সেপ্টেম্বর মাসে পেয়াজের দাম যে আরও বাড়তে পারে বিষয়টি আগেই জানতে পেরেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এর পরও মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দাম বাড়ার আশঙ্কায় পেয়াজ আমদানির জন্য ভারতের বিকল্প বাজার অনুসন্ধানের পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। সে বিষয়েও কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
সূত্রগুলো জানায়, গত মাসে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের কার্যক্রম সম্পর্কিত মাসিক সমন্বয় সভায় ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে পিয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। সভায় সংস্থাটির প্রতিনিধি জানিয়েছিলেন, ভারতে বন্যা হওয়ায় সেখানে পেয়াজের ফলন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সেখানে বাজার দর বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতের পাশাপাশি পেয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প বাজার অনুসন্ধানের পরামর্শ দেয় ট্যারিফ কমিশন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ আগস্ট। এর ঠিক ১৭ দিন পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের বাজারে পিয়াজের দাম এক লাফে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে যায়। এর আগের দিন ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ মার্কিন ডলার বেঁধে দেয়। সীমান্ত পেরিয়ে এই তথ্য বাংলাাদেশের ব্যবসায়ীদের কানে যেতেই হঠাৎ বেড়ে যায় পণ্যটির দাম।
গত শনিবার সকালে যে পেয়াজের কেজি ছিল ৫০ টাকা, বিকালে তা কিনতে হয়েছে ৭০ টাকা দরে। দাম বাড়ার পরদিনই ১৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি নিজের দফতরে জরুরি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেও ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে পেয়াজ আমদানির বিকল্প উৎস মিয়ানমার, চীন, মিসর, তুরস্ক থেকে পণ্যটি আমদানির পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তখন জানান, এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়। তিনি তখন পেয়াজের দাম কমাতে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে ট্রাকসেল করা, পণ্যটি আমদানিতে এলসি মার্জিন ও সুদের হার কমানোর সুপারিশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি ও বন্দরে আমদানিকৃত পেয়াজ খালাস দ্রুততর করতে এনবিআরকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এসব সিদ্ধান্তের পরও বাজারে পণ্যটির দাম কমেনি। এমন কি হঠাৎ দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করলেও সেই সভায় ব্যবসায়ীরা আসেননি।
জুলাই থেকে ডিসেম্বরে বাড়ে পেয়াজের দর : জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কে পেয়াজের জন্য আপদকালীন মৌসুম ধরা হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুন-জুলাইয়ে প্রচুর বৃষ্টি হয় বাংলাদেশ ও ভারতে। ফলে পচনশীল পণ্য হিসেবে পেয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরই প্রভাব পড়ে বাজারে। এবারও জুন-জুলাই থেকে পণ্যটির দাম বাড়ছিল।
গত জুনে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরের পেয়াজ জুলাইয়ে ৪০ টাকায় ওঠে। আগস্টে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এই সময়ে পেয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা সম্পর্কেও জানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সচিবের জন্য তৈরি করা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, পেয়াজের মজুদ শেষ এবং নতুন পেয়াজ ওঠার আগের সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) পেয়াজের মূল্য বেশি থাকে। ২০১৭ সালে ১৩ ডিসেম্বর স্থানীয় বাজারে ভারতীয় পেয়াজের খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা ও দেশি পেয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল।
প্রশ্ন উঠেছে এর পরও কেন মন্ত্রণালয় পণ্যটির দাম কমানোর জন্য অগ্রিম পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ? ভারতের পাশাপাশি বিকল্প বাজার থেকে কেন পণ্যটি আমদানির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেনি ?
এ বিষয়ে মঙ্গলবার পেয়াজের দাম নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দিনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিকল্প বাজার থেকে পেয়াজ আমদানির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি আমরা। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে ৫শ মেট্রিক টন পেয়াজ আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া মিসর থেকে ১৬২৪ মেট্রিক টন পেয়াজ আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তুরস্ক থেকেও পণ্যটি আমদানির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ