এক ইঞ্চি জমি যেন পতিত না থাকে প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা পরিপালনে বসতবাড়িতে সবজি আবাদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর আওতায় প্রতিটি গ্রামের কয়েকটি পরিবার বা খানাকে সবজি উৎপাদনের মডেল বসতি তৈরি করে দেয়া হবে।
আগ্রহীদের বীজ সহায়তা থেকে শুরু করে সার এমনকি বেড়া তৈরি করে সহায়তা দেয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মানুষকে সবজি আবাদে উৎসাহিত করতে দেশের প্রতিটি বসতবাড়িকে সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এর আওতায় বসতবাড়িতে সবজি আবাদে প্রয়োজনীয় বীজ, সার ছাড়াও বেড়া তৈরিতে সহায়তা করা হবে। সরাসরি নগদ সহায়তার পরিবর্তে উপকরণ ও বেড়া তৈরি করে দেয়া হবে। তবে এ পরিকল্পনা এখন কতগুলো বসতবাড়িতে সম্প্রসারণ হবে, সেটি নির্ধারণ করা হয়নি। মূলত গ্রামে যে দুই কোটি বসতবাড়ি রয়েছে, সেখানকার সবগুলোতেই পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এ পরিকল্পনার আওতায় বৈশাখ মাসে বিশেষ করে মধ্য এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেশকিছু সবজি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করা সম্ভব। লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতা পেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ ও ঢেঁড়স বীজ বপনের উত্তম সময় এটি। এর সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করা যেতে পারে। এছাড়া মিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করা যেতে পারে।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান গতকাল সাংবাদিকদের জানান, বসতবাড়িতে সবজি আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি গ্রামে ১০ থেকে ১৫টি পরিবারকে সবজি বেড বা উৎপাদন পদ্ধতির মডেল দেখানো হবে। এসব সবজি নিরাপদ উপায়ে উৎপাদিত হবে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিপণন উপযোগী হলে সেখানে সহযোগিতা করা হবে। আগামী মৌসুমগুলোতে যাতে সবজির উৎপাদনে কোনো ধরনের ঘাটতি না হয়, সেজন্যই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করতেই এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ কৃষি জরিপের তথ্যমতে, দেশে সাধারণ খানা আছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ। এর মধ্যে গ্রামে বসবাস করছে ২ কোটি ৯৬ লাখ। নিজস্ব কোনো জমি নেই এবং অন্যের জমি বর্গা নিয়ে থাকে এমন খানার সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ। বাকি প্রায় দুই কোটি কৃষককে বসতবাড়িতে সবজি আবাদ করানো সম্ভব।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজি মিলে ৮ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব জমিতে মোট ১ কোটি ৭৫ লাখ টন সবজি উৎপাদন হতে পারে। এর মধ্যে শীতকালীন ১ কোটি ১৮ লাখ টন এবং গ্রীষ্মকালীন ৪৭ লাখ। চলতি মৌসুমে বসতবাড়িতে সবজি আবাদের আওতায় নিয়ে আসা গেলে কয়েক লাখ টন বাড়তি সবজির উৎপাদন সম্ভব।
বিশ্বে সবজি উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ খাতটি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। সবজি বিপণনের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকা এবং যে সুযোগ-সুবিধা আছে, তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে না পারার কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। অন্যদিকে কৃষকের মজুদ অক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা কম দামে কৃষককে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য করছে। উপকরণের সঠিক ব্যবহার না থাকায় কৃষক প্রকৃত মুনাফা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
নানান কারণে নষ্টও হচ্ছে সবজি। এর মধ্যে পরিবহনে নষ্ট হয়ে যাওয়া, সংগ্রহের সময় বাছাই না করা, গ্রেডিং কিংবা ময়লা পরিষ্কার না করা, প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ত্রুটি থেকে যাওয়া, পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকা, খোলা ট্রাকে পরিবহন ছাড়াও উৎপাদন স্থান থেকে পাইকারি বাজার বেশি দূরে হওয়ার কারণে নষ্ট হওয়া।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা এবং তা আরো বৃদ্ধি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে সবজির উৎপাদন থেকে বিপণন সব ক্ষেত্রেই কৃষকের সুবিধা দিতে নতুন নীতি ও কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার নিমিত্ত যাতে কোনো জমি পতিত না থাকে এবং আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার যেন নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে সামনের মৌসুমে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবজি আবাদ সম্প্রসারণ করতে পারিবারিক সবজি বাগান নামে বিশেষ কর্মসূচি প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২০মে২০