ডিম নিয়ে ইদানিং ক্রেতাদের যা তা অবস্থা। ডিমের দাম নাকি আকাশ ছোঁয়া। অপরদিকে উৎপাদনকারীরা যে যৌক্তিক ব্যাখা দেন সেটাও ফেলে দেওয়ার মতো না। উৎপাদন কস্ট বেশি হওয়া সত্বেও তারা সহনীয় দামে ভোক্তাদের জন্য ডিম উৎপাদন ও বাজারে বিক্রি করছেন।
এদিকে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন কম বলে উছিলা দাঁড় করিয়ে বলছেন, চাহিদা ও উৎপাদনে বড় ব্যবধান তৈরি হওয়ায় ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
রাজধানীতে ফার্মের মুরগির প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। দু’একটি দোকানে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে ডজন হিসেবে এই ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়। মুদি দোকানগুলোতে প্রতি ডজন ১১০ টাকায় আর শুধু ডিমের দোকানে ১০৫-১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওই সব দোকানে ব্রয়লার মুরগির সাদা রঙের প্রতি ডজন ডিম আরো পাঁচ টাকা কমে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কিন্তু খুচরায় হালি ৩৬ টাকার কমে মিলছে না।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল শনিবারের বাজার বিশ্লেষণের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের এই সময়ে প্রতি হালি ডিম যে দামে বিক্রি হয়েছে তার চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি দামে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।
মাস তিনেক আগেও ডিমের হালি ছিল ২৮-৩০ টাকা। বর্তমানে প্রতি হালি ডিম ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ তিনি মাসের ব্যবধানে প্রতি পিস ডিমের দাম বেড়েছে দুই টাকা।
রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘‘উৎপাদন অনেক কমে গেছে।
চাহিদা তো বিভিন্ন সময় কমে-বাড়ে। ঈদের সময় চাহিদা কম ছিল। এখন আবার বেড়ে গেছে। কিন্তু উৎপাদন বাড়েনি। নানা সংকটে উৎপাদন কমেছে। এই গ্যাপের কারণে দাম বেড়েছে ডিমের।’’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘পাইকারিতে দাম বেশি। তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করি।’’
তেজগাঁওয়ে ডিমের আড়তগুলোতে ব্রয়লার মুরগির প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে আট টাকা আর সাদা ডিম সাত টাকা ৫০ পয়সা। আড়তে হালি বা ডজন নয়, মূলত প্রতি ১০০ ডিম হিসেবে দাম চাওয়া হয়।
ডিমের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক বছর ধরে খামারিরা ডিমের ভালো দাম না পেয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। গত ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর মাংসের কারণে ডিমের চাহিদা অনেক কমে যায়। এর পর পরই ইলিশ মাছের ভালো সরবরাহের কারণেও ডিমের চাহিদা ছিল কিছুটা কম। এসব কারণে খামারি পর্যায়ে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত উৎপাদন কমে গেছে। উৎপাদন থেকে খামারিদের সরে আসার আরেকটি বড় কারণ খাদ্যের অতিরিক্ত দাম। অনেককে আবার উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামেও বিক্রি করতে হয়েছে। বাড়তি খরচ করে যথাযথ দাম না পেয়ে অনেকেই ডিমের উৎপাদন থেকে সরে এসেছে।
তবে এখন আবার ডিমের ভালো দাম থাকায় কেউ কেউ উৎপাদনে ফিরছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে উৎপাদন আগের অবস্থায় যেতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে তারা দাবি করেন।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে ডিমের বাণিজ্যিক উৎপাদন দৈনিক প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং গৃহপালিত মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ডিম হিসাব করলে দৈনিক গড় উৎপাদন চার কোটি ৭১ লাখের ওপর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৬৬৫ কোটি পিস। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ডিমের মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৩৩.৫৩ কোটি পিস।
ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান বলেন, ‘‘গত দেড় বছর ধরেই খামারিরা ঠিকমতো দাম পায়নি। সে কারণে অনেক ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়েছে বা ডিমের উৎপাদন থেকে সরে এসেছে। অন্য কিছু কারণেও গত দুই মাসে ডিমের চাহিদা কম ছিল। এর মধ্যে খাদ্যের দাম একটি বড় কারণ। কিন্তু এখন আবার চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে অনেকেই আবার উৎপাদনে ফিরছে। এতে ধীরে ধীরে দাম আবার স্বাভাবিক হবে।’’
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন