কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র দুই দিন। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানি তত বাড়ছে। এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৩ হাজার ৩০০ গবদি পশু এসে পৌঁছেছে। বৈরি হাওয়ায় গত কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর ফের বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু আসায় স্বস্তি মিলছে আমদানিকারকদের।
গত শুক্র ও শনিবার পর্যন্ত ২৪টি ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দিয়ে এ সব গবাদি পশু করিডরে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
টেকনাফ শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ১৮ আগষ্ট সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১৩টি ট্রলারে করে ২ হাজার ১৭০টি গবাদি পশু করিডরে পৌঁছে। এ পর্যন্ত একদিনে এটিই সর্বোচ্চ গবাদি পশু আমদানির রেকর্ড। এ সব পশু থেকে সরকার ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা রাজস্ব পায়। তবে করিডর প্রতিষ্ঠার পর একদিনে এত বিপুল সংখ্যক পশু আমদানি হয়নি।
এছাড়া গত শুক্রবার ১১টি ট্রলারে করে ১ হাজার ১২৯টি গবাদি পশু আমদানি হয়েছে। এই দুই দিনে করিডরে মায়ানমার থেকে এসেছে ৩ হাজার ২৯৯টি গবাদি পশু। চলতি আগস্ট মাসের ১৫ দিনে করিডরে মায়ানমার থেকে পশু আমদানি হয়েছে ৫ হাজার ৭২৩ টি। এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৯১টি গরু এবং ২৩২টি মহিষ। প্রতিটি গরু-মহিষ প্রতি ৫০০ টাকা হারে ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
গত দু’দিনের আমদানিকৃত ৩ হাজার ২৯৯টি পশু থেকে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মায়ানমার থেকে ৯ হাজার ২২টি পশু আমদানির বিপরীতে ৪৫ লাখ ১১ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে মায়ানমার থেকে প্রচুর গবাদি পশু আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকৃত পশু রাজস্ব আদায় শেষে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার পশু ব্যাপারীদের কাছে। পরবর্তীতে এসব ব্যাপারীরা তাদের ক্রয়কৃত পশুগুলো দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে নিয়ে যাচ্ছেন।
পশু আমদানিকারক টেকনাফ পৌর এলাকার সোহেল রানা ও মো. শহিদ জানান, বৈরি আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় মায়ানমার থেকে পশু আমদানি আবারও শুরু হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে কোরবানির আগ পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক পশু আমদানি করা সম্ভব হবে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
মায়ানমার থেকে পশু আমদানি এবং ক্রয়-বিক্রয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা এবং কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পশু আমদানিকারকরা দাবি জানান, টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপের দূরত্ব এবং যাতায়াত সমস্যার বিষয়টি বিবেচনা করে শাহপরীর দ্বীপ করিডর সংলগ্ন এলাকায় একটি সোনালী ব্যাংক এবং শুল্ক স্টেশনের অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা গেলে আমদানিকারক ও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুবিধাজনক হবে।
টেকনাফ শুল্ক স্টেশন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মায়ানমার থেকে পশু আমদানি করে করিডর রাজস্ব প্রাপ্তিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বৈরি হাওয়ায় গত কয়েকদিন পশু আমদানি বন্ধ থাকার পর শুক্রবার থেকে আবারো পুরোদমে পশু আমদানি হচ্ছে। করিডরে পশু আমদানির ধারা অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডরটি শুল্ক স্টেশনের আওতাধীন একটি রাজস্ব জোন। ২০০৩ সালে ২৫ মে মায়ানমার থেকে চোরাই পথে গবাদি পশু আসা রোধে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট বিজিবির চৌকি সংলগ্ন এলাকায় এ করিডর চালু করা হয়।
আমদানিকৃত গবাদি পশু প্রথমে বিজিবির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে টেকনাফ সোনালী ব্যাংকে রাজস্ব জমা এবং স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের অনুমতি নিয়েই পশুগুলো করিডর থেকে ছাড় পাওয়া যায়।