দ্রুত বেড়ে উঠা খাতের মধ্যে পোল্ট্রিখাত অন্যতম। অন্যের লাভবান খামার দেখে হয়তো আপনিও খামার করার কথা ভাবছেন। কিন্তু খামার করার আগেও ভাবনার বিষয় আছে। কেননা এই খামার আপনি শখের বসে করছেন না। বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা থেকে করছেন। সুতরাং পোল্ট্রি খামার করার আগে যে ৮টি শুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে ভাবতে হবে সেই বিষয় নিয়ে আজ তুলে ধরবো। আর বিষয়টি মাথায় নিয়ে যদি আপনি খামার করেন তো আপনি একজন সফল খামারি হতে পারবেন বলে আমরা আশা করি। তো চলুন জেনে নেয়া যাক কি সেই আটটি বিষয়।
১. প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান:
আপনি যদি মুরগির খামার করার চিন্তা করেন তো প্রথমে আসবে অর্থের প্রয়োজন। তাই আপনি আগে অর্থ যোগার করুন। অনেকে ঋণ নিয়ে শুরু করে সেটা অনেকটা রিস্ক হয়ে যায়। তাই আপনি এমন জায়গা থেকে অর্থ সংস্থান করুন যাতে আপনার বাড়তি চাপ না থাকে।
২. উপযুক্ত স্থান নির্বাচন:
নিরাপদ ও আরামে থাকার জায়গার নাম বাসস্থান। বাসস্থান নিরাপদ রাখতে হলে নির্বাচিত স্থানের উপযোগী দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে তা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঝড়বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে সহজে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাসস্থানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, যেমন-পরিমাণমতো থাকার জায়গা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য ও পানির পাত্র, তাপ ও আলো এবং বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। পালনকারীর সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে ঘর পাকা, কাঁচা বা টিনের হতে পারে। প্রজাতি বা স্ট্রেইন অনুযায়ী যতগুলো মুরগি রাখা হবে এদের মোট জায়গার পরিমাণ হিসেব করে ঘর তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি ঘরের মাঝে ২৫-৩০ ফুট বা ততোধিক জায়গা আলো ও মুক্ত বাতাস প্রবাহের জন্য খালি রাখা দরকার।
৩. সঠিক প্রকল্প প্রণয়ন:
যে কোন খামার বা শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভের জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা। বাণিজ্যিক মুরগি খামার ব্যবস্থাপনায় তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়। যথা-
# মুরগির খাদ্য,
# বাসস্থান ও
# রোগ দমন। মুরগির খামার একটি বিশেষ ধরনের শিল্প।
তাই এ খামার প্রতিষ্ঠার জন্য মূল বিষয় ছাড়াও আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হয়। মুরগির খামার পরিকল্পনার সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
৪. সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় ঘর নির্মাণ:
বাজারজাত করার বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ১ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। এভাবে হিসেব করে ব্রয়লার উৎপাদনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করেই ঘরের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। সাদা খোসার ডিম উৎপাদনকারী প্রতিটি মুরগির জন্য ৩ বর্গফুট জায়গা এবং বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য ৪ বর্গফুট জায়গা হিসেব করে থাকার ঘর তৈরি করতে হবে। এসব মুরগি খাঁচায়, মাচায় অথবা লিটার পদ্ধতিতে পালন করা যায়। পালন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ঘরের পরিমাণ ভিন্ন ধরনের হতে পারে। খাঁচা পদ্ধতিতে প্রতিটি উৎপাদনশীল মুরগির জন্য কেইজে ৬০-৭০ বর্গইঞ্চি জায়গা প্রয়োজন হবে। কাজেই এ হিসেবে খাঁচা তৈরি করা হয়। খাঁচার সারি লম্বালম্বিভাবে এক সারি বা একটার উপর আরেকটা রেখে ৩/৪ সারি করা যায়। আবার সিঁড়ির মতো করে সাজিয়ে উভয় পার্শ্বেও সারি করা যায়। প্রতিটি উৎপাদনশীল মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ মাচায় ১.২-১.৩ বর্গফুট এবং লিটারে ১.৫-১.৭৫ বর্গফুট। মুরগির দৈহিক ওজন এবং আবহাওয়াভেদে এই পরিমাপের পরিবর্তন হতে পারে। লিটার পদ্ধতিতে সাধারণত প্রতি ১০ বর্গফুট মেঝের জন্য ৫ কেজি লিটার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে পালন করতে মুরগির ঘরের মেঝে পাকা হলে ভালো হয়। কাঁচা মেঝের ক্ষেত্রে শক্ত এঁটেল মাটির মেঝে হলেও চলবে। তবে এ ধরনের মেঝে বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেতে পারে। শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে সমস্যা হতে পারে।
৫. পর্যাপ্ত ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে:
আপনি যেখানে খামার স্থাপন করছেন সেখানে পর্যাপ্ত ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা আছে কিনা তা দেখতে হবে। যদি না থাকে তাহলে সেখানে খামার করার চিন্তুা না করাই ভালো। আবার অনেক জায়গায় পানি আছে কিন্তু তা বিশুদ্ধ নয়, বদ্ধ পুকুরের নোংরা পানি। তাহলে সেখানে না। আপনি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে সেখানে করুন। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে নিজে নলকূপ স্থাপন করে নিতে পারেন।
৬. বিদ্যুৎ সংযোগ ও সার্বক্ষণিক সরবরাহের ব্যবস্থা:
মুরগির জন্য শীত ও গ্রীষ্মকালে বিদ্যুত ব্যবস্থা অতি প্রয়োজন। এই বিদ্যুত না থাকলে আপনি সেখানে খামার স্থাপনের চিন্তাও করবেন না। কারণ একটি আদর্শ খামারের জন্য বিদ্যুত অতি জরুরি। শীতকালে মুরগির সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও গরম কালে ফ্যানের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে আপনার বিদ্যুত লাগবেই।
৭. সুষম খাদ্য প্রস্তুতের জন্য খাদ্য উপকরণসমূহ যথাসময়ে সর্বনিম্ন মূল্যে ক্রয় সংগ্রহ ও মজুদ:
মুরগির জন্য খাদ্য শুধু অত্যবশ্যকই নয়, সেটা কম দামে কেনারও চিন্তা রাখতে হয়। বিশেষ করে লাভজনক পর্যায় পৌঁছতে আপনার সেই ভাবনা থাকতে হবে। আপনি যদি নিজে মুরগির খাদ্য প্রস্তুত করতে চান সেক্ষেত্রে সেই সব উপকরণ কম দামে কিনতে হবে। আর সিজনে কম দামে কিনে সেটা মজুদ করার কথাও ভাবতে হবে। তা না হলে আপনার খরচ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৮. বাংলাদেশের কোথায় কোথায় উন্নত জাতের হাঁস মুরগি ও ডিম পাওয়া যায়:
আমাদের ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম নিউজ সাইটে এরকম একটা নিউজ দেয়া আছে যে আপনি দেশের কোথায় কোথায় উন্নত জাতের মুরগির ও ডিম পেতে পারেন। ওই নিউজটির লিংক দেয়া হলো:
অতএব আপনি যদি মনে করেন এই খাতে আপনার অবদান রেখে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন তো আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই করতে হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন