শাস্তির বিধান রেখে চূড়ান্ত হচ্ছে ‘ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড’

329

দুধ

জাতীয়ভাবে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিরাপদ খাদ্য হিসেবে দুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড’ করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৯’ এর খসড়া তৈরি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

খসড়া আইন অনুযায়ী, ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড দুধ বা দুধজাত খাদ্যের মান নির্ধারণ করে দেবে। নমুনা পরীক্ষা করে মানহীন পণ্য পেলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেবে বোর্ড। মানহীন দুধ বা দুগ্ধজাতীয় পণ্য প্রস্তুত, মজুত ও বিপণনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

এছাড়া দুধ উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকারী উদ্যোক্তাদের পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ, ডেইরি বা ডেইরি সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির নিবন্ধন, দুগ্ধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান-কে রেজিস্ট্রেশনও দেবে ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কিছুদিন আগে একজন অধ্যাপক পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়। দুধ পানের বিষয়ে সংশয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। দেশে সম্প্রসারণশীল দুগ্ধশিল্প ক্ষতির মুখে পড়ে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো সমন্বিত প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠনে জোর দিয়েছে সরকার।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রাণিসম্পদ- ২) কাজী ওয়াছি উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খসড়া আইনটি নিয়ে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বিস্তারিত মিটিং হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষগুলো থাকবে। সেই সভায় আমরা খসড়া চূড়ান্ত করার চেষ্টা করব।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে দুধ নিয়ে কিছুটা সমস্যায় আমরা পড়েছিলাম। সবকিছু বিবেচনা করে ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড করবে সরকার।’

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইনের খসড়াটি আমাদের পর্যায়ে চূড়ান্ত করে এটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। আশা করি, সেটা আমরা পারব।’

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড হবে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। বোর্ডের প্রধান কার্যালয় সরকার নির্ধারিত স্থানে হবে। বোর্ড প্রয়োজনবোধে সরকারের পূর্বানুমোদন নিয়ে দেশের যেকোনো স্থানে শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে।

বোর্ডের সাধারণ পরিচালনা ও প্রশাসন পরিচালনা পর্ষদের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক বোর্ডের অনুমোদন-সাপেক্ষে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত করবেন।

পদাধিকার বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হবেন বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদাধিকার বলে ভাইস-চেয়ারম্যান হবেন।

এছাড়া স্পিকার মনোনীত একজন সংসদ সদস্য, অর্থ বিভাগের মনোনীত কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (পদাধিকার বলে), প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (পদাধিকার বলে), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক (পদাধিকার বলে), কৃষি মন্ত্রণালয়ের মনোনীত কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মনোনীত কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়) পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন।

সরকার মনোনীত গবাদিপশু পালনকারী, বাণিজ্যিকভাবে দুধ উৎপাদনকারী ও দুগ্ধজাত খাদ্যের ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে দুজন প্রতিনিধি, যার মধ্যে অন্য একজন মহিলা প্রতিনিধি থাকবেন, তবে কোনো গ্রুপ থেকে একাধিক সদস্য মনোনয়ন দেয়া যাবে না।

এছাড়া পর্ষদে থাকবেন নিবন্ধিত দুগ্ধ সমবায় সমিতির একজন করে মোট দুজন সদস্য, যার মধ্যে একজন মহিলা হবেন। বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক সদস্য-সচিব হবেন।

কমপক্ষে প্রতি তিন মাস অন্তর পরিচালনা পর্ষদের একটি সভা হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে স্বল্পতম সময়ের নোটিশে সভা আহ্বান করা যাবে। পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোরাম গঠনের জন্য এর মোট সদস্য সংখ্যার কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হবে বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক হবেন সরকারের যুগ্ম সচিব বা এর ওপরের পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তা। নির্বাহী পরিচালক বোর্ডের একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি প্রধান নির্বাহী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

 

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ