ধানের বাদামী গাছ ফড়িং

899

বাদামী গাছ ফড়িং ধানের একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। অধিকাংশ কৃষকের কাছে বাদামী গাছ ফড়িং ‘‘কারেন্ট পোকা’’ বা ‘‘গুণগুণী’’ পোকা নামে পরিচিত।

বাদামী গাছ ফড়িং খুবই ছোট আকারের পোকা,প্রায় ৪ মিঃ মিঃ লম্বা ও বাদামী রংয়ের হয়। এই পোকা পুর্ণ বয়স্ক অবস্থায় লম্বা পাখা ও ছোট পাখা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী ফড়িং পাতার খোল,পাতা ও পাতার মধ্য শিরার ভিতরে ডিম পাড়ে। ৭-৯ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা (নিফ) বের হয়। বাচ্চা গুলো প্রথম পর্যায়ে সাদা রংয়ের হয় ও পরে বাদামী রং ধারণ করে। বাচ্চা থেকে পূর্ণ বয়স্ক ফড়িং এ পরিণত হতে আবহাওয়া ভেদে ১৪-১৬ দিন সময় লাগে। এক জোড়া গাছ ফড়িং ৩-৪ প্রজন্মে ৩৫ লক্ষ পোকার জন্ম দিতে পারে। বীজ তলা থেকে শুরু করে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত যে কোন সময় এ পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে কাইচথোর শুরু থেকে আক্রমণ বেড়ে যায়। বোরো ধান ক্ষেতে এপ্রিল-মে এবং আমন ক্ষেতে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসের বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণ বেশি হয়।

বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণের লক্ষণঃ
১.এদের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক উভয়ই ধান গাছের গোড়ার দিকে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে ও সেখান থেকে অনবরত গাছের রস চুষে খেতে থাকে।
২.এ ফলে গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে যায়, ফলে দুর থেকে পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়। এ ধরণের ক্ষতিকে ‘‘হপার বার্ণ বা বাজপড়া’’ বলা হয়।
৩.এ পোকা দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়ার কারণে মাঠের পর মাঠ ফসলের ২০-১০০% পর্যন্ত ক্ষতি সাধন হয়।
বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণের অনুকুল পরিবেশঃ
১.গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া (গুমট অবস্থা) এবং ছায়াযুক্ত স্থানে বাদামী গাছ ফড়িং দ্রুত বংশবৃদ্ধি পায়।
২.চারা ঘন করে রোপণ করলে,জমি স্যাঁত স্যাঁতে হলে ও জমিতে দাড়ানো পানি থাকলে।
৩.অধিক হারে ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে।

সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ
১.বালাই সহনশীল জাতের (ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-৩১,ব্রিধান-৩৩, ব্রিধান-৩৫,বিনা ধান-৭) চাষ করুন।
২.এলাকার সকল চাষীকে দলবদ্ধভাবে পোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করুন।
৩.আলোক ফাঁদ পেতে পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করা ও বংশ বৃদ্ধি কমানোর ব্যবস্থা নিন।
৪.সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করুন এবং ইউরিয়া সার ২-৩ বারে উপরি প্রয়োগ করুন।
৫.চারা ঘন করে না লাগিয়ে সারি থেকে সারি ২০-২৫ সেঃ মিঃ ও গুছি থেকে গুছি ১৫-২০ সেঃ মিঃ দূরত্বে রোপন করুন।
৬.আক্রান্ত জমির পানি সরিয়ে ৭-৮ দিন জমি শুকনা রাখুন।
৭.জমিতে হাঁস ও হাঁসের বাচ্চা ছেড়ে পোকা খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
৮.আক্রান্ত জমিতে দুই হাত দুরে দুরে ‘‘বিলি কেটে’’ আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করুন।
৯.প্রতি গোছায় ২-৪টি গর্ভবর্তী পোকা বা ৮-১০টি বাচ্চা পোকা (নিফ)/পূর্ণ বয়স্ক দেখা গেলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- টেকোম্যা ৪০

এসসি, সানক্লোপিড ২০ এসএল, মিপসিন ৭৫ ডব্লিউজি, সপসিন ৭৫ ডব্লিউপি,প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি,সাটডাউন ২৫এসসি,।লাহিব-৩৮ ডব্লিউডিজি গ্ল্যামোর-৮০ ডব্লিউজি,ইমিটাফ ২০ এসএল,এডমায়ার ২০০ এসএল,ফিক্স-২ ৪০ ডব্লিউজি,অপ্রোকার্ব ৭৫ ডব্লিউজি,কনফিডর ৭০ ডব্লিউজি,ইত্যাদির যে কোন একটি অনুমোদিত মাত্রায় ধান গাছের গোড়ার দিকে ভালভাবে স্প্রে করুন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১১নভেম্বর২০২০