নতুন করে আশা জাগাচ্ছে লক্ষ্মীপুরে ২৫ কি. মি. বনায়ন

395

বনায়ন
মো. রবিউল ইসলাম খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির এমন আশঙ্কার মধ্যে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে লক্ষ্মীপুরে ২৫ কি. মি. বনায়ন কর্মসূচি। এই বনায়নের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগের অভিঘাত থেকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেছেন, বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় বনায়নের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। যা কার্যকর সবুজ বেষ্টনী তৈরি, জীববৈচিত্র সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সংরক্ষক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে জেড়ে উঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণী মোহন গ্রামে ৫ কি. মি. ও জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ও চর লরেঞ্চ ইউনিয়নে ২০ কি মি. সড়ক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। সদরে ৫ হাজার চারা ও কমলগরে ২০ হাজার চারা লাগানো হয়।

এ কর্মসূচিতে সরকারের সদরে  ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা এবং কমলনগরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে বন বিভাগের লক্ষ্মীপুর সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা (নার্সারী) এএসএম  মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে জেড়ে উঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় চর রমণী মোহন ইউনিয়নের মনপুরা ব্রিজ হতে জামালের দোকান পর্যন্ত ৪ কি. মি. এবং মাতাব্বর বাড়ির পাশ থেকে জামালের দোকান পর্যন্ত ১ কিলোমিটারসহ মোট ৫ কি. মি. বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে।  সড়কের দুই পাশের কিনারা এবং ঢাল যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না এবং রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলে যাতে কোন সমস্যা না হয় এমন স্থানে চারা রোপন করা হয়েছে।

আকাশ মনি, রেইন্ট্রি, মেহগনি, জাম, কাঠাল, ঝাউ, অজুর্ন, নিম, কাঠ বাদামসহ বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাচের চারা রোপন করা হয়েছে।  এতে করে ওই এলাকার ৫০ জন সুফল ভোগী এই আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

এই বনায়নের আওতায় গাছ বড় হলে বিক্রি করা অর্থ বন বিভাগ, ভূমির মালিক, উপকারভোগী, ইউনিয়ন পরিষদ ও পুন: বনায়নের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে সুবিধা পাবে।

এ ব্যাপারে চর রমণী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু  ইউসুফ ছৈয়াল বলেন, আমার বাড়ির পাশের সড়কের দু পাশে বনায়নের আওতায় এসেছে। এই বনায়নের ফলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিক্ষয় ও ভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের অনেক উপকার আসবে।

অপরদিকে বন বিভাগের কমলনগর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (নার্সারী)  পারভেজ আহমদ বলেন, উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের শহীদ নগর ব্রিজ হতে পূর্ব দিকে আরিফ ইটভাটা হয়ে পাঠারী পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্তসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ২০ কি. মি. সড়ক বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে। মোট ২০ হাজার চারা রোপনের মাধ্যমে সরকারিভাবে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ। এতে ওই এলাকার মোট ১০০ জন সুফলভোগী রয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের পর বনায়নের বিক্রি অর্থ তারা পাবে।

চারা রোপনের পদ্ধতি বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে জরীপ ও সীমানা চিহ্নিত করা হয়। পরে বীজ দুই সারিতে ছিটানো হয়। ২ মিটার অন্তর গর্ত করে গোবর জৈব সার দিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে পলিব্যাগের চারা পরিবহন করে প্রতিটি গর্তের নিকট সরবরাহ করা হয়। পরে ১০-১২ দিন পরে রাসায়নিক সার প্রদান করা হয়।

তিনি বলেন, প্রতিটি চারা দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে যাতে গরু, ছাগলসহ অন্য প্রাণী যাতে নষ্ট না করে।

উপকূলীয় বন বিভাগ (নোয়াখালী) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম জানান, বনাঞ্চল বৃদ্ধি ও বিদ্যমান বনাঞ্চল রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে বন বিভাগ। উপকূলীয় মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ছাড়াও জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বনায়নের কোন বিকল্প নেই।

বঙ্গোপসাগরে জেড়ে উঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্প কর্মসূচির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর সদরে চর রমণী ও কমলগরে মোট ২৫ কি. মি. ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বনায়ন আওতায় আনা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে সদর উপজেলায় আরও ৫ কি. মি. এলাকায় বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন