বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র ১৪টি মসলার ৩১ জাত উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছে। এখানে পিঁয়াজের ৫ প্রকার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু মসলার জাত উদ্ভাবন প্রক্রিয়াধীন। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় গবেষণার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতায় বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০১ সালে গবেষণা কেন্দ্রের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ মসলা কেন্দ্রটি এখন সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছে। ৭০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা মসলা গবেষণা কেন্দ্রে ২৬টিরও বেশি মসলা নিয়ে গবেষণা হয়। এ গবেষণা কেন্দ্রে জাতের উন্নয়ন, উদ্যানতত্ত্ব, কীটতত্ত্ব, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ প্রজনন, বিভিন্ন মসলা ফসলের ফিজিওলজি, ব্রিডিং পদ্ধতি, জৈব প্রযুক্তি, উদ্ভিদ পুষ্টি, সেচ, আন্তঃপরিচর্যা, বীজ উৎপাদন, রোগ ও পোকা মাকড় দমন, শস্য সংগ্রহের ব্যবস্থাপনা ও বাজার পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণা ফলাফল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। গবেষণায় তৈরি জাত বা বীজ বিএডিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ কেন্দ্রের অধীনে সারা দেশে ৩টি আঞ্চলিক কেন্দ্র (গাজীপুর, মাগুড়া ও কুমিল্লা) এবং ৭টি উপ কেন্দ্র রয়েছে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রে পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, হলুদ, আদা, মেথি, ধনিয়া, মৌরি, গোল মরিচ, কালো জিরা, পান, পাতা পিঁয়াজ, বিলাতি ধনিয়া, আলু বোখারা, দই রং, রাঁধুনি, ফিরিঙ্গি, এলাচ, কালো এলাচ, জিরা, লং, দারুচিনি, তেজপাতা, চাইনিজ চিপস (চাইনিজ খাবারে ব্যবহার হয়), কারিপাতা, জয়ফল, জয়ত্রি মসলার গবেষণা হয়ে থাকে। এরমধ্যে বগুড়ায় ১৪টি মসলার ৩১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। মসলাগুলো হলো পিঁয়াজ ৫ প্রকার, মরিচ ৩ প্রকার, রসুন ৪ প্রকার, হলুদ ৫ প্রকার, আদা ১ প্রকার, মিথি ২ প্রকার, ধনিয়া ২ প্রকার, মৌরি ২ প্রকার, গোল মরিচ ১ প্রকার, কালো জিরা ১ প্রকার, পান ২ প্রকার, পাতা পিঁয়াজ ১ প্রকার, বিলাতি ধনিয়া ১ প্রকার, আলু বোখারা ১ প্রকার। এরমধ্যে পিঁয়াজ শীতকালে ২টি ও গ্রীষ্মকালে ৩টি চাষযোগ্য। উদ্ভাবিত পিঁয়াজের নামকরণ করা হয়েছে বারি-১ থেকে ৫ পর্যন্ত। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল জায়গাজুড়ে বিভিন্ন মসলার পরীক্ষামূলক জাত উন্নয়নে বেড ফেলা হয়েছে। কোথাও তেজপাতা, দারুচিনি, ছোট এলাচ, ধনিয়া, দই রং, লং, পান, শালুক, বিলাতি ধনিয়া চাষ করা হয়েছে।
গবেষণার পর চাষকৃত মসলার বিভিন্ন জাত উন্নয়ন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করছে কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানায়, সারা বিশ্বে মসলা রয়েছে ১০৯ প্রকার। বাংলাদেশে ব্যবহার হয় প্রায় ২৭ প্রকার মসলা আর মসলার চাষ হয়ে থাকে ২০ প্রকার। দেশে মসলা চাষ হয়ে থাকে ৪ দশমিক ৭৭ লাখ হেক্টর জমিতে। ফলন পাওয়া যায় প্রতি বছর ২৪ দশমিক ৭ মেট্রিক টন। আর সারা দেশে চাহিদা রয়েছে ৩১. ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসেবে ঘাটতি রয়েছে ৭.৪৮ লাখ মেট্রিক টন। মসলার জাতের উন্নয়নে কাজ করে গেলেও গবেষণা কেন্দ্রে চাহিদা মতো বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে মসলা গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটছে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কে এম খালেকুজ্জামান জানান, এখানে এ পর্যন্ত ১৪টি মসলার ৩১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আরও কিছু জাত উদ্ভাবন পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলো অনুমতি পেলে প্রকাশ করা হবে। গবেষণার কাজে চাহিদামতো বরাদ্দ প্রয়োজন হয়। সূত্র: বা.প্র