আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেন বিভিন্ন প্রকার খাদ্য দরকার, গাছেরও তেমনি প্রয়োজন বিভিন্ন খাদ্য। বাতাস, পানি আর মাটি থেকে গাছ খাদ্য গহণ করে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য গাছের মোট ষোলটি খাদ্য উপাদান দরকার। এর মধ্যে গাছ বাতাস ও পানি থেকে নেয়–কার্বণ, হাইড্রোজেন ও আক্সিজেন। বাকী তেরটি উপাদান নেয় মাটি থেকে। এগুলো হচ্ছে: নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, আরন, জিঙ্ক বা দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, বোরন, মলিবডিনাম ও ক্লোরিন। গাছের ষোলটি উপাদানকে মোটামুটি তিনভাগে ভাগ করা যায়।
মুখ্য উপাদান: নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম।
গৌন উপাদান: সালফার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। এগুলো হচ্ছে গাছের প্রধান খাদ্য উপাদান।
অনুখাদ্য উপাদান: আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, বোরন, মলিবডিনাম, ক্লোরিন। এই সাতটি উপাদান গাছের দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু খুব কম পরিমাণ লাগে। এজন্য এগুলোকে বলা হয় অনুখাদ্য।
ফসলের খাদ্য সার: মাটির উর্বরতা বজায় এবং উন্নতির জন্য যেসব রাসায়নিক ও জৈব পদার্থ মাটিতে প্রয়োগ করা হয়, সেগুলোই হল সার। তাই বলা যায় ফসলের খাদ্য হচ্ছে সার। ক্রমাগত ফসলের চাষ, ভ’মিক্ষয় এ অন্যান্য কারণে মাটিতে গাছের খাদ্য উপাদান গুলো দিন দিন হ্রাস পেয়ে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এই উর্বরতা শক্তি বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যই সার ব্যবহার করা হয় যাতে গাছ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সঠিক পরিমানে মাটি থেকে সহজেই পেতে পারে।
সারের প্রকারভেদ: ফসলের উৎপাদন বাড়াতে যে সমস্ত সার মাটিতে প্রয়োগ করা হয় সেগুলোকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়-
জৈব সার: গোবর, আবর্জনা, পচা সার, সবুজ সার, খৈল, হাঁড়ের গুড়া।
রাসায়নিক সার: ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট, পটাশিয়াম, কেøারাইড, সালফেট অব পটাশ, হচ্ছে প্রধান রাসায়নিক সার।
জীবানু ও শ্যাওলা সার: রাইজোবিয়াম, এ্যাজোলা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে সার ব্যবহার:
বাংলাগেশে রাসায়নিক সার ব্যবহারের শুরু ১৯৫০ সালে। বছরে মাত্র কয়েক হাজার টন রাসায়নিক সার ব্যবহার শুরু হয় কৃষি বিভাগের মাধ্যমে। তারপর ষাটের দশকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কে সার আমদানী ও বিপণনের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৬২-৬৩ সালে বিএডিসি ৫০,০০০ টন সার বিতরণ করে। বিএডিসির মাধ্যমে সার আমদানী ও বিতরণ ১৯৯১-৯২ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এরপর দাতা সংস্থা সমূহের পরামর্শে সার আমদানী ও বিতরণ বেসরকারী খাতে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে বেসরকারী খাতের মাধ্যমে সিংহভাগ সার আমদানী ও বিতরণ করা হয়। ২০১২-১৩ সালে বিএডিসির মাধ্যমে ৫,৩৮,৬৫৩ টন সার আমদানী ও বিতরণ করা হয়েছে। ২০১২-১৩ সালে বাংলাদেশে সার বিতরণের পরিমাণ ছিল ৪২,১১,০০০ টন। নিম্নে বছর ভিত্তিক তিন বছরের সার ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখ করা হল। (মেঃটন)
সার | ২০০৭-০৮ | ২০১১-১২ | ২০১২-১৩ |
ইউরিয়া | ২৬,৮৫,০০০ | ২২,৯৩,০০০ | ২২,৪৭,০০৩ |
টিএসপি | ৩,৮০,০০০ | ৬,৭৮,০০০ | ৫,৯৬,০০০ |
ডিএপি | ২,৪০,০০০ | ৪,০৯,০০০ | ৪,৫১,০০০ |
এসএসপি | ১,০০,০০০ | ||
এমওপি | ৩,৮০,০০০ | ৬,১৩,০০০ | ৬,১৫,০০০ |
জিপসাম | ১,৬০,০০০ | ৩,৪০,০০০ | ১,৮৫,০০০ |
দস্তা | ৪৫,০০০ | ৪৫,০০০ | ৪৮,০০০ |
এনপিকেএস | ১,০০,০০০ | ২৫,০০০ | ২৪,০০০ |
অণ্যাণ্য | ৩০,০০০ | ৪,৫০,০০০ |
লক্ষ্যনীয় যে, ইউরিয়া সারের ব্যবহার ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে এবং টিএসপি ও পটাশ সারের ব্যবহার বাড়ছে। সুষম সার ব্যবহার ও গুটি ইউরিয়া ব্যবহার এর অন্যতম কারন। সূত্র: বিএডিসি