শখের বাগানে পুষ্টির জোগান

452

ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার: পান্না খাতুন (৩৬)। যখন ক্লাস নাইনে পড়তেন। তখন ঢাকায় থাকতেন। পড়তেন শহীদ মনু মিয়া বিদ্যালয়ে। ধানমন্ডি ভূতের গলিতে তার বড় বোনের বাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকে পায়ে হেঁটে হাতিরপুল দিয়ে স্কুলে যেতেন। একদিন রাস্তার আইল্যান্ডে একটি পাতাবাহার গাছ তার মনে ধরে। কলম ফেলে দেয়ার ছলে গাছটি তুলে নিয়েছিলেন। তারপরে অতি যত্নে গাছটি বাড়িতে এনে লাগিয়েছিলেন।

সেই শুরু। এক যুগের বেশি সময় কেটে গেছে। এখন সংসার জীবনে স্বামীর বাড়ি রাজশাহীতে। সেই বাড়িতেই তিনি গড়ে তুলেছেন শখের বাগান। নানান ফল, ফুল আর সবজির গাছে পুরো ছাদটাই ভরা। সেই বাগান থেকেই তার সবজির জোগান হয়। আর হাতিরপুলের রাস্তার আইল্যান্ড থেকে তোলা সেই গাছটি এখনো শোভা পাচ্ছে তার বাগানের একটি টবে।

পান্না খাতুন এখন থাকেন রাজশাহী মহানগরীর সুলতানাবাদ এলাকায়। স্বামী আলিমুর রহমান সুমন। তারা দু’জনেই চাকরি করেন। চাকরিতে ব্যস্ত সময়ের পরেও পান্না খাতুন বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান। পুরো বাগানে ফল, ফুল আর সবজির গাছে ভরা।

ফলের গাছের মধ্যে আছে, মাল্টা, ড্রাগন, বিভিন্ন ধরনের লেবু, বেদেনা, ডালিম, আম, কলা, দেশি বেল, চেরি ফল, কট লেবু, সুইট লেবু, দেশি আমড়া, বিলাতি আমড়া, সফেদা, বাতাবি লেবু, জামরুল, দেশি পেয়ারা, চাইনিজ পেয়ারা, কাজী পেয়ারা, বার্লিসহ অনেক ফলের গাছ।

ফুলের মধ্যে আছে, বাগান বিলাস, নীলকণ্ঠ, এডিনিয়াম, সাদা, লাল ও পিঙ্ক রঙের জবা, হাসনাহেনা, নাইটকুইন, সেঞ্চুরি, থাইপাতা, ডালে বাহার, রঙিন কচু, টগর, ফায়ার বল, চামেলী, রঙ্গন, কাঁঠালিচাপা, কেয়া, শাপলা পাতা, মে ফ্লাওয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের অর্কিড।

সবজির মধ্যে তার বাগানে আছে, লাউ, পুঁই, মরিচ, বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, কামরাঙা মরিচ, কলমি শাক, ঢেঁড়শ, ব্রোকলি, মিষ্টি আলুসহ আরো অনেক সবজি।

পান্না খাতুন ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, খুব ছোট থেকেই গাছের প্রতি তার ভালোবাসা। স্কুল জীবন ঢাকায় কেটেছে। সেখান থেকেই সখের শুরু। এরপরে কলেজ জীবন শুরু হয় রাজশাহীতে। তখন তিনি ছাত্রীনিবাসে থাকতেন। সেখানে তিনি ছোট ছোট টবে গাছ লাগাতেন। লেখাপড়া শেষ করে রাজশাহীতেই বিয়ে হয়। ৮ বছর আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরে নগরীর সুলতানাবাদ এলাকায় স্বামীর বাড়ির ছাদেই গড়ে তুলেছেন ছাদ বাগান।

তিনি ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে আরো জানান, তারা ছাদেই সবজির চাষ করেন। যখন যে সবজি খেতে ইচ্ছে করে ছাদ বাগান থেকে সংগ্রহ করেন তারা। বাইর থেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া সবজি কেনা হয় না। শুধু নিজেদের না। ওই বাড়িতে আরো কয়েক পরিবারের বসবাস। তারা সবাই ছাদ বাগান থেকে সবজি, ফল সংগ্রহ করে।

তিনি জানান, পরিবারের পুষ্টি জোগানের পাশাপাশি ছাদ বাগানের আরো অনেক উপকার আছে। আগে ঘরগুলো গরম মৌসুমে বেশ গরম ছিল। ছাদ বাগানোর কারণে বেশ ঠাণ্ডা হয়েছে। পরিবারের সবাই খুব মজা করে ঘুমোতে পারে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ ইলিয়াস আরফাত/মোমিন