গবাদীপ্রাণির না খাওয়া রোগ ও সমাধান

988

গবাদীপ্রাণি লালন পালন করা নিজের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিতে অবদান রাখার একটা অন্যতম উপায়। প্রায়ই সকল খামারী এবং মালিক একটা সমস্যা তুলে ধরেন সেটা হল না খাওয়া সমস্যা। অনেকেই অভিযোগ করে তার গরু বা ছাগল কোন কিছুই ভাল খায় না। কারণ খাওয়ার উপর প্রাণীর বৃদ্ধি ও উৎপাদন নির্ভর করে। আর গরুর খাবারের উপর তার দেহের বৃদ্ধির উপর দাম ও নির্ভর করে। আমাদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে এই গবাদি প্রাণিগুলো, যেমন ধরুন আপনার পরিবারের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে পরিবেশ পরিস্কার রাখে আর তার খাবার খরচ কমায়। নিজের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার, পাশাপাশি অতিরিক্ত দুধ বিক্রি করে পরিবারে টাকা আয় করা যায়।

বর্তমানে আগের চেয়ে মানুষ প্রাণী সম্পর্কে সচেতন হয়েছে, তাদের স্বাস্থ্য নিয়েও অনেক সচেতন। অনেক বেশি আগ্রহী হয়েছে প্রাণি পালনে, ইতিমধ্যে অনেকে প্রাণি পালন করে নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন।

অর্থনৈতিক ও খুব পরিচিত সমস্যা এই না খাওয়া সমস্যাটি। যা নিয়ে প্রায়ই খামারীরা উদ্ধিঘœ থাকে, আসুন আমরা জেনে নেই প্রাণীর না খাওয়া বা কম খাওয়া কী কারণে হয় এবং এর সমাধানই বা কী?
আগে আমরা জেনে নেই গবাদীপ্রাণির অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান কী কীঃ
প্রত্যেক জীবের জন্য প্রয়োজন খাদ্য জৈবিক চাহিদা পুরণ করার জন্য, খাদ্য শক্তি দেয় , উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহয্য করে, যে সকল খাদ্য উপাদান সবার জন্য একান্ত প্রয়োজন তা হলো-
১। শর্করা / কার্বোহাইট্রেটঃ শক্তির প্রধান উৎস এই শর্করা । এক গ্রাম শর্করা হতে ৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় ,এই উৎস হলো- চাল, আটা, ভাত, ধান , গম , ভুট্টা করে ইত্যাদি।
২। প্রোটিনঃ এটি দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রোট্রিন হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ডাল ও খোসা যেমন মুসর ডাল, খেসারীর ভুসি ইত্যাদি।
৩। চর্বিঃ এটা সঞ্চিত শক্তি হিসেবে কাজ করে । এক গ্রাম চর্বি হতে ৯ ক্যালরী শক্তি পাওয়া যায়।
৪। খনিজ পদার্থঃ এটা দেহের অতি সুক্ষাদি সুক্ষ কাজে ব্যবহত হয়। বিভিন্ন শারীর বৃত্তীয় কাজে ব্যবহত হয়, যেমন ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে, এবং রক্তের চাপ নির্ধরণ করে।
৫। পানিঃ দেহের সকল রাসায়নিক বিক্রিয়া পানির সহায়তায় সম্পর্ন হয়। মেটাবলিক কাজ এর জন্য পানির প্রয়োজনিয়তা অপরিসীম।
৬। ভিটামিনঃ দেহের জন্য খুব অল্প পরিমাণে লাগে কিন্তু এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটা দেহের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি সহ অনেক কাজ করে থাকে।

স্বাভাবিক কিছু কারণে প্রাণি সাময়িক কম খেতে পারে তা হল-
১।অবস্থানের পরিবর্তন হলেঃ বুদ্ধি সম্পর্ন যে কোন প্রাণীর ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। চিরচেনা স্থানে ও পরিবেশে তার সব কার্যক্ষমতায় ঠিক থাকে তেমনি খাবার পরিমাণ ও চাহিদাও। প্রাণিতেও অবস্থান পরিবর্তন হলে কিছু সময়ের জন্য খাবার গ্রহনে ব্যহত হয় সেটা লক্ষ করা যায়। বাজার থেকে কিনে আনলে, অন্য কোথায় নিয়ে গেলে এমন সমস্যা হয়। এর আরো একটা কারণ থাকতে পারে তা হল ধরুন আপনি তাকে কিনে নিয়েছেন কিন্তু জানেন না সে কোন টা বেশী পরিমাণে খায়, তাই হয়ত সেই উপাদান পায়নি তাই খাচ্ছেনা, বা কম খাচ্ছে।
সমাধানঃ এই অবস্থাতে চিন্তার কিছু নেই। কয়েকদিনের ব্যবধানেই তা ঠিক হয়ে যাবে। তবে বেশী ধর্য্য না ধরলে একই খাবার বেশি না দিয়ে অনেক গুলো উপাদান অল্প অল্প করে দিবেন তাহলে একটা ভাল না লাগলেও অন্যটি খাবে। পরিস্কার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বাড়াতে হবে।

২.খাদ্যে পরিবর্তন আসলেঃ প্রত্যেহ যে খাবারে প্রাণি অভস্ত হয় তার প্রতিই স্বভাবত বেশী অগ্রহ থাকবে। খাবার পরিমাণ টাও আগের মত নির্দিষ্ট থাকবে। এর বিপরিত অন্য কোন নতুন খাবার দিলে কম খাবে বা খেতে চাবেনা। কারণ তারও একটা মনস্তাত্তি¦ক বিষয় কাজ করে। নতুন খাবার কী তার জন্য সত্যিই ভাল তাও হয়ত কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাদের পরিবর্তন হলেও এমনটা হতে পারে।
সমাধানঃ
 নতুন ভাবে অভ্যস্ত হতে কিছুদিন সময় লাগবে। এতে চিন্তার কোন কারণ নাই।
 তবে নতুন খাবার দেয়ার সময় সকল প্রাণিকে একসাথে প্রদান করলে দ্রুত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হতে পারে।
 অন্যান্য রুচি বর্ধক খাওয়ানো যেতে পারে।
 আগের খাবারের সাথে মিল রেখে কিছু খায়ানো ভাল।

৩.সঙ্গি পরিবর্তন হলেঃ খামারে দীর্ঘদিন একসাথে থাকা গরুগুলোর মধ্য থেকে তার জোড়াকে বিক্রি করলে বা অন্যত্র সরিয়ে রাখলে গরুতে কম খায়। প্রথম কয়েকদিন এই অবস্থা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। আর সেই সময়ে খামারি মনে করেন যে হয়ত তার কোন রোগ হয়েছে। আসলে বিষয়টা তেমন নয়, এখানে তার কিছু মনস্থাত্তিক অবস্থান পরিবর্তন হয়।
সমাধানঃ
 কয়েকদিন দেখেশুনে রাখা এবং ভাল খাবার প্রদানের চেষ্টা করা।
 বেশী বেশী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বাড়ালে ভাল হবে।

৪.খাবার দুর্গন্ধ হলেঃ অনেক দিনের পচা, বাসি ও দুর্গন্ধ যুক্ত খাবার সাধারণত খেতে চায়না গরুতে/ ছাগলে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে খাবারকে ভাল মনে হলেও শুধুমাত্র দুর্গন্ধ থাকার কারণে খায়না। এসব ক্ষেত্রে একবার মুখে নিয়ে আর খাবার মুখে নিতে চায় না কিংবা আর দেখেও না খাবারের দিকে।
সমাধানঃ পচা খাবার না দিয়ে সুগন্ধ যুক্ত না হলেও যেন দুর্গন্ধ যুক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের সাথে কিছু লবণ পানি মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। খাবার তৈরি করার সময় হিসাব করে পরিমাণ মত বানাতে হবে যেন নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হলে গন্ধ ধরে না যায়।

৫। ভয় পেলেঃ ভয় পেলে এপিনেপ্রিন ও নর এপিনেপ্রিন হরমোনের প্রবাহ বেড়ে যায়, তখন মানুষ এবং প্রাণি কেউই ভাল করে খেতে চায় না। আর প্রাণীর ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ। তাছাড়া ভয়ংকর কোন হিং¯্র প্রাণি বা সাপ বেজি দেখেও গরু ভয় পেয়ে যেতে পারে। আমরা অনেকে প্রাণীর সাথে খুব খারাপ আচারণ করি কোন একটু কিছু হলেই তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করি, এমনকি তার নাকে নাতা থাকলে সে দড়ি ধরেও তাকে টেনে কস্ট দেয়। এই রকম হলে ভয়ে প্রাণি খাবার কম খায়। তখন উলটো চিন্তায় পরে যায় কৃষক, তাই প্রাণীর সাথে শোভন আচারণ করা একান্ত অপরিহার্য।
সমাধানঃ
 মার ধর করা হতে বিরত থাকা।
 গায়ে হাত নেড়ে ভয় কাটানোর চেষ্টা করা।
 পরিমাণ মত সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা।

এবার জেনে নেই কিছু রোগ সম্পর্কিত কারন, যার ফলে প্রাণির খাবার পরিমাণ কমে যায় ।
১। স্টোমাটাইটিস বা মুখের ঘা( ঝঃড়সধঃরঃরং): প্রাণীর মুখ গহবরের ভিতরে কোন ঘা হলে এই রোগ ধারণা করা হয়। এটা অনেক কারণেই হতে পারে তবে ভাইরাস জনিত কারণেও হতে পারে, বা আঘাত জনিত ও হতে পারে। আঘাত পেলে তা ভিতরে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং ফুলে উঠে। যখন প্রাণি খেতে চাইনা। বা মুখে নেয়ার পর আর গিলতে পারেনা। এভাবে সে আর পরে নিতে চায়না।
কারণঃ
ক্স ওষুধ খাওয়ানোর সময় আঘাত প্রাপ্ত হলে।
ক্স বাহ্যিক বস্তু জনিত ক্ষত
ক্স ধারালো কাঁটা যুক্ত ঘাষ খেলে
ক্স খুব ঠান্ডা খাদ্য বস্তু খাওয়ালে
ক্স প্রচন্ড গরম কিছু খাওয়ালে।
ক্স ইরিটেন্ট জাতিয় কোন অষুধ যেমন ক্লোরাল হাইড্রেট উচ্চ মাত্রায় খাওয়ালে।
ক্স রোগের কারণে যেমন একটিনোব্যালসিলসিস, এফ এমডি ইত্যাদি।

রোগের প্রতিকারঃ অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। খেতে সমস্যা হলে তরল খাবার বা ড্রেক্সট্রোজ স্যালাইন শিরাপথে দিতে হবে। রোগের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা দিতে হবে। মৃদু জীবানূ জানশ যেমন এক্রিফ্লাভিন ০.০০১% ,পটাশিয়াম ০.০০১% অথবা কপার সালফেট ২% সল্যুশন দিয়ে প্রতিদিন মুখ ধোয়াতে হবে। পরে মুখে বোরো- গ্লিসারিন ৪% অথবা বোরাক্স মিশেয়ে ক্ষত স্থানে দিতে হবে।
প্রতিরোধঃ খুব ঠান্ডা বা গরম খাবার প্রদাহ হতে বিরত থাকতে হবে। ইরিটেন্ট ওষুধ প্রদানের সময় গরুর অবস্থা বুঝে দেয়া লাগবে।

২। এসোফেগাইটিস (ঊংড়ঢ়যধমরঃরং) বা খাদ্য নালী প্রদাহঃ যে নালী মুখ হতে খাদ্য পাকস্থলী নিয়ে যায় তাকে খাদ্যনালী বলে। কোন কারণে প্রদহের সৃষ্টি হলে প্রাণি খেতে পারেনা। অসাবধানতা বশত স্টমাক টিউব দ্বারা খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্থ হলে এমন প্রদহের সৃষ্টি হয়। গরুর খাদ্য নালীতে হাইপোডার্মা লিনেটা ( ঐুঢ়ড়ফবৎসধ ষরহবঃধ) লার্ভা তীব্র স্থানিক প্রদাহ ও পরবর্তিতে গ্যাংরিন সৃষ্টি করতে পারে।
সমাধানঃ এক্ষেত্রে খেতে না পারায় তরল খাবার বা শিরায় ড্রেক্সট্রোজ স্যালাইন দিতে হবে। এন্টিবায়োটিক যেমন পেনিসিনিল, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ৭ থেকে ১০ দিনের ডোজ দেয়া যেতে পারে। চিকিৎসা ২/৩ দিন পরে নরম খাবার দেয়া শুরু করতে হবে।

৩। ইসোফেজিয়াল অবস্ট্রাকসন বা চোক ঃ কেন বৃহ বা শক্ত জিনিস যদি খাদ্য নালীতে আটকে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে তাহলে তাকে ইসোফেজিয়াল অবস্ট্রাকশন বা চোক বলে। এই অবস্থায় প্রাণি কিছু খেতে চায়না বা খেলে তা ভিতরে যেতে পারেনা। এক্ষেত্রে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করে।
আম ,কাঠাল, তাল, আলু হত্যাদি পুরোটা গিলে ফেললে এই সমস্যা হয়। তাছাড়া গমের ভুষী, কলাইয়ের ভুষি গিয়েও হতে পারে। কিছু কিছু রোগের কারণে খাদ্যনালীকে চেপে দিলেও এই সমস্যা হয়, যেমন যক্ষা ও নিউপ্লাস্টিক লসিকা গ্রন্থি, ইসোফেজিয়াল প্যারালাইসিস ও ডাইভারটিকুলাম, জন্মগত ত্রুটি (ঈড়হমবহরঃধষ ফবভবপঃ) ইত্যাদি।

লক্ষন; এক্ষেত্রে প্রাণি হঠাৎ একদিন খাবার বন্ধ করে দেয়, বিমর্ষ ও অবশাদ গ্রস্থ হয়ে পড়ে। জোর করে খেলেও খাদ্য বেরিয়ে আসে এবং প্রচুর লালা ক্ষরণ ও কাশি হয়। টেকুর বেরোতে না পারলে ব্লোট সৃষ্টি হয়। ডিহাইড্রেশোন বা এস্পিরেশন নিউমোনিয়ার কারণে মারাও যেতে পারে।
সমাধানঃ তৎক্ষণাৎ অভিক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ মত চিকিৎসা নিতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসায় কাজ না হলে রুমেনাটমি করতে হবে।
৩। বদহজম(ওহফরমবংঃরড়হ ) : আমাদের যেমন বহজম হলে ডাইরিয়া হয় তেমন প্রাণিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। কিছু কিছু খাবার হজম হয়না, সেগুলোর উপস্থিতি অথবা রুমেনে যদি মাইক্রোফ্লোরার অভাব হয় তাতেও বদহজম হতে পারে। পেটটা ভারী হয়ে গিয়ে অবষাদ গ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন আর খেতে চায়না।
সমাধানঃ সুনিন্দষ্ট কারণ না জানা থাকলে টাটার ইমেটিক ১০-১২ গ্রাম/গরু পানিতে পাতলা করে খাওয়াতে হবে। স্টামিক মিক্সচার খাওয়াতে হবে।
রুমেন ফ্লুইড যদি এসিটিক হয় তাহলে- ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড/ ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড৪০০গ্রাম /গরুকে খাওয়াতে হবে।
যদি এলক্যালাইন বা ক্ষারীয় হয় তাহলে- আসেটিক আয়সিড(ভিনেগার)১-৫ লিটার/ প্রাণি খাওয়াতে হবে।
৪।আকিউট কার্বোহাইড্রট ইনগর্জমেন্ট (অপঁঃব পধৎনড়যুফৎধঃব বহমড়ৎমবসবহঃ)ঃ বেশী পরিমাণে কার্বোহাইট্রেট গ্রহণ করে তখন তা অতিমাত্রায় ল্যাকটিক এসিডে পরিনত হয় যা শরীরে বিষক্রিয়া, ডিহাইড্রেশন, অবসাদ, রুমিনাল নিশ্চলতা, দুর্বলতা, অর্ধশয়ন অবস্থা() মৃত্য এরোগের ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট।
গ্রামের পরিবেশে দেখা যায় রাতের বেলা গরু বা ছাগলে প্রচুর পরিমাণে মাঠে পাকা শস্য পেট ভর্তি করে খেয়ে আসে। বেশি পরিমানে ধান গম বা অনান্য দানাদার খাদ্য খেয়ে ফেলে। যা পেয়ের আয়তন বেড়ে যায় এবং স্ফিত হয়ে যায়। ফলে সে কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকে নিজের পেট নিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।

সমাধানঃ এই সমস্যা খুবই দ্রুত সমাধান করতে হয়, না হলে প্রাণি মৃত্য মুখে পতিত হতে পারে। চিকিৎসার জন্য পার্গেটিভ(০ ওষুধ খাইলে অবরোধ মুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে গরুর ক্ষেত্রে .২৪-.৪৮ কেজি ম্যাগনেশিয়াম অথবা ০.৫-১ লিটার তিসির তেল খাওয়াতে যায়। রক্তে এসিডের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে সেডিয়াম বাইকার্বনেট ৫% সলুশন@ ০৫ / সঊয়/ কম নঃি রা; ১ম ঘধঐঈঙ৩ রিষষ ংঁঢ়ঢ়ষু ১২ সঊয় নরপধৎনড়হধঃব রড়হং) শিরায় ইনজেকশন দিতে হবে। হাইপোক্যালসেমিয়া সংশোধনের জন্য ক্যালসিয়াম বরোগ্লুকোনেট ২০০-৩০০ মিলিলিটার শিরায় / ত্বকের নিচে ইনজেকশন দিতে হবে।

৫। রুমিল্যান টিম্প্যানি(জঁসরহধষ ঃুসঢ়ধহর)ঃ যখন পেটের ভিতরে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে যায় তখন তাকে রুমিনাল ব্লট বা টিম্পানি বলে। লেগুম ঘাস, সরস ঘাস, ফুল ফোটার পুর্বের ঘাস বেশি পরিমাণে খেলে রুমেনের অণুজীবী দ্রুত হজম করে হলে বেশি পরিমাণে মুক্ত গ্যাস সৃষ্টির হতে পারেনা। ফলে পেট ফেঁপে যায় এবং প্রাণীর জীবনসংকট হতে পারে। এই সময় প্রাণীর খাওয়া একবারে বন্ধ থাকে।

সমাধানঃ বেশী পরিমাণ গ্যাস তৈরি হলে বাম রুমেনের প্যারা লাম্বার ফোসায় ট্রেকার এন্ড ক্যেনেলা দিয়ে ফ্যুটা করে গ্যাস বের করে দিতে হবে। বিভিন্ন এন্টিফোমিং এজেন্ট পাওয়া যায় যেগুলো যথা সময়ে উপযুক্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে।

৬। ক্ষুরারোগ বা এফ এমডি(ঋড়ড়ঃ ধহফ গড়ঁঃয ফরংবধংব): ভাইরাস জনিত ক্ষুরা রোগ যা এপথাস ভাইরাস দ্বারা হয়। এই রোগে মুখের ভিতরে ঘা হয় যার ফলে প্রাণি শক্ত জিনিস বা খড় খেতে পারেনা। আস্তে আস্তে এর ওজন কমে যায়। লালা ঝরতে থাকে। মুখের ভিতরে ক্ষতগুলো স্পষ্ট দেখা যায়।
কারনতত্তঃ
এটা ভাইরাস দ্বারা গঠিত রোগ । এ্যাপথা (অঢ়ঃযধব)নামক আর এন এ (জঘঅ) ভাইরাস এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এটি পিকরনাভিরিডি(চরপড়ৎহধারৎরফধব) গোত্রের একটি উল্লেখ্যযোগ্য ভাইরাস । এই ভাইরাসের অনেক গুলো সেরোটাইপ আছে । প্রায় ৭ টি সেরোটাইপ অ, ঙ, ঈ ,অংরধ ১, অংরধ ২, ঝঅঞ ১, ঝঅঞ ২, ।এর মধ্যে অ, ঙ, ঈ টাইপ প্রকট আকারে রোগ সৃষ্টি করে এবং ঝঅঞ১, ঝঅঞ ২ তুলনামুলক অনেক কম ক্ষতিকর । আর এক স্ট্রেন রোগ সৃষ্টি হয়ে অন্য স্ট্রেন এ পরিবর্তিন হয়ে যেতে পারে । তাই শুধু ভ্যাকসিন (টিকা ) প্রয়োগ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রন করা খুব কঠিন । এই ভাইরাস অধিক তাপমাত্রায় (৫০ সেলসিয়াস) ধ্বংস হয় । আর শীতল অবস্থায় ও ঠান্ডায় জমাট বেধে অনেক দিন থাকতে পারে ।
এই ভাইরাস কে কিছু রাসায়নিক পদার্থ দারা নিষ্ক্রিয় করা হয় , যেমন সেডিয়াম হাইড্রোক্সাইড(২), সোডীয়াম কার্বোনেট(৪), এবং সাইট্রিক এসিড (,২)। এছাড়া এই রোগের ভাইরাসকে ১ থেকে ২ ফরমালিনে রাখলে সহজেই ১-২ মিনিটেই মারা যায় ।
রোগ ছড়ায় যেভাবেঃ
ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত পশুর শরীরে ফোস্কার অভ্যান্তরে তরলের মধ্যে ভাইরাস বিকাশ লাভ করে । আর পশুর লালা , প¯্রাব , গোবর , চামড়া ,দুধ , ফোস্কা মধ্যস্ত তরল , শ্বাস ত্যাগ ইত্যাদির মাধ্যমে নির্গত হয় । খাবারের মাধ্যমে ও সংর্স্পশের মাধ্যমে অসুস্থ্য পশু থেকে সুস্থ্য পশুতে ছড়ায় ।
পাখি এই ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভুমিকা পালন করে , সংক্রমিত গরুর দ্বারা সংবেদনশীল গরুর প্রজনন বা নিষিক্তকরনের সময় । এই ভাইরাস আক্রান্ত পশু হতে বাতাসের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে শরিরে প্রবেশ করে । প্রায়ই রোগের লক্ষন প্রকাশ পুর্বেই যেকোন নিঃসরণে এবং শ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে বিপুল পরমান ভাইরাস বের হয়।
ক্ষুরারোগের লক্ষনঃ
গরু , মহিষের ক্ষেত্রে
১। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জ্বর(১০৪-১০৬ ফারেনহাইট)
২। কাপুনি
৩। খুড়িয়ে চলা
৪। ফেনাযুক্ত আঠালো লালা ঝরা
৫। পায়ে , মুখে বা জিহ্বায় এবং ওলানের বাটে ফোস্কা ও ক্ষত
৬। বাছুরের ক্ষেত্রে লক্ষন দেখা দেয়ার আগেই বাছুর মারা যায় ।
৭। গর্ভবতী পশুর গর্ভপাত হয়ে যায়
৮। খাবারে অনিহা
চিকিৎসাঃ
ভাইরাস জনিত রোগ তাই এর বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই । তবে ভালো ভাবে পরিচর্যা সহ কিছু ব্যবস্থা নিতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ।
প্রথমে আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে পরিস্কার ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে ।
মুখে ঘা হলে ২ এলাম বা ১ পটাসিয়াম পার মাঙ্গানেট দিয়ে মুখ ধুয়ে দিতে হবে দিনে ২-৩ বার ।
মশা মাছির উপদ্রোব কমানোর জন্য ,এবং পায়ের ক্ষুরে ক্ষত হলে ০০১ পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট দ্বারা পরিস্কার রাখতে হবে দিনে ২-৩ বার । এক্ষত্রে এফ ওম ডি কিউর (ঋগউ ঈটজঊ )সহ অনান্য নামে তরল পদার্থ বেশ উপকারি ব্যবহারে । এতে ভাইরাস নিষ্ক্রিয়ও হয়ে থাকে ।
প্রচুর লালা ঝরলে পশু দুর্বল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ৫ ডেক্সটোজ স্যালাইন(০৯ )শিরায় পুশ করতে হবে । ১০০০ সিসি/৫০-১০০ কেজি ওজনের পশুকে ২-৩ দিন

টিকা প্রয়োগ টেবিলঃ- চামড়ার নিচে

ক্রমিক নং ভেকসিনের নাম গরু ছাগল/ভেড়া সময় কাল
01 Bivalent Vaccine 6ml 2 ml 4-6 মাস
02 Trivalent Vaccine 6 ml 2 ml 4-6 মাস
03 Aftovax Vaccine 2 ml 1 ml 6 মাস
04 Tetravalent 2 ml 1 ml 4-6 মাস
৭। এক্টিনোব্যাসিলোসিস(অপঃরহড়নধপরষষড়ংরং)ঃ ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ যা জিহ্বাকে শক্ত করে দেয় এবং ঘা হয়ে যায় ফলে প্রাণি খেতে পারেনা। জিহ্বাতে ভাইব্রোসিস হয়ে গিয়ে প্রচন্ট লালা ঝরে কোন কিছু খেতে পারেনা। আক্টিনোবাসিলোসিস লিগ্নিয়ারেসি নামক গ্রাম পজিটিভ কক্কোব্যাসিলাই জীবানূ এই রোগের কারণ। পুজ হয়, জিহ্বা নড়াচড়া করতে পারেনা।
সমাধাণঃ সোড়িয়াম আয়োডাইট ১০ সলুওশন প্রতি ১২ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ মাত্রা হিসেবে আক্রান্ত প্রাণীর শিরায় ইনজেকশন দিতে হবে।
পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। তাতে কাজ না হলে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান দ্বারা জিহ্বা দেখে চিকিৎসা করানো উত্তম।
৭। পিপি আরঃ পিপি আর এর পুরো নাম হল(চবংঃরং ঢ়বঃরঃবং জঁসরহরঃরং)। প্যারামিক্সোভিরিডি গোত্রের মরবিলি গনের একটি অন্যতম ভাইরাস এই রোগ সৃস্টির জন্যে দায়ী ।ছাগলের খুব পরিচিত এই রোগটি । প্রায় সব বয়সের ছাগলের জন্যি এটি ক্ষতিকর
লক্ষনঃ যে লক্ষন সমষ্টি দেখে সহজে চনা যায় তার মধ্যে
 ছাগলের দেহের তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় প্রায় ১০৪-১০৪ফা (৪০-৪০স)
 আক্রান্ত পশু তার শরীর লিয়ে এয়, দেখেই মনে হয় অসুস্থ্য, দেহের চামড়া শুকিয়ে যায় , মাজল শুকিয়ে যায়
 পশুর খাবার চাহিদা কমে যায়
স জ্বর বাড়ার সাথে সাথে নাক দিয়ে পুজ মত পানি নিঃসৃত হয় , আস্তে আস্তে সেই পানির ঘনত্ত বাড়তে থাকে ।
 নাকের ভিতর শক্ত আবরন দেখা যায় ।যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করে ।
 চোখের কনজাংটিভা লাল হয়ে যায় ।
 দাতের মাড়িতে ঘা সৃস্টি হয় , যা পরবর্তিতে শক্ত আকার ধারন করে । ফলে ছাগল তেমন খেতে পারে না ।
 পরবর্তি বংকনিয়মনিয়া সৃষ্ট হয় । যার ফলে ছাগল হাপাতে থাকে ।
 গর্ভবতী ছগলের গর্ভপাত হয়ে যায় ।
 মুখে ঘা সৃষ্টি হয় ।
 ডায়রিয়া ও পালতা পায়খানা দেখা যায় ।
চিকিৎসাঃ যদিও তেমন সন্তোষজনক চিকিৎসা নেই এই রোগের । তার পরেও লক্ষন দেখে চিকিৎসা দিয়ে এর মৃত্যহার অনেকটা কমিয়ে আনা যায় ।
 কিছু এন্টিবায়োটিক দেয়া হয় যেমন , টেট্রাসাইক্লিন , অ্যামক্সোসিলিন(অসড়ীড়পরষরহ, ) ইত্যাদি চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ।
 ছাগলের অস্থিরতা কমানোর জন্যে এস্ট্রিনজেন্ট গ্রুপের ওষুধ
 হিস্টামিনের নিঃসরণ কমানোর জন্যে এ্যন্টিহিস্টামিন ।
 পানির ঘাটতি পুরনের জন্যে ইলেকট্রলাইট দেয়া যেতে পারে ।

প্রাণীর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখলেই আমরা বুঝতে পারবো তার খাবার চাহিদা কেমন। উপরুক্ত আলোচনা হতে যদি স্বাভাবিক কারণে মনে হয় তাহলে সময় কিছু ব্যবস্থা নিলে এবং যদি রোগের কারণে হয় তাহলে তার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দ্রুত সুস্থ্ হয়ে প্রাণি পুরণায় আগের মত ভাল খেয়ে তার বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। তাহলে প্রতিটি পদক্ষেপই হবে নিজের উন্নতির পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নের অংশ। আমাদের আমিষের চাহিদা পুরণ হবে।

সূত্র:কৃষি সংবাদ

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৩জুন২০