নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট সংবাদদাতা: দুপুর গড়িয়ে সূর্য ডুবে যাচ্ছে মেঘের আড়ালে। নিত্যপণ্য কিনে বাড়ি ফিরছে হাটুরের দল। তবুও ভরে উঠেনি ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা লালমনিরহাটের দুরাকুটি পশুর হাট। আসন্ন কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে জমজমাট বিকিকিনির আশা থাকলেও তা গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে এ হাটের ইজারাদারের।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী দুরাকুটি হাটটি গরু ও মহিষসহ কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ে ব্যাপক নাম ডাক রয়েছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বড় বড় শহরের পশু বেপারীদের কাছে। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার দুপুর না হতেই পশুতে ভরে উঠত এ হাট। দুপুরে শুরু হলেও রাত ৯টা পর্যন্ত চলত বিকিকিনি। দূর দূরান্ত থেকে আসা বেপারীরা ট্রাকে ভড়ে সারা দেশের বাজারে নিয়ে যেত এই হাটের কোরবানির পশু। দূরের বেপারীরা কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে দুই মাস আগেই ক্রয় শুরু করেন। সেই অনুযায়ী ভড়া হাট বসার কথা জুলাই মাসে। কিন্তু এ বছর চিত্রটা একদম ভিন্ন। হাটে দৃশ্যমান তেমন কোনো গরুই আসছে না।
দুরাকুটি হাটের ইজারাদার নুরল ইসলাম জানান, প্রায় ৬০ লাখ টাকায় এক বছরের ইজারা নিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী এ পশুর হাটটি। গত বছর এমন মৌসুমে আটশ থেকে হাজারটি গরু বিক্রি হলেও এ বছর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২/৩শতটি। সীমান্তের কঠোর নজরদারির ফলে সীমান্তের এসব হাটে পশু আমদানি অনেকটা কমেছে। মুনাফা তো দুরের কথা সরকারি কোষাগারে দেয়া ইজারা মূল্যটাই আদায় করা কষ্টকর হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
গরু না আসার কারণ হিসেবে বেপারীরা জানান, এ হাট থেকে ভারতীয় সীমান্ত খুব কাছে। কাঁটাতারের বেড়াহীন এ সীমান্ত পথে খুব সহজেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গরু পাচার করতো এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এর বেশির ভাগ গরু বিক্রি হতো দুরাকুটি ও লালমনিরহাট শহরের নয়ারহাট, বড়বাড়ি ও হাতীবান্ধার দৈখাওয়া হাট। যার ফলে দিনভর গরু মহিষে ভরপুর থাকত এসব পশুর হাট।
গত দুই/তিন মাস ধরে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় সীমান্তের নজরদারি বেড়েছে কয়েকগুন। ফলশ্রুতিতে গরু পাচারও কমে এসেছে। এ কারণে সীমান্তের এসব পশুর হাটেও নেই দৃশ্যমান আমদানি। আমদানি কমে যাওয়ায় বাইরের বেপারীদের আনাগোনাও কমে এসেছে।
সীমান্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানের আতংকে মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গরুর রাখাল এবং ব্যবসায়ীরাও বাড়ি ছেড়েছে। সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫/৬শ লোক বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে। যাদের অধিকাংশ গরুর বেপারী। বর্তমানে ভারতীয় গরু খুব একটা আসছে না। অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে সামান্য কিছু আসতে পারে। তবে আগের মতো নেই।
সূত্রটি আরো জানান, ঈদের বাজার ধরতে সীমান্তের ওপারে ১০/১৫ হাজার গরু মহিষ মজুদ রেখেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সুযোগ পেলেই এসব গরু দেশের সীমানা অতিক্রম করে এসব বাজার দখল না করলেও সরাসরি দেশের বড় সব কোরবানির হাটে উঠতে পারে। এ নিয়ে স্থানীয় সীমান্তের দুদেশের বাহিনীর সোর্সদের সাথে কথাবার্তা চলছে। চূড়ান্ত হলে সুযোগ বুঝে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাচার হবে। তখন জমে উঠবে কোরবানির হাট। তবে এমনটা হলে দেশি খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায় তিন লাখ ৪৮ হাজার পশুর মধ্যে কোরবানি যোগ্য রয়েছে ৫৫ হাজার ১৯১টি। গত বছর কোরবানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৮০৯টি পশু। এ জেলার পশু অন্য জেলায় বিক্রি হলেও কোনো ঘাটতি হবে বলেও দাবি করেন তিনি। গো-খাদ্যে কোনো ভর্তুকি না থাকায় বাজার বেড়েই চলেছে। ফলে খামারিরা লাভবান হতে পারছেন না। কৃষিতে সারের অনুরূপ পশু-পাখির খাদ্যেও ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকলে খামারিরা নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোর্শেদ জানান, নজরদারির ফলে মাদক ও গরু পাচার যেমন বন্ধ হয়েছে। অনুরূপভাবে বন্ধ হয়েছে সীমান্ত হত্যা। ভারতের অভ্যন্তরে ভারতীয়রা গরু মজুদ রাখলেও সীমান্ত অতিক্রম করার কোনো সুযোগ নেই। সীমান্তের এ নজরদারি আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেন তিনি। সূত্র: এনবি
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন