পারিবারিক খামারে দেশী জাতের মুরগী পালনের লাভজনক উপায়ঃ—
আমাদের গ্রামীণ জনপদে আগে বেশীরভাগ ঘরে দেশী মুরগী পালন করা হতো। রাত-বিরাতে বাড়ীতে অতিথি এলে এই মুরগী জবাই করে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করা হতো। এমনকি মাঝে মাঝে গভীর রাতেও মুরগীর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে জানতে পারতাম, মেহমান এসেছে তাই রাতেই মুরগী জবেহ করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাতে তো দুরের কথা, দিনের বেলাতে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ালেও দেশী মুরগী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। কারন আজ আর গ্রামীণ জনপদের মানুষ দেশী মুরগী আগের মত পালন করে না। কিন্তু এর কারন কি ? কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী
সকলের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত কামনা করছি। এবং আপনাদের আলোচনা ও মতামতের আলোকে পরবর্তীতে দেশী জাতের মুরগী নিয়ে কিছু লেখার আশা করছি——-
উপরোল্লিখিত আহ্বানটি জানাই,আলোচনা/ মতামত গ্রহনের জন্য গত ২৫/০৭/২০১৬ ইং তারিখে। যাতে করে প্রকৃত কারন গুলো খুঁজে বের করে একটি ফলপ্রসূ সমাধান দেয়া যায় এবং দেশী মুরগী সফল ভাবে পালনে আবার সকলকে আগ্রহী করে তোলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ্, অভুতপূর্ব সারা পেয়েছি। অসংখ্য মুল্যবান মতামত পেয়েছি। যারা মতামত দিয়েছেন, সকলকে আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাদের এই মুল্যবান মতামতের জন্য আমি সহ পুরো দেশবাসী উপকৃত হবেন, সেজন্য আমি মতামত প্রদানকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
কেন মানুষ দেশী জাতের মুরগী পালন করছে না ? কি এর প্রতিবন্ধকতা ? কেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশী জাতের মুরগী ? এই তিনটি প্রশ্নকে সামনে রেখে আমাদের আলোচনা চলে। সেই আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে যে সমস্যা গুলো গুরুত্ব পেয়েছে, সেগুলো গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা যাক—–
১) রোগ-ব্যাধির আক্রমণ এবং রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে অজ্ঞতা ২) হিংস্র প্রাণীর উপদ্রব ৩) কম উৎপাদন ক্ষমতা ৪) আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও ৫) কৃষি জমি বা উন্মুক্ত জমি হ্রাস ও কৃষি বিমুখতা । এখন এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের পথ খোঁজা যাক।
১) রোগ-ব্যাধির আক্রমণ এবং রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে অজ্ঞতাঃ—
প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে, এটা মহান আল্লাহ্র একটি অবধারিত বিধান। তাই এই বিধান আমাদের সবার মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমরা রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিরোধক অথবা যখন অসুস্থ্য হই তখন প্রতিষেধক গ্রহন করে থাকি সুস্থ্য জীবন যাপনের আশায়। ঠিক একই ব্যাবস্থা সকল প্রাণীর জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যে সকল প্রাণী জঙ্গলে বাস করে, তারা প্রাকৃতিক নিয়মে বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহন করে থাকে, বিভিন্ন উৎস থেকে এই চিকিৎসা গ্রহনের পদ্ধতি সৃষ্টিকর্তা তাদের দান করেছেন। যেমন অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন যে, বিরাল বা কুকুর মাঝে মাঝে ঘাস খায়। বিভিন্ন পাখি মাঝে মাঝে মাটি,বালু বা ইট-পাথরের গুড়া খায়। চরুই পাখি ও সাপ একটি গাছের কচি ডগা খায়। কিন্তু কেন ? এটা ওদের চিকিৎসা পদ্ধতি। আল্লাহ্ আমাদের যেমন চিকিৎসা জ্ঞান দান করেছেন, তেমনি সকল প্রানিকে ও দান করেছেন। তাই সুস্থ্য থাকতে গেলে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরন সকলের ক্ষেত্রেই জরুরী। যখনই এর ব্যাতিক্রম ঘটবে, তখনই সমস্যা সৃষ্টি হবে।
আমাদের পারিবারিক খামার ছোট হোক বা বড় হোক, খামারের প্রানিদের সুস্থ্য রাখতে চাইলে, সঠিক নিয়ম ও চিকিৎসা পদ্ধতি মেনেই পালন করতে হবে। কিন্তু আমাদের জানার অভাব বা সদিচ্ছার অভাবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হয়ে ওঠে না। আর যে কারনে পারিবারিক খামারে নেমে আসে বিপর্যয়। যেটা বানিজ্যিক খামারে কম পরিলক্ষিত হয়। এর কারন পারিবারিক খামারে সঠিক নিয়ম না মানা। তাই পারিবারিক খামার থেকে সুফলতো আসেই না, বরং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। প্রায়শ শোনা যায়, হঠাৎ একটি রোগে সকল হাঁস-মুরগী মরে গিয়ে এখন খামার শূন্য। আর এই ক্ষতির কারনে গৃহকর্তা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। নতুন করে আবার অর্থ-সময়-শ্রম দিতে রাজি না হওয়ার কারনে, এই ক্ষতিগ্রস্থ খামার খালি পরে থাকে। আর এভাবেই কমে যাচ্ছে পারিবারিক খামার। কিন্তু কে এজন্য দায়ী ? নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট খামারি। রোগ-বালাই হতেই পারে। কিন্তু নিয়ম মেনে খামার পরিচালনা করলে, রোগের প্রতিরোধক-প্রতিষেধক সঠিক ভাবে প্রয়োগ করলে, অনেকাংশে খামারকে নিরাপদে রাখা সম্ভব এবং এটাই লাভজনক খামারের মূল মন্ত্র।
সম্ভাব্য সমাধানঃ—
খামারকে রোগমুক্ত রাখতে চাইলে নিয়মিত প্রতিরোধক প্রয়োগ করতে হবে। কারন রোগ হওয়ার পরে চিকিৎসা করার চেয়ে রোগকে প্রতিরোধের চেষ্টা করা শ্রেয়। তারপরেও রোগ হয়ে গেলে সঠিক নিয়মে ,সঠিক ঔষধ, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। নিজের জানা না থাকলে নিকটবর্তী অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসক বা উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।
টিকা প্রদান ও তার গুরুত্বঃ নির্দিষ্ট কর্মসূচি অনুসারে বিভিন্ন রোগের টিকা প্রদান করলে প্রাণীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি সৃষ্টি হয় এবং সংক্রামক রোগ হতে প্রানিকে রক্ষা করা যায়। টিকাদান ফলপ্রসূ হলে রোগের প্রাদুর্ভাব খুব কম হবে এবং মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায় রাখা যাবে। টীকা খুবই অল্প মুল্যে প্রতি উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসে পাওয়া যায়। এবং টীকা প্রদানের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন।
লেয়ার বা ডিম দেয়া মুরগির টিকাঃ—- মারেক্স, রাণীক্ষেত, গামবোরো, ব্রংকাইটিস, বসন্ত, সালমোনেলা, করাইজা ।
টিকা প্রদানের পূর্বে সতর্কতাঃ— মুরগি ধরার সময় যত্ন সহকারে ধরতে হবে,
মুরগিকে যে কোন ধরনের ধকল মুক্ত অবস্থায় টিকা প্রয়োগ করতে হবে,
অসুস্থ্য মুরগিকে কোন অবস্থাতেই টিকা দেয়া যাবে না, টিকা প্রদান উপকরণ ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে, আবহাওয়া যখন ঠান্ডা সেসময়ে টিকা প্রদান করতে হবে।
#টিকা প্রদান কর্মসূচী (লেয়ার বা ডিম দেয়া মুরগির জন্য)—-
বয়স—–রোগের নাম—–ভ্যাকসিনের নাম—টিকা প্রদানের পদ্ধতি
১ দিন—মারেক্স রোগ—–মারেক্স ভ্যাকসিন–চামড়ার নীচে ইজেকশন।
২ দিন-গামবোরো রোগ-গামবোরো ভ্যাকসিন (লাইভ)-চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করা না থাকলে)।
৩-৫ দিন-রানীক্ষেত রোগ–বি, সি, আর, ডি, ভি–দুই চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করা থাকলে ৭ থেকে ১০ দিন বয়সে)।
৭ দিন-ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস–আই, বি,—–চোখে ফোঁটা
১০-১৪ দিন–গামবোরো রোগ-গামবোরো ভ্যাকসিন–এক চোখে ফোঁটা
২১-২৪ দিন–রানীক্ষেত রোগ–বি, সি, আর, ডি, ভি–দুই চোখে ফোঁটা
২৪-২৮ দিন–গামবোরো রোগ–গামবোরো ভ্যাকসিন-এক চোখে ফোঁটা
৩০ দিন-ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস–আই, বি,—–চোখে ফোঁটা
৩৫ দিন—মুরগি বসন্ত–ফাউল পক্স ভ্যাকসিন–চামড়ার নীচে ইনজেকশন
৫০ দিন——কৃমি——কৃমির ঔষধ———খাদ্য অথবা পানির সাথে
৬০ দিন–রানীক্ষেত–আর, ডি, ভি—চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন
৭০ দিন-ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস–আই, বি–চোখে ফোঁটা বা পানির সাথে
৮০-৮৫ দিন-কলেরা–ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন—চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন।
৯০-৯৫ দিন–ইনফেকসাস করাইজা–আই, করাইজা ভ্যাকসিন–চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন।
১১০-১১৫ দিন–কলেরা–ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন—চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন।
১৩০-১৩৫ দিন–ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস, রানীক্ষেত, এগড্রপসিনড্রম—সমন্বিত টিকা—চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন।
১৩০-১৩৫ দিন—কৃমি—কৃমির ঔষধ—-খাদ্য অথবা পানির সাথে।
#বিশেষ সতর্কতা– প্রয়োজনবোধে খাদ্যের সাথে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ককসিডিওসিস রোগ প্রতিরোধের জন্য ককসিডিওস্ট্যাট ব্যবহার করতে হবে। উপরোক্ত টীকার তালিকা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রোগের প্রার্দুভাবের ইতিহাস, টিকার প্রাপ্যতা ও স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নিজ নিজ খামারের জন্য নিজস্ব তালিকা প্রস্তত করতে হবে। টিকা সবসময় প্রস্ততকারীর নির্দেশমত ব্যবহার করতে হবে। সকল প্রকার টিকা ও ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
২) হিংস্র প্রাণীর উপদ্রবঃ— দ্বিতীয় সমস্যা হিসেবে হিংস্র প্রাণীর উপদ্রব স্থান পেয়েছে। আসলেই গ্রামীণ জনপদে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। শেয়াল, বনবিড়াল,গুইসাপ, ভেজি,চিল, কাক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কুকুরের আক্রমনে প্রচুর পরিমান হাঁস-মুরগী বিনষ্ট হয়ে থাকে।যেটা পারিবারিক খামারের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। এর কারন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা উন্মুক্ত অবস্থায় দেশী হাঁস-মুরগী পালন করে থাকি।
সম্ভাব্য সমাধানঃ—-খামারের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা বাড়াতে হবে। প্রতিকুল আবহাওয়া, বন্যপ্রাণী ও দুস্কৃতিকারী হতে রক্ষা করতে হবে। বাড়ির আসেপাশে অপ্রয়োজনীয় ঝোপ-ঝার যথাসম্ভব ধ্বংস করতে হবে। হিংস্র প্রাণীদের আবাসস্থল সাধ্যানুযায়ী ধ্বংস করতে হবে। প্রহরী হিসেবে কুকুর পোষা যেতে পারে। আবার দেশী মুরগীকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায়ও পালন করা যেতে পারে।
৩) কম উৎপাদন ক্ষমতাঃ—–
তৃতীয় সমস্যা হিসেবে দেশী মুরগীর কম উৎপাদন ক্ষমতা প্রধান্য পেয়েছে। কিন্তু আমি এই বিষয়টির সঙ্গে সঙ্গত কারনে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। কারন, আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি আমার খামারে দেখেছি, স্বাভাবিক খাবার ( শুধু ধান ও পোকা-মাকড় ) খেয়েও দেশী মুরগী বছরে কমপক্ষে ৭ বার ১৮-২০ টি করে ডিম দেয়। আমি গড়ে ১৮ টি করে হিসেব করলেও ১৮x৭= ১২৬ টি। আমি হলফ করে বলতে পারি একটু উন্নত খাবার পরিবেশন করা হলে এরা অনায়াসে বছরে কমপক্ষে ২০০ ডিম দিবে। তাহলে এদের উৎপাদন ক্ষমতা কিভাবে কম বলে আমি স্বীকার করি ? এছাড়া বাজার চাহিদার শীর্ষে থাকে দেশী মুরগীর ডিম ও মাংস এবং দামেও চড়া । তাহলে আমি ডিম বা মাংস যে হিসাবেই বিক্রি করিনা কেন, খরচের তুলনায় লাভ ভালো থাকে।
সম্ভাব্য সমাধানঃ—-অধিক উৎপাদন পেতে হলে মুরগিকে দৈনিক সুষম খাবার খেতে দেবেন। প্রত্যহ প্রতিটি মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও ২৫ গ্রাম সবুজ শাক-সবজি বা কচি ঘাস কুচি কুচি করে কেটে খেতে দিন। আপনি নিজেই সুষম খাদ্য তৈরি করতে পারেন।
সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো নিম্নরূপ :
খাদ্য উপাদান-গম/ভুট্টা ভাঙা বা চালের খুদ ৪০০ গ্রাম। গমের ভুসি ৫০ গ্রাম। চালের কুঁড়া (তুষ ছাড়া) ২৫০ গ্রাম। তিলের খৈল ১২০ গ্রাম। শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০০ গ্রাম। ঝিনুকের গুঁড়া ৭৫ গ্রাম। সুষম খাদ্য মোট ১,০০০ গ্রাম বা ১ কেজি। অথবা ২য় পদ্ধতি হিসেবে –দুই বেলা সকাল ও সন্ধ্যায় শুধু ধান ভাঙ্গা এবং দুপুরে লেয়ার খাবার। দ্বিতীয়টি সবচেয়ে সাশ্রয়ী পদ্ধতি ও ফলদায়ক। এছাড়া অধিক ডিম পেতে এবং বাচ্চা উৎপাদন করতে চাইলে, সকল মুরগীকে কুঁজো বা উমে বসানো যাবে না। কারন এতে মুরগীর স্বাস্থ্যহানী হয় এবং ডিম উৎপাদন কমে যায়। তাই বড় সাইজের এবং ডিমে তা দিতে অভিজ্ঞ ৪/৫ টি মুরগীকে এ কাজে সময় সুবিধা অনুযায়ী ব্যাবহার করা শ্রেয়। এবং খামারের অন্য মুরগীগুলোর ডিম দেয়া শেষ হলে খাবারের সঙ্গে কিছু মাল্টি ভিটামিন ও মিনের্যালস দিতে হবে। এতে সে আবার ডিম দেয়ার জন্য দ্রুত প্রস্তুত হবে।
৪) আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনঃ—-
চার নম্বর সমস্যা হিসেবে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন মতামত প্রতিয়মান হয়েছে। আমারও মনে হয় এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। একটা সময় ছিল, যখন আমাদের ক্রয় ক্ষমতা ছিল খুবই কম। যে কারনে চাহিদা পুরনের জন্য নিজেরাই যথাসম্ভব উৎপাদন করতো বেশীরভাগ মানুষ।আবার গ্রামীণ জনপদের বেশীর ভাগ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারনে, পারিবারিক খামারের খাবার নিয়ে সমস্যা পোহাতে হতো না। কিন্তু এখন সময়ের সঙ্গে মানুষের স্বভাব পরিবর্তিত হয়েছে, মানুষের অভাব ঘুচে গিয়ে সচ্ছলতা এসেছে,ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এছাড়া অন্য কিছু বিষয়ও সংযুক্ত হয়েছে। যেমন– বয়লার মুরগীর সহজলভ্যতা, পরনির্ভরশীলতা, তথাকথিত সামাজিক মর্যাদাবোধ, কর্মবিমুখতা, মুরগীর খাবার ও ঔষধের উচ্চ মুল্য, সার্বিক কৃষি বিমুখতা ইত্যাদি।
সম্ভাব্য সমাধানঃ—-বর্তমান সময়ে খাদ্যে ভেজাল ও বিষ একটি বড় সমস্যা। বয়লার মুরগী নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। আমি সেদিকে যেতে চাই না। কিন্তু নিজের হাতে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রী সর্বাধিক নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত, রুচিশীল, সুস্বাদু। আমি যখন আধুনিক হয়েছি, সঙ্গে আমার রুচিটাও আধুনিক হওয়ার কথা। আর রুচি আধুনিক হলে আমি কি পরনির্ভরশীল হয়ে অসাস্থ্যকর খাবার খাবো, নাকি যথাসম্ভব নিজে উৎপাদন করে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য খাবো, সেটা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। কৃষি বিমুখ হয়ে আমরা ক্রমশ পরনির্ভরশীল হয়ে পরেছি। টাটকা নিরাপদ খাদ্যের পরিবর্তে ভেজাল ও বিষযুক্ত খাদ্য গ্রহন করে নিজে ও সন্তানদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি। আধুনিকতার নামে আমরা নিজেকেই হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়ত। এই তথাকথিত আধুনিকতা এখন পর্যন্ত আমাদের জন্য কোন সুখবর বয়ে আনেনি, কোনদিন আনবেও না। কারন যে আধুনিকতা নিজের স্বকীয়তাকে বিনষ্ট করে, সেই আধুনিকতা কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনা।
৫) কৃষি জমি বা উন্মুক্ত জমি হ্রাস ও কৃষি বিমুখতাঃ— এটি ৫ম সমস্যা হিসেবে স্থান পেয়েছে। আসলেই এটি একটি প্রধান কারন বলে আমারও মনে হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে মানুষের আবাসন এর চাহিদা বাড়ছে। যে কারনে কমছে কৃষি বা উন্মুক্ত জমি। এছাড়া অপরিকল্পিত ভাবে নগরায়ন, শিল্পায়ন গ্রাস করছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
সম্ভাব্য সমাধানঃ—আবাসনের প্রয়োজন খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কর্ম সংস্থানের জন্য শিল্পায়ন ও জরুরী। কল-কারখানা স্থাপন না হলে দেশ দ্রুত আগায় না। কিন্তু নগরায়ন ,আবাসন বা শিল্পায়ন পরিকল্পিত ভাবে করলে অনাকঙ্খিত ফসলি জমি নষ্টের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। তেমনি প্রাকৃতিক পরিবেশকে দূষণের হাত থেকেও বাঁচানো সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৪ নভেম্বর, ২০২২