কেমিক্যালমুক্ত সবজির ভাসমান হাট ঝালকাঠিতে

464

600.001
মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি থেকে: ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলীর খালে ভাসমান হাটে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। কৃষকরা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে নৌকায় বসে রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি বিক্রি করছেন। শহরের তুলনায় দাম কম হওয়ায় সারমুক্ত শাক-সবজি কেনার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় করছেন।

সবজি চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসল পাইকারদের কাছেও বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকালে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় সরাসরি বাগান থেকে সবজি নিয়ে আসেন তারা। পাইকাররা তা কিনে ট্রলারে করে নৌপথে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। পর্যটকরা পেয়ারা বাগান দেখতে এসে মুগ্ধ হন পেয়ারার সাথী ফসল হিসেবে সবজির চাষ দেখে।

ভীমরুলীর খালে ভাসমান হাটে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে, কলা, লেবু, কাঁকরোল, মরিচ, বেগুন, শসাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পাশাপাশি পেয়ারা ও আমড়া বিক্রি করা হচ্ছে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত এ জলবাজারে প্রধান পণ্য রাসায়নিকমুক্ত সবজি। সারি সারি নৌকার ওপর সবুজ-হলুদ রাসায়নিকমুক্ত সবজি। এর ভারেই নৌকাও ডুবেছে অর্ধেকখানিক। হাটুরেদের হাঁকডাকে গম গম পুরো এলাকা। এক কথায় খালের ওপর এ এক আজব-অবাক করা বাজার।

স্থানীয়দের কাছে জানা গেল, এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ ভাসমান হাট এটি; যা পুরো বাংলাদেশেই অনন্য। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড়! তাহলে কি আরো আছে এমন বাজার? হ্যাঁ, আছে তো- পাশের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) কুড়িয়ানা, আটঘর, আতা, ঝালকাঠির মাদ্রা। আরো মজার বিষয় হলো, এসবই পিরোজপুর সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খালপাড়ে। ভীমরুলী জলে ভাসা হাটে রাসায়নিকমুক্ত সবজি বোঝাই ডিঙি নৌকাগুলো একবার এপাশ, একবার ওপাশ, চাষিদের ভালো দামের আশায় এমন নড়চড়। খালের দু’পাশে ব্যবসায়ীদের আড়ৎ। তারাই কিনবেন। বাংলাদেশের সিংহভাগ রাসায়নিকমুক্ত সবজি উৎপাদনকারী অঞ্চলের চাষিরা ডিঙিতে বসে বিকিকিনিতে মগ্ন।

600

এ জেলার সবজির ভান্ডার খ্যাত আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলী, ডুমুরিয়া, শতদশকাঠি ও বাউকাঠি। এসব গ্রামের প্রায় শতভাগ লোক কোনো না কোনোভাবে সবজি চাষ কিংবা বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। পর্যটকরা ঘুরতে এসে পরিবারের প্রয়োজনে রাসায়নিকমুক্ত সবজিও এখান থেকে কিনে নিয়ে যান।

ভীমরুলী গ্রামের সবজি চাষি সুব্রত মন্ডল ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে বলেন, পেয়ারার কাঁদির ফাঁকের ছোট বেড়ে (খাল) মাচা করে সবজি চাষ করা হয়। সবজি উৎপাদনের সময় কোনো রকম সার বা রাসায়নিক দ্রব্য না দিয়ে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এতে করে সবজিতে পোকার আক্রমণও কম হয়। স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু সবজি উৎপাদন করা যায়।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ওই অঞ্চলের সবজি চাষি ও বিক্রেতাদের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে কৃষিপণ্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে। আট লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পরই কাজ শুরু করা হবে। সূত্র: নিউজবাংলাদেশ।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/আমিনুল/মোমিন