অনৈতিক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতার কারনে খাদ্যে ভেজাল, ওজনে কারচুপি, পণ্য মজুত, সিন্ডিকেট ব্যবসার প্রসার ঘটছে সাধারণভাবে যেকোন রোগ হলে অধিকাংশ মানুষ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসিতে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করে থাকেন। অনেকে আবার সে ওষুধের পুরো ডোজ শেষ করেন না। পশুর বেলায়ও একই অবস্থা পশুর রেজিস্টার্ড পশু চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে মানুষ অনেক সময় ফার্মেসি, গ্রাম্য পশু চিকিৎসকের কাছে যান, ফার্মেসি ও পশু চিকিৎসকরা অনেক সময় মানহীন ওষুধ ও অ্যান্টিবায়েটিক জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ফলে খামারীরা মানহীন পশু খাদ্য ও ওষুধ সেবনের কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়ে যায়, উৎপাদন কমে যায়, খামারীরা লোকসানে পড়ে যান। আবার গুটি কয়েক ব্যবসায়ী যারা পোল্ট্রির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদন করে থাকেন তারা আবার মুরগির খামার, ওষুধ বিক্রিসহ খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায় জড়িত।
সাধারণ খামারীরা তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে মুরগি বিক্রিতে লোকসানে পড়েন। অন্যদিকে যারা পশুর ওষুধ বিক্রি করেন, তাদের বিক্রয় প্রতিনিধিদের মাসিক একটি লক্ষ্য মাত্রা দেয়া থাকে, সে লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের জন্য তারা অনেক সময় গ্রাম্য পশু চিকিৎসক, ফার্মেসিসহ এখাতের ব্যক্তিবর্গের কাছে গিয়ে টার্গেট পুরণে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেন।
ফলে মানহীন মুরগির খাদ্য ও অ্যান্টিবায়েটিক অনেক সময় বাজারজাত হয়ে থাকে। অন্যদিকে কিছু বৃহৎ ব্যবসায়ী পুরো পোল্ট্রি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র খামারীদের লোকসানে নিয়ে ব্যবসা থেকে বিতাড়ন করতে নানা ফন্দিফিকির করে থাকেন।
এছাড়াও পোল্ট্রি খাতে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে আমিষের সহজ যোগানকে বাধাগ্রস্ত করা ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সেকারণে পোল্ট্রি শিল্পে এ ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলমান থাকলে দেশের প্রাণিজ আমিষ ও পুষ্টির যোগান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি, বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির জীবন জীবিকা নির্বাহে বিশাল ভূমিকা পালনকারী এ শিল্প গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। তাই জনগনের মাঝে প্রাণিজ আমিষ, পুষ্টি, নিরাপদ খাদ্য, বিশেষ করে পোল্ট্রি মাংস নিশ্চিত করতে পোল্ট্রি সেক্টরে অন্যায়্য ব্যবসা রোধে নীতিমালা প্রণয়ণ ও সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
ইউকে এইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরী সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আয়োজনে ১৩ ডিসেম্বর নগরীর পর্যটন হোটেল সৈকতের সম্মেলন কক্ষে নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে বেসরকারি সেক্টরের সাথে লার্নিং শেয়ারিং কর্মশালায় বিভিন্ন বক্তারা উপরোক্ত অভিমত জানান।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসিম, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, ক্যাব আইবিপি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দা আমিরুন নুজহাত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া খাতুন।
আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগর সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, জানে আলম, জান্নাতুল ফেরদৌস, শাহীন চৌধুরী, রুবি খান, মোনায়েম বাপ্পি, সেলিম জাহাঙ্গীর, ডেইলি নিউএজ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ফেরদৌস আরা, বাংলানিউজ২৪ডটকমের আল রহমান, দৈনিক পূর্বদেশ’র এম এ হোসেন, এলবিয়ন গ্রুপের ডা. মফিজুল ইসলাম, আজিম অ্যান্ড সন্সের মোহাম্মদ যোবায়ের, ফতেয়াবাদ চিকস’র মুসলেম উদ্দীন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে নানামুখি ষডযন্ত্রের কারণে বিভিন্ন সময় পোল্ট্রি মাংস নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, অবৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশ করে যাচ্ছেন একটি মহল, আবার দেশি মুরগি বলে সোনালি মুরগি বিক্রি করে ভোক্তাদের ঠকিয়ে বেশি মূল্য আদায় করছে। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশে দেশি মুরগির চাষ ও বিক্রি বলে কিছু নাই।
কর্মশালায় আরও বলা হয়, পোল্ট্রি শিল্পে ভ্যাকসিন ছাড়া সরাসরি কোন ভুতর্কি ও অন্যকোন প্রণোদনা নাই। সে কারণে তারা বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়, ফায়ার, পরিবেশ, ট্রেড লাইন্সেসহ বিভিন্ন লাইসেন্স গ্রহণের জন্য বেশি মূল্য দিতে হয়। এমনকি পোল্ট্রি খাতে কম সুদে ব্যাংক ঋণও পাচ্ছে না।
কর্মশালায় বলা হয় কৃষি, মৎস্য, পশু সম্পদ সেক্টরে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। মানুষ এখন না খেয়ে মরছে না। কিন্তু নিরাপদ খাদ্যে নিশ্চিতে সবগুলি ধাপ অনুসরণ না করার কারণে কিছু কিছু জায়গায় নিরাপদ খাদ্যও অনিরাপদ হয়ে অকাল মৃত্যুসহ নানা প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ওষুধ প্রস্তুতকারী, খামারী, পোল্ট্রি ফিড মিল, বিক্রেতা, সাংবাদিক, বাজার সমিতির প্রতিনিধি ও ক্যাব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন