দাম কম বোরো ধানের, চাষিরা ঝুঁকছেন রবিশস্যে

486

দশ-বছরে-ষাট-ভাগ-হ্রাস-পেয়েছে-গম-সরিষা-ভূট্টা-উৎপাদন-1901060854
বোরো ধান আবাদে দাম না পেয়ে ফরিদপুর অঞ্চলের চাষিরা এই ধানের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন বোরোর মৌসুমে চাষিরা সরিষা, মসুর, পেঁয়াজ ও গম জাতীয় ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। গত নয় বছরে জেলার কৃষি বিভাগের আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ কম হয়েছে।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১০-১১ সালে জেলার নয়টি উপজেলায় বোরো মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ হাজার ৪১৭ হেক্টর। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ছয় হেক্টর। কিন্তু চলতি মৌসুমে (২০১৯-২০) এই ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার বোরো ধানের বদলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়, পেঁয়াজ নয় হাজার হেক্টর, সরিষা তিন হাজার হেক্টর, মসুর চার হাজার হেক্টর আর গম প্রায় তিন হাজার হেক্টর অতিরিক্ত চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে ফরিদপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলার দেখা গেছে, গত মৌসুমে প্রতি মণ ধানের উৎপাদনে চাষিদের খরচ হয়েছে ৮০০ টাকা। সেখানে মণ প্রতি বিক্রয় মূল্য এসেছে ৫৫০-৬০০ টাকা। এ কারণে তারা বিকল্প ফসল চাষে ঝুঁকছেন। তবে সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু হলেও প্রান্তিক চাষিরা সেখান থেকে কাঙ্খিত সুবিধা পায়নি বলে অভিযোগ করেন।

সদর উপজেলার সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, ‘গত বছর আমি ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। বিঘা প্রতি খরচ ছিল ১৪ হাজার টাকা, কিন্তু ধান বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকায়। এ কারণে এ বছর ধান চাষ বাদ দিয়ে পেঁয়াজ, মসুর আর গম চাষ করছি।’ সদর উপজেলার আম্বিকাপুর গ্রামে চাষি রব মোল্লা, আবুল হোসেন, সোলায়মান শেখসহ বেশ কয়েকজন চাষি জানান, এই ধান চাষ শুধু সেচ নির্ভর, আর সেচ কাজের জ্বালানির দাম, শ্রমিক খরচ অধিক হওয়ায় অন্যদিকে উৎপাদিত এ ধানের দাম কাঙ্ক্ষিত না হওয়া এমনটি হয়েছে।

জেলার বোয়ালমারী এলাকার ধান ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, এলসির মাধ্যমে চাল আসায় দেশের কৃষকরা প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সরকার যখন ধান কিংবা চাল কেনে সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিলারদের কাছ থেকে, কৃষক সময় মতো সরাসরি দিতে পারে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকরা এমনিভাবেই বোরো ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকবে।

সরকারের কাছে চাষিদের দাবি, ধান চাষে কৃষকদের প্রতি আরও সদয় হতে হবে, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, শস্য বহুমুখীকরণের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে গম, পেঁয়াজ, মুসরির মতো বিকল্প ফসলের চাষ বাড়ছে। তিনি জানান, বোরো উৎপাদন কম হলেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হবে না।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৩জানু২০২০