সুপারশপগুলিতে বাজারজাতকৃত প্রক্রিয়াজাতকৃত মুরগির মান নিশ্চিতে অভ্যন্তরীণ তদারকির মান বাড়ানোর তাগিদ
সরকারের নানামুখি কর্মকান্ডে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও নিরাপদ খাদ্যের বেলায় অনেক জায়গায় এখনও দুর্বলতা রয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও আচার-আচরণে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেকারণে ভোক্তাদের মাঝে সহজে নিরাপদ খাদ্য-পণ্য সরবরাহে সুপারশপ ও চেইনশপগুলি গড়ে উঠেছে। ঝামেলাবিহীন কেনা-কাটায় এখন অনেকে সুপারশপমুখী।
আবার দেশীয় প্রাণীজ আমিষের সিংহভাগ যোগান দিচ্ছে পোল্ট্রি মাংস। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে মানুষ এখন খাদ্যপণ্য ক্রয়ে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করছেন, অনেকেই বিভিন্ন নামিদামি সুপারশপ থেকে প্রক্রিয়াজাতকৃত মুরগি ক্রয় করে থাকেন। কিন্তু এসমস্ত ড্রেসড(প্রক্রিয়াজাতকৃত) মুরগি গুলি মানসম্মত জবাই খানায় প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে কিনা এবং সেখানে নিরাপদ খাদ্যের যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধিগুলি পুরোপুরি মেনে চলা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আশংকা থাকায় প্রক্রিয়াজাতকৃত মুরগি বাজারজাতকরণে নিয়োজিত সুপারশপ ও মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিবেশিত মুরগির মান সরেজমিনে তদারকি করা এবং মানহীন খাদ্য-পণ্য বাজারজাত করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়েজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
প্রক্রিয়াজাত মুরগির প্যাকেটের গায়ে উৎপাদন, মেয়াদ, বয়স ও খামারীর নাম বাধ্যতামুলক রাখা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত জবাইখানায় ভেটিরিনারি সার্জন কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা, খামারীর উৎপাদান, পরিবহন, সংরক্ষণ থেকে খাবার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎপাদক, বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যবসায়ী, সরকার, গণমাধ্যম ও ভোক্তাসংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহনের আহ্বান জানানো হয়।
২২ নভেম্বর নগরীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ক্যাব’র পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাত মুরগি বিক্রয়ে সুপারশপ, জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা খাদ্য অফিস ও ক্যাব প্রতিনিধিদের সাথে অনুষ্ঠিত অ্যাডভোকেসী সভায় উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ইউকে এইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাবিবুর রহমান সভায় প্রধান অতিথি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রিয়াজুল হক জসিম ও জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জমান বিশেষ অতিথি ছিলেন।
ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভেটিরিনারি সার্জন ডা. সেতু ভুষণ দাস।
আলোচনায় অংশ নেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিকাশ দাস, থানা পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া আকতার, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, সুপারশপ বাসকেট এর প্রতিনিধি সাদেক আলী, নাজিম উদ্দীন, স্বপ্নের প্রতিনিধি রাকিব হোসেন, ওয়াহিদ আফসার, মিনা বাজারের মো. নুরুল্লাহ, বেঙ্গল মিটের শফিকুল ইসলাম, খুলসী মার্টের আবু সায়েম, গ্রোসারের জহিরুল ইসলাম, খাজা পোল্ট্রির আবদুল মজিদ, আগোরার আবদুল্লাহ আল মামুন, কাজী ফুেডর সেলিম মিয়া, ক্যাব নেতা জান্নতুল ফেরদৌস, মোহাম্মদ শাহীন চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় আরও বলা হয় ক্রেতারা মানসম্মত পণ্য ক্রয়ের জন্য সুপারশপমুখী হয়েছে। এখন সুপারশপগুলির নৈতিক দায়িত্ব তাদের বাজারজাতকৃত খাদ্য ও পণ্যের গুনগত মান ঠিক রাখা। তারা যদি মানহীন পণ্য বাজারজাত করে থাকেন তাহলে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। তাই ব্যবসায় টেকসই অবস্থান ধরে রাখতে হলে সুপাশপগুলিকে নিজেদের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকজনকে নিয়োগ করে মান বজায় রাখতে হবে।
সভায় সুপারশপগুলিতে দেশীয় মুরগির নামে ফার্মের কক-মুরগি বিক্রির মতো প্রতারণা বন্ধ, সরকারি নিবন্ধন, মান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যাচাইকৃত খামার থেকে মুরগি সরবরাহ, মুরগির প্যাকেটে লেভেলিং আইন অনুযায়ী উৎপাদন, মেয়াদ, বয়স, খামারীর তথ্য সংযুক্ত, ফ্রিজের রাখার নিয়মগুলি যথাযথ অনুসরণ করার বিষয়ে সুপারশপ প্রতিনিধিদের সতর্ক করা হয়। একই সাথে ভেন্ডরস কর্তৃক সরবরাহকৃত খাদ্যের মান পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকবল থাকা ও মান নিশ্চিত তাদেরকেই করতে হবে। আর এর ব্যতিক্রম হলে জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, র্যাব, ক্যাব ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বাজার তদারকি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন