বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সফল হলেও পুষ্টি নিরাপত্তায় রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার তার জাতীয় পুষ্টি প্রগ্রামের অধীনে ভিটামিন এ ট্যাবলেট খাওয়ানোর মাধ্যমে ঘাটতি পুরন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভিটামিন এ ছাড়াও মানবদেহ গঠনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অণুপুষ্টি উপাদান হল জিংক।
বাংলাদেশে হারভেস্টপ্লাস প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য জিংক বা দস্তা সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন, অবমুক্তকরন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে এ সকল জাতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং জিংক সমৃদ্ধ চাল খেতে উদ্বুদ্ধকরনের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের জিংক ঘাটতি দূরীকরণ।
মানব দেহে জিংকের প্রয়োজনীয়তা
v জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেলে ছেলে মেয়েরা খাটো হয় না।
v শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মেধার বিকাশ হয়। ক্ষুধা মন্দা দূর করে।
v রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
v কিশোরী মেয়ে ও গর্ভবতী মায়ের জিংকের অভাব হলে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয় এবং গর্ভের বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
v দৈনিক শিশুদের ৩-৫ মিলিগ্রাম ও মহিলাদের ৮-৯ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন।
মানব দেহের একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুপুষ্টি হল জিংক। বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সে শতকরা ৪৪ ভাগ শিশু এবং ৫৭ ভাগ মহিলারা জিংকের অভাবে ভুগছে। ১৫-১৯ বছরের শতকরা ৪৪ ভাগ মেয়েরা এর অভাবে খাটো হয়ে যাচ্ছে। এর সমাধান খুজতে গিয়ে (বায়োফটিফিকেশন এর মাধ্যমে) আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত এর মধ্যে অধিক পরিমানে জিংক সম্পৃক্ত করে ৪টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে।
প্রতি কেজি জিংক চালে ২৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত জিংক পাওয়া যায়, জা আপনার শরীরের প্রায় ৭০% পর্যন্ত জিংকের চাহিদা পুরন করতে পারে। উল্লেখ্য যে, অধিক পরিমানে জিংক থাকা সত্ত্বেও এই ভাতের স্বাদ ও রংএর কোন পরিবর্তন হয় না।
আমন মৌসুমে জিংক ধানের জাত
ব্রি ধান৬২
মাত্র ১০০ দিনে এই ধান পাকে, তাই আগাম রবিশস্য চাষ করা যায়।
হেক্টর প্রতি ফলন ৪-৪.৫ টন।
চালের আকার আকৃতি লম্বা, সরু ও রং সাদা অনেকটা ব্রি ধান২৮ এর মত।
প্রতি কেজি চালে গড়ে ১৯.৬ মিলিগ্রাম জিংক ও শতকরা ৯ ভাগ প্রোটিন আছে।
বছরের অন্যান্য মৌসুমেও ধান চাষ করা যায়।
ব্রি ধান৭২
জীবনকাল ১২৫-১৩০ দিন
হেক্টর প্রতি ফলন ৫.৭-৭.৫ টন।
চালের আকার আকৃতি লম্বা, মোটা ও রং সাদা।
প্রতি কেজি চালে ২২.৮ মিলিগ্রাম জিংক আছে।
এ ধানের চাষাবাদে প্রচলিত জাতের চেয়ে কম পরিমানে ইউরিয়া সার লাগে।
বোরো মৌসুমে জিংক ধানের জাত
ব্রি ধান৬৪
জীবনকাল ১৪৫-১৫০ দিন
হেক্টর প্রতি ফলন ৬.৫-৭ টন।
চালের আকার আকৃতি মাঝারি, মোটা ও রং সাদা।
প্রতি কেজি চালে ২৪ মিলিগ্রাম জিংক আছে।
চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী বোরো ধানের মত।
ব্রি ধান৭৪
জীবনকাল ১৪৭ দিন।
হেক্টর প্রতি ফলন ৭.১-৮.৩ টন।
চালের আকার আকৃতি মাঝারি, মোটা ও রং সাদা।
প্রতি কেজি চালে ২৪.২ মিলিগ্রাম জিংক ও শতকরা ৮.৩ ভাগ প্রোটিন রয়েছে।
এই জাতটি মধ্যম মানের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী।
সূত্রঃ হারভেস্ট প্লাস, বাংলাদেশ
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪এপ্রিল২০