নিম্নরূপ

ক) MA 5 / Clone 30 (রানীক্ষেত+ব্রঙ্কাইটিস) ২টি@ ৬৬২/ =১৩২০/

খ) Clone 30 (রানীক্ষেত) ৩টি@ ৫২৬/ =১৫৭৮/

গ) G+ND কিন্তু ভেকসিন ১টি @ ৬,৩২৫/

ঘ) Gumboro (গামবোরো) ২ টি @ ১১৩৭ =৬,৩২৫/ =2298/

ঙ) Pox (পক্স) ১ টি @ ১৮২৬ =১৮২৬/

চ) Corvac (করাইজা) ২টি@ ৫১৬৮

ছ) Micoplasma (মাইকোপ্লাজমা) ২ টি@ ১৩,৩০০ = ১০,৩৩৬/ =২৬,৬০০/

জ) Birdflu (বার্ডফু) ২ টি@ ৪৯১০

ঝ) Cholera (কলেরা) ২টি@ ৪০০০ =৯৮২০/

ঞ) ILT ২ টি @ 1230 =৮০০০/ =2460/

ট) IB+ND+EDS ১ টি @ ৭৭২৩ =9920/

পড়তে পারেন: ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করে কারা, কেন ধরা খায় খামারিরা?

৪। উক্ত ৫.৫ মাসে বিভিন্ন প্রকার ঔষধ, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি খরচ

= 24,000/

= 44,000/

৫। শ্রমিক দক্ষ ১ জন মাসিক ১২,০০০/- × ৫.৫ মাস

৬। বিদ্যুৎ খরচ মাসিক ৩,০০০/- টাকা হিসাবে ৫.৫ মাসে

= ১৬,৫০০/

৭। যন্ত্রপাতি, খাচা, ঘর, মালামাল ইত্যাদির অবচয় খরচ

=20,000/ = ৭,০১,৭৬৫/

পরবর্তীতে ঐ মুরগীগুলো টানা ৮০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ডিম দিবে। অর্থাৎ (৮০-২৪) = ৫৬ সপ্তাহ × ৭ = ৩৯২ দিন বা ৪০০ দিন গড়ে ৮৫% হিসাবে দৈনিক ৮৫০ টি ডিম দিবে।

অতএব ৪০০ দিনে মোট ৮৫০ x 800 = ৩,৪০,০০০/- পিচ ডিম পাওয়া যাবে। এরপর মুরগীগুলোর বডি বিক্রয় করে দিতে হবে।

সর্বশেষ মুরগী বিক্রির সময় ১০% মৃত্যুহার বাদে মোট (১০০০-১০০) = ৯০০ মুরগী থাকবে যার ওজন @

১.৯০ কেজি হিসাবে ৯০০x১০= ১৭১০ কেজি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি ২৩০/- টাকা যাহা বাড়তে/কমতে পারে। ১৭১০×২৩০=৩,৯৩,৩০০/- টাকা। ডিম পারার ৪০০ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন ঔষধ ভিটামিন মিনারেল ইত্যাদি মাসিক খরচ= ৫০০০/- টাকা।

শ্রমিকের মজুরী মাসিক = ১২,০০০/- টাকা।

বিদ্যুৎ খরচ মাসিক = ৩,০০০/- টাকা।

খাচার অবচয় মাসিক =৫,০০০/-টাকা।

ঘরের অবচয় মাসিক =৫,০০০/-টাকা। প্রাথমিক বিনিয়োগ ৭,০১,৭৬৫/- টাকা হইতে বডি বিক্রির মূল্য ৩,৯৩,৩০০/- টাকা বাদ দিলে মুরগীর অবচয় দাড়ায় ৩,০৮,৪৬৫/-টাকা।

উপরোক্ত বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় নিম্নরুপঃ

দৈনিক একটি মুরগী ১২০গ্রাম খাবার খায় এবং ৮৫% ডিম পাওয়া যায়। ১০০০ মুরগী দৈনিক ১২০ কেজি খাবার খায়। যাহা ৮৫০টি ডিমের উপর বর্তায়। অর্থাৎ প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খাদ্য খরচ = ১২০ =৭.৭০ টাকা। ৮৫০=১৪০ গ্রাম। যার মূল্য ৫৫ টাকা কেজি দরে। = ০.১৪০×৫৫ ঔষধ মাসিক ৫০০০/- হিসাবে দৈনিক ১টি ডিমের খরচ = ০.২০ টাকা = ০.৪৭ টাকা।

শ্রমিক মাসিক ১২,০০০/- টাকা হিসাবে দৈনিক ১টি ডিমের খরচ = ০.১২ টাকা = ০.২০ টাকা।

বিদ্যুৎ খরচ মাসিক ৩,০০০/- টাকা হিসাবে দৈনিক ১টি ডিমের খরচ খাচার অবচয় মাসিক ৫,০০০/- টাকা হিসাবে দৈনিক ১টি ডিমের খরচ

ঘরের অবচয় মাসিক ৫,০০০/- টাকা হিসাবে দৈনিক ১টি ডিমের খরচ মুরগীর অবচয় – প্রাথমিক বিনিয়োগ = ৭,০১,৭৬৫/- টাকা হইতে মুরগীর বডি বিক্রি = ০.২০ টাকা।ম মোট ৩,৯৩,৩০০/- বাদ দিলে দাড়ায় (৭,০১,৭৬৫-৩,৯৩,৩০০) = ৩,০৮,৪৬৫/- টাকা।

যাহা মোট উৎপাদিত ডিমের উপর বর্তায়। যাহাতে প্রতিটি ডিমের খরচ = (৩,০৮,৪৬৫ 3,80,000 ) = ০.৯০ টাকা। অর্থাৎ বর্তমান একটি ডিমের খরচ = ৯.৭৯ টাকা

এই সভাপতি বলেন, কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর ডিমের উৎপাদন খরচ অনেক কম। কারণ বাচ্চা তাদের নিজস্ব হ্যাচারীতে উৎপাদন করে, খাদ্যের সমস্ত কাঁচামাল তারা বৃহৎ আকারে আমদানী করে এবং নিজস্ব ফিড মিলে খাদ্য উৎপাদন করে কর্মাশিয়াল ফার্মে ব্যবহার করে।

তাই তাদের উৎপাদিত পন্যের মূল্যের সাথে প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদিত পন্যের মূল্যের অনেক পার্থক্য থাকে। তাই প্রান্তিক খামারীরা তাদের কাছে অসহায়। একটি উদাহরন দিতে চাই, একটি কোম্পানী তাদের প্রস্তুতকৃত খাদ্য ভারতে বিক্রয় করে ১৬০০/- টাকা প্রতি বস্তা, পাকিস্থানে ১৫০০/- টাকা প্রতি বস্তা আর বাংলাদেশে সেই একই খাদ্য বিক্রী করে ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকা।

কোম্পানীগুলো যখন বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়ায় তখন সবাই একসাথে বাড়ায়। সেখানে কারো কোন তদারকি নেই আর থাকলেও তারা তার কোন তোয়াক্কা করে না।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২