রিকশা চালক থেকে কোটিপতি খামারী

1209

খামারি
কৃষক আবদুল বারিক। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সংসারের অভাব-অনটনের মধ্যে একসময় নিঃস্ব হয়ে পড়েন। একদিন তার মনে ইচ্ছা জাগে গরুর খামার করার। তার ওই ইচ্ছাশক্তি থেকে গরুর খামার করে এখন তিনি কোটিপতি। সফল ওই খামারি লাকসাম উপজেলা বাকই ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত হাজী আবদুল গণির ছেলে।

জানা যায়, আবদুল বারিক একটানা ১৭ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিবারের অভাব-অনটন ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। সংসারের একটু সুখের কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে প্রবাসে পাড়ি দেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৫ বছর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। লোকসানের হিসাব কষতে গিয়ে এক সময় নিঃস্ব হয়ে পড়েন আবদুল বারিক।

একদিন তার মনে ইচ্ছা জাগে গরুর খামার করার। দেশে এসে মাথায় চিন্তা আসে একটি গাভী বাছুর কেনার। ২০০৫ সালে ৬০ হাজার টাকার মূল্যে একটি বাছুরসহ গাভী কেনেন। গরু পালন করার পর থেকে গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মনের ইচ্ছাশক্তি থেকে গরুর খামার করে এখন তিনি স্বাবলম্বী। ওই খামারি এখন প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় ১ লাখ টাকা।

একই সঙ্গে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে ওই খামারে। বর্তমানে ওই খামারে ১৪টি গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এখন ওই খামারে বিভিন্ন জাতের হলেটেল ফ্রিজিয়াম, অস্টেলিয়ান জার্সি, ইন্ডিয়ান হরিয়ানা, সাইওয়াল ও ৬টি বাছুরসহ মোট ২৪টি গরু রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫৫ লাখ টাকা।

বর্তমানে ওই খামারে ১৪টি গাভী থেকে প্রতিদিন ১০০ লিটার দুধ উৎপাদন করা হয়। ওই দুধ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করা হচ্ছে। বছরে ষাঁড় ও বাছুর বিক্রি করেও কয়েক লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করেন তিনি। এছাড়া খামারের ময়লা-আবর্জনা দিয়ে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে বাড়িতে রান্নার কাজে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছেন। অন্যদিকে গরুর গোবর বিক্রি করেও প্রতি মাসে অতিরিক্ত আয় করছেন ১৫ হাজার টাকা।

খামারি আবদুল বারিক বলেন, টানা ১৭ বছর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছি। ২৭ বছর বয়সে বিয়ে করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রবাসে পাড়ি দেই। সেখানে জীবনে সুখ আসেনি। দেশে ফিরে এসে ৬০ হাজার টাকা মূল্যে একটি গবাদি পশু পালন করতে শুরু করি। সৃষ্টির কর্তার কৃপায় আমার ভাগ্য খুলে যায়।

আমার খামার ব্যবসা দেখে এলাকার যুবকরা খামার করার জন্য পরামর্শ নিতে আসেন। তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল ট্যাকনোলোজি প্রোগ্রামের (এনএটিপি) অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি বাংলাদেশের একজন সেরা খামারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হারুন রশিদ চৌধুরী জানান, উপজেলার বেশ কয়েকজন খামারির মধ্যে আবদুল বারিক সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডেইরি ফার্ম করে আজ স্বাবলম্বী। তার খামারের প্রতি উৎসাহিত হয়ে এলাকার অনেক বেকার যুবক বিভিন্ন স্থানে ডেইরি ফার্ম করে বেকারত্ব দূরকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।

তার মতো অবশিষ্ট খামারগুলো উন্নতি করতে পারলে এলাকায় দুধ ও আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা যাবে। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় সহায়ক হতে পারে বলে তিনি জানান।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ